• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

দুই শিশুর মাটির ব্যাংকে জমানো টাকায় হিজড়াদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২০  

করোনাভাইরাসের মহামারী, কর্মহীন, অনাহারী মানুষগুলোর চোখে চাহনি, ক্ষুর্ধাত মানুষের আর্তনাত ছুয়ে গেছে ৮ বছর বয়সী দুই বোন ফুল ও কলিকেও। তাইতো ছোট্ট এই দুই শিশু তাদের মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘আব্বু তুমি আমাদের এই টাকাগুলো দিয়ে গরীব মানুষকে খাবার কিনে দিবা।’ 

বাবার জবাব, ‘মামনি এ টাকা লাগবে না, আমি তো এমনিতে গরীব-অসহায় মানুষের খাবার কিনে দিচ্ছি।’ 

মেয়েদের সাফ জবাব, ‘আমরা তোমার মেয়ে না? বড় হয়ে আমরাও তোমার মতো মানবিক হতে চাই। আমাদের টাকাও আমরা গরীব মানুষকে দিতে চাই।’ 

ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাউরাইল গ্রামে। ফুল ও কলির বাবা তাড়াশ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল শেখ। জন্মের পর থেকেই ফুল ও কলি মানুষকে সেবা করতে দেখেছেন তার বাবা তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখকে। 

এই দুই শিশুর পুরো নাম শেখ সুমাইয়া আফরিন ফুল ও শেখ সাদিয়া আফরিন কলি (৮)। তারা  জানায়, আত্মীয়-স্বজনেরা বিভিন্ন সময় তাদের দু’জনকে টাকা দিলে সেই টাকা তারা দুইটি মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখতো। দেশের এ দুর্যোগের সময় ব্যাংক ভেঙে বাবাকে টাকা দিয়েছে মানুষকে সহায়তা করার জন্য।

অন্যদিন নিজের অর্থ ও ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ নিয়ে গরীব অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গেলেও আজ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। মেয়েদের জমানো এই টাকা দিয়ে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গ-হিজড়াদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এতে চেয়ারম্যানের দুই মেয়েও মহাখুশি। সদর ইউনিয়নের খুটিগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হিজড়াদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, ৫০০ মিলি লিটার ভোজ্য তেল, ৫০০ গ্রাম মসুরের ডাল, সাবান, সার্জিক্যাল মাস্ক ও নগদ অর্থ। 

সাহায্য পাওয়া তাড়াশ উপজেলার হিজড়া সম্প্রদায়ের দলনেতা হোসনেয়ারা বলেন, এমনিতেই হিজড়াদের জীবনে অভাব অনাটন নিত্যদিনের সঙ্গী। আর করোনার কারণে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় তারা সাহায্য সহযোগিতাও না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এই মহাদুর্যোগে সদর চেয়ারম্যান তার যমজ সন্তান ফুল ও কলির জন্মদিনের উপহার পাওয়া টাকায় আমাদের খাদ্য সামগ্রী দেয়ায় আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। 

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ সদর চেয়ারম্যান বাবুল শেখ বলেন, আমার দুই মেয়ে ইচ্ছে করেই তারা তাদের জন্মদিনের উপহারের সঞ্চিত টাকায় অসহায় হিজড়াদের খাদ্য সামগ্রী কিনে দেওয়ার জন্য আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আমি তাদেরকে (দুই মেয়ে) না বললেও তারা নারাজ। সে কারণে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটাতেই ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করেছি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, যতদিন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন তাড়াশ উপজেলার সকল হিজড়াদের খাদ্য সামগ্রী আমার ব্যক্তিগত অর্থে সরবরাহ নিশ্চিত করবো এটা আমার অঙ্গীকার।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ