• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ঢাকা সিটির ভোটের আগের দিন বিএনপিতে গৃহদাহ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে, আগামীকাল ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল হলো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। ঢাকা উত্তরে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে তাবিথ আউয়ালকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে শেখ ফজলে নূর তাপসের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় দুই সিটিতেই বিএনপি ভালো প্রচারণা করেছে এবং তারা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের আড়ষ্টতা কাটিয়ে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছে, উন্নয়নের কথাও বলেছেন, কর্মীদেরকে নির্বাচনের মাঠে নামাতে সক্ষম হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বিএনপির একটি বড় অর্জন। কিন্তু এই নির্বাচন থেকে বিএনপির শেষ পর্যন্ত কি লাভ হবে, তা নিয়ে ভোটের আগেই বিএনপির মধ্যে গৃহদাহ দেখা দিয়েছে।

বিএনপির সকল পক্ষই মনে করেন যে এই নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং এই নির্বাচনে যে শেষপর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতবে তা নিয়ে বিএনপির কারো মধ্যেই কোনো সংশয় নেই। যদিও বিএনপির দুই প্রার্থী বলছেন যে তারা জিততে চান, জেতার জন্যই তারা নির্বাচনে লড়ছেন। কিন্তু বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, সবাইকেই বাস্তবতা বুঝতে হবে।

১১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, ১৩ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। তাদের শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়া জেলে, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক। এই অবস্থায় নির্বাচনে জয় একটা দিবাস্বপ্নের মতোই। কিন্তু এই নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতাই স্বীকার করেছেন যে আন্দোলন নয়, নির্বাচনের পরে বিএনপির মধ্যে শুরু হবে শুদ্ধি অভিযান। বিএনপিতে যারা সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করছে, বিএনপিকে সংগঠন হিসেবে বিপর্যস্ত করছে- তাদেরকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে হবে।

এর সূত্রপাত অনেক আগে থেকেই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে বিএনপি বর্তমান সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু সেই নির্বাচনে পাশ কাটিয়ে স্থায়ী কমিটির অনুমোদন ছাড়াই ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে শপথগ্রহণ করেন এবং সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যই এটা জানতেন না। এরপর স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা ছাড়া বিএনপি এই পরবর্তী উপ-নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ শুরু করে। বিএনপির মধ্যে অধিকাংশ নেতাই মনে করছেন যে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অর্থহীন। বরং এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।

১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি কেন অংশগ্রহণ করলো, এর পক্ষে বিএনপির যারা নির্বাচনপন্থী, মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বের অংশটি মনে করছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে যেতে পেরেছেন, তারা জনগণকে জাগাতে পেরেছেন এবং একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন। এটাই বিএনপির জন্য অনেক বড় লাভ বলে মির্জা ফখরুলপন্থী বিএনপি সমর্থকরা মনে করছে।

কিন্তু বিএনপির মধ্যে একটা বড় অংশ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণটা ছিল অর্থহীন এবং অযৌক্তিক। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন যে, প্রথমত বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ। বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন না করে নির্বাচন উৎসবে যাওয়া এক ধরনের অনৈতিক তৎপরতা বলেই বিএনপির এই নেতারা মনে করছেন।

দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছেন যে এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের যাবতীয় অপকর্মকে এবং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হলো। তৃতীয়ত,  সরকারের বিপক্ষে যে বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না, বিরোধী দলকে সভা সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না, বিরোধী দলের নামে মামলা হামলা দিয়ে বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে ইত্যাদি যে অভিযোগগুলো বিএনপি এতদিন ধরে করছিল, সেই অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন হয়ে গেলো এই নির্বাচনের মাধ্যমে। কারণ এই নির্বাচনে সরকার কার্যত কোনো হস্তক্ষেপই করেনি। এই নির্বাচন প্রচারণার ক্ষেত্রে বিএনপি সমান সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কাজেই আন্তর্জাতিক মহলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে সরকার বিএনপির ওপর দমনপীড়ন করছে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে এর মাধ্যমে সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি, মতবিরোধ এবং হতাশা আরও বাড়বে। নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনে হারার পরে আরেকদফা হতাশায় পড়বে এবং নতুন করে আন্দোলন করার মতো শক্তি তাদের থাকবে না। কারণ এই নির্বাচনের পর তারা এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন। উপরন্তু তাদের ওপর নানারকম মামলা হামলা চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে বিপর্যস্ত করা হতে পারে।

আর তাই বিএনপি মনে করছে যে এই নির্বাচনের পর প্রথমে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান করতে হবে। দলে যারা নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের হাতে নেতৃত্ব না রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এজন্যই বিএনপিতেও একটি শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন বলে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন। আর তাই দেখা যাবে যে ভোটের পরে বিএনপির মধ্যে একটা গৃহদাহ এবং শুদ্ধি অভিযান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ