• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

জীর্ণ রেলসেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে উত্তর-দক্ষিণের ২০ ট্রেন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৯  

জরাজীর্ণ দু’টি সেতু যেন উত্তরাঞ্চলের রেলপথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই চরম ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে কলকাতাসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী ও মালবাহী ২০টি ট্রেন। যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।তবে চলতি শুষ্ক মৌসুমে সেতু দু’টির সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।  

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের বঙ্কিরাট এলাকার ২৬ নম্বর ও কয়ড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকায় ২৯ নম্বর রেলসেতু দু’টির গাডারে ফাটল এবং লোহার রেলপাতে মরিচা ধরে ক্ষয়ে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ নম্বর সেতুর নিচে লোহার এঙ্গেল ও কাঠের স্লিপার দিয়ে ঠেকনা দিয়ে রাখা হয়েছে। 

এছাড়া ব্রিজ দু’টির দু’পাশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার লেখা সতর্ক সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। দু’জন ওয়েম্যান নিযুক্ত করে লাল বা সবুজ পতাকা উড়িয়ে গতি কমানোর সংকেত দেওয়া হচ্ছে ট্রেনগুলোকে।ফলে এ ব্রিজ দু’টি দিয়ে থেমে থেমে ও ধীরগতিতে চলছে ট্রেন। সেতুর উপর ট্রেন উঠলেই কেঁপে উঠছে। এতে যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করে। প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই যাতায়াত করছে একাধিক ট্রেন। 

বঙ্কিরাটে ২৬ নম্বর সেতুতে দায়িত্বরত ওয়েম্যান রাসেল ও সুলতান বলেন, আমরা চার মাস ধরে এখানে ডিউটি করছি। ট্রেন এলেই লাল পতাকা উড়িয়ে গতি কমানোর সংকেত দেই। আমাদের সংকেত পেয়েই চালক ব্রিজের কাছে এসে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন।

কামারপাড়ায় ২৯ নম্বর সেতুতে দায়িত্বরত ওয়েম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ও রফিকুল নামে অপর একজন পালাক্রমে ডিউটি করছি। ট্রেন সেতুর উপর এলেই ৫-১০ কিলোমিটার গতিতে চলে। এদিকে এখানে এসে ধীরগতিতে ট্রেন চলার কারণে এ রুটে সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। 

কয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা এ সেতু দু’টির অবস্থা এখন একেবারেই জরাজীর্ণ। সম্প্রতি কামারপাড়া ব্রিজের নিচে কাঠ আর লোহার এঙ্গেল দিয়ে একপ্রকার ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। ট্রেন এখানে এসে মাত্র ৫/৭ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করছে। 

উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-৪) রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ১শ’ বছর আগে সিরাজগঞ্জ-ঈশ্বরদী রেলসড়ক ও সেতুগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ রুটে কলকাতা থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ প্রায় ১৪টি আন্তঃনগর ও ৬টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন আপ-ডাউন মিলে প্রায় ৪০টির মতো ট্রেন যাতায়াত করে এ রুট দিয়ে। 

উল্লাপাড়া উপজেলা বৃহত্তর চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে হওয়ায় বঙ্কিরাট ও কামারপাড়া রেলসেতু দু’টিতে প্রতি বছর বন্যার পানির তীব্র স্রোত আঘাত হানে।স্রোতের ধাক্কায় ব্রিজ দু’টির গাডার দুর্বল হয়ে কোথাও কোথাও ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গাডার গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকটাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। 

পাকশী রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় রেলপথ ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের রেল যোগাযোগের একমাত্র রুট এটি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি সেতুর নিচে অস্থায়ীভাবে সিসি ক্লিক (কাঠের স্লিপার ও লেহার এঙ্গেল দিয়ে ঠেকনা) নির্মাণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ দু’টি সংস্কার করা হবে। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে সেতু দু’টি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে দু’টি সেতুরই সংস্কার করা হবে।দু’টি সেতু সংস্কারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি।সেতুর উপর  ট্রেনের গতি কমাতে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চারজন ওয়েম্যান। এছাড়া রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ