• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

তদন্তে নানা অভিনব কৌশল নিতে হয়েছিল : পিবিআই

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৯  

‘কারাগারে বসে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার পরিকল্পনা ও হুকুম দেয়া হয়েছিল। এমন মামলা আগে আমার কর্মজীবনে পাইনি। তাই এটি প্রমাণ করতে তদন্তে নানা অভিনব কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিল।’

বলছিলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।আজ বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার রায় ঘোষণার পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মামলাটির তদন্তের নানা বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘নুসরাতকে ঢাকায় আনার আগেই ফেনীতে তার একটি বক্তব্যের ভিডিও করেছিল স্বজনরা। আমরা তার সেই ভিডিওটি সংগ্রহ করি, ওটাকেই সত্য ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করি। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আমরা দুইজন নারী অফিসার পাঠিয়ে তার জবানবন্দি নেই।’

‘ঘুরে-ফিরে নুসরাত এই কয়েকজনের নামই বলছিল। এরপর ২-৩ দিনের মধ্যে নুর উদ্দিন ও শামীমকে গ্রেফতার করি। তাদের থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করি। কারণ, হত্যাকাণ্ডটি মাদরাসার ভেতরে হয়। বাইরের কেউ জানতো না, দেখেওনি। তাই যারা ভেতরে ছিল একে একে তাদের গ্রেফতার করে তথ্য সংগ্রহ করি আমরা।’

কারাগারে বসে অধ্যক্ষের হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে কখনও এমন ঘটনা তদন্ত করিনি বা, দেখিনি যে কেউ কারাগারে বসে একজন হত্যার পরিকল্পনা এবং হুকুম দিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের সময় আমরাও নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। তবে আমরা যাদের জবানবন্দি নিয়েছি তাদের কথায় অধ্যক্ষের পরিকল্পনার কথাটি উঠে আসে। আমরা এসব তথ্য নিয়ে আমাদের এসআইসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। নিখুঁতভাবে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি আমরা।’

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামির ফাঁসির আদেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত।

১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। গত ২৮ মে তদন্ত শেষে মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পিবিআইয়ের লাগে ৩৩ কার্যদিবস।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ