• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

জুমার দিনে মৃত্যুবরণের আলাদা কোনো ফজিলত আছে কি?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২১  

হাদিসে জুমার দিনের মর্যাদা বর্ণনায় বিশ্লেষণধর্মী একটি বর্ণনা করেছেন হজরত আবু হুরায়রা (রা.)। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (কোরআনে) আল-ইয়ামুল মাওউদ বা প্রতিশ্রুতি দিবস হলো কিয়ামাতের দিন। কারণ কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা করেছেন। 

মাশহুদ অর্থ হলো যাকে হাজির করা হয়। এ দিবসে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়। আর শাহেদ হলো যে হাজির হয়। অর্থাৎ জুমার দিন প্রতি সাত দিন অন্তর অন্তর একবার মানুষের নিকট উপস্থিত হয়।

হাদিসে এসেছে, এমন কোনো দিনে সূর্য উদয়াস্ত হয় না, যে দিন জুমার দিন হতে উত্তম। এ দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে; যদি কোনো মুমিন বান্দা তা পেয়ে যায় এবং আল্লাহর নিকট কোনো কল্যাণের প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা মঞ্জুর করেন। আর কোনো বান্দা যদি অকল্যাণ থেকে রেহাই চায়, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে রেহাই দান করেন। (মুসনাদে আহমদ)

এতো গেলো দুনিয়ার জিন্দেগিতে জুমার দিনের ফজিলত। যদি কোনো ব্যক্তি জুমার দিনে মৃত্যুবরণ করে, তার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখেন। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত)

এ হাদিসটির ব্যাখ্যায় এসেছে যে, ফিতনা দ্বারা কবরের মুনকার-নাকিরের জিজ্ঞাসাবাদ অথবা কবরের আজাবকে বুঝানো হয়েছে। হজরত আবু নুআ’ইম তার হিলয়া’ গ্রন্থে হজরত জাবের (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যাতে কবরের আজাবের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
যে ব্যক্তি ঈমান ও আমলি জীবন-যাপন করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি যে দিন বা মাসেই মৃত্যুবরণ করুন না কেন, পরকালের সফলতা তার জন্য সুনিশ্চিত। এ কারণেই কোরআনে জান্নাতের সুসংবাদের প্রত্যেক আয়াতে ঈমানের সঙ্গে আমলের কথা বলা হয়েছে। আর তাতে জান্নাতের যাবতীয় নেয়ামতের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

মনে রাখা জরুরি

জুমা দিন বা রমজান মাসে বা হজের মাসে বা অন্য যে কোনো ফজিলতপূর্ণ দিনে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির এ মৃত্যুর সঙ্গে জান্নাত বা জাহান্নামের কোনো সম্পর্ক নেই।

জান্নাত বা জাহান্নামের সঙ্গে সর্ম্পক হলো মানুষের দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা, ঈমান ও ভালো কাজ। আর এ মৃত্যু পরবর্তী জীবনে এ ঈমান ও কাজের ভিত্তিতেই ফয়সালা।

যে ব্যক্তি সৎকাজ করে ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করবে সে জুমার দিন মৃত্যুবরণ করুন বা অন্য যে কোনো দিন মৃত্যুবরণ করুন; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আর যে ব্যক্তি শিরকের ওপর মৃত্যুবরণ করে সে ব্যক্তি যে কোনো পবিত্র দিন বা মাসে কিংবা যে কোনো পবিত্র স্থানেই মৃত্যুবরণ করুক না কেনো, তার পরিণাম হবে জাহান্নাম।

কেননা আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চই আল্লাহ শিরক ক্ষমা করবেন না এবং শিরক ছাড়া অন্য অপরাধের মধ্যে যেগুলো চান তিনি ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

মৃত্যবরণকারী ব্যক্তি যদি মুসলমান হয় তথা তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে পাপের পথে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে তার পরিণতি আল্লাহর ইচ্ছায় নির্ধারিত হবে।

পাপ-পূণ্যের হিসাব-নিকাশের পর আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারে। এ সবই আল্লাহ তাআলার ইখতিয়ার। একটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের সঙ্গে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। বিশেষ দিন মাস ও স্থানের কথা চিন্তা না করে নেক আমলের মাধ্যমে পরকালীন জীবনের চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাতের প্রত্যাশা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ