• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

টুঙ্গিপাড়ায় মাঠ ভরা হলুদ হাসি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২১  

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল শেখ (৩৫)। কৃষি কাজের সঙ্গে করেন অন্য কাজও। সংসারে রয়েছেন মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও ছোট ভাই। এবছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও বিনা মূল্যে সার ও বীজ পাওয়ায় নিজের ১০ কাঠা জমিতে করেছেন সূযর্মুখী ফুলের চাষ। আর ফলনও হয়েছে ভালো। সূযর্মুখী ফুলের বীজ থেকে যে তেল পাবেন, তা দিয়ে সারা বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে তার।

এ ফুল চাষে সফলতা আসার পাশাপাশি স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য কৃষক ও বেকার যুবকদের মধ্যে বেড়েছে আগ্রহ। আগামীতে সূযর্মুখী ফুলের চাষ করতে চান তারা।

শুধু তেল উপাদনই নয়, ক্ষেতগুলো যেন সবুজের মাঝে এক টুকরো হলুদের গালিচা। দূরে কিংবা কাছে যেখানেই চোখ পড়বে মনের সঙ্গে জুড়িয়ে যাবে দু’নয়ন। এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটছেন ক্ষেতগুলোতে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে সূযর্মুখী ফুলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ৫৮ হেক্টর। আর এসব জমিতে ফুলও এসেছে ব্যাপকভাবে। সূযর্মুখী ফুল চাষে আগ্রহ বাড়াতে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ১ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এবছর সূযর্মুখী ফুলের চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শ দেওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ ফুল চাষে। এখন প্রতিটি ক্ষেত হলুদ ফুলে ছেয়ে রয়েছে। আর এক মাস পর এসব ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করবে কৃষকেরা। প্রতি বিঘা জমিতে সূযর্মুখীর ফল থেকে ৮ থেকে ১০ মন বীজ উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে সেই বীজ থেকে উৎপাদন করা হবে ভোজ্য তেল। অন্যান্য তেল থেকে এ তেলে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। প্রতি কেজি তেল ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ আয় থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি অনেক কৃষক তাদের সারা বছরের খাবার তেল সংগ্রহ করে রাখছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার পাশাপশি চাহিদা ও বাজার মূল্য থাকায় অনেক কৃষকের সঙ্গে সঙ্গে বেকার যুবকদের মধ্যে সূযর্মুখী ফুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে। 

শুধু লাভ বা খাবার তেলের যোগানই নয় সূযর্মুখী ফুলের হলুদ আভরণ আকৃষ্ট করে তুলছে সৌন্দর্য প্রেমীদের। প্রতিদিনই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্ষেতগুলোতে ভিড় করছেন সৌন্দর্য প্রেমীরা। আবার অনেকেই এ ফুলের সৌন্দর্য ধারণ করে রাখছেন মোবাইল বা ক্যামেরায়।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল শেখ আলো বলেন, ‘বিনামূল্যে সার ও বীজ পাওয়ার পর ১০ কাঠায় মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৮-১০ মন করে বীজ পাবো বলে আশা করছি। সেখান থেকে সারা বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটবে আমার। এতে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে অর্থিকভাবেও লাভবান হবো, এমনটাই প্রত্যাশিত।’

একই গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিকদার জানান, তিনি পড়াশোনা করেন। তাদের পৈত্রিক জমি পড়ে থাকায় পাড়াশোনার পাশাপাশি অল্প কিছু জমিতে এবার সূযর্মুখী চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে এ তেলের কেজি প্রতি দু’শ থেকে আড়াই’শ টাকা দাম থাকায় এ তেল বিক্রি করে তার ভালই লাভ হবে। আগামী বছরও ব্যাপকভাবে এ ফুলের চাষ করার কথা বলেন তিনি।

একই এলাকার শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সূযর্মুখী ফুলের ব্যাপক ফলন দেখা যাচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামী বছর আমি এ ফুলের চাষ করবো। শুধু আমিই নই, এলাকার অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

একই এলাকার বাসিন্দা সিরাজ শরীফ, শরীফুল শেখ জানান, তাদের গ্রাম এখন হলুদ সূযর্মুখী ফুলে ছেয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে সৌন্দর্য প্রেমীরা ছুটে আসছেন। অনেকই প্রিয় মুহূর্তগুলো মোবাইলে সেলফি তুলে বা ক্যামেরায় ধারণ করে রাখছেন।

জেলা শহরের ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা কবিতা সাহা, শিশু সকাল সাহা বলেন, এ এলাকায় ব্যাপকভাবে সূযর্মুখী ফুলের চাষ হয়েছে জেনে আমরা এখানে এসেছি। যে দিকেই চোখ যায়, সেদিকেই শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য। এ ফুল দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, ‘লাভজনক সূযর্মুখী ফুল চাষে কৃষক ও বেকার যুবকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ার পাশাপশি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা সহযোগিতাও করা হচ্ছে। সূযর্মুখীর তেলে অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশি পুষ্ঠিগুণ রয়েছে।’ 

সারা জেলায় সূযর্মুখী ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে অন্য ভোজ্য তেলের উপর চাপ কমবে বলেও মনে করেন তিনি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ