• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে ঝুপড়ি ঘরে রাখার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২০  

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হাসপাতালের নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে দিয়ে তাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মহসিন উদ্দিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-কোটালীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. জাকারিয়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাকচী। আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বন্ধ করে তাকে ছুটি দেয়। ছুটিতে তিনি গত ২১ এপ্রিল কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারীকে তার বাড়ি থেকে ৪শ’ মিটার দূরে নির্জনস্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখে। ১ সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে অবস্থান করেন। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর গোটা উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 

সোমবার নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এমন নিগৃহের খবর গণমাধ্যমে প্রচারের পরই প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। এদিন বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারীকে ঝুপড়ি থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সেই ঝুপড়ি ঘর।

নাম প্রকাশ করার না শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি প্রভাবশালী মহল মাঠে নেমেছে। তারা ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে যে, তিনি নিজের ইচ্ছায় ওই পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঝুপড়ি ঘরে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এ ব্যাপারে কেউ তাকে বাধ্য করেনি।

জানা গেছে, ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বাবা নেই। তার আয়ের ওপরই চলে মা-মেয়ের সংসার। প্রভাবশালী মহলের চাপে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারটি এ নিয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছে।  

নিগৃহের শিকার ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে সাদা কাগজে লিখে নেওয়ার বিষয়টি জানতে তার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কোটালীপাড়ার ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অমানবিক এ ঘটনার তদন্তে  ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই স্বাস্থ্যকর্মীর গ্রামের ঘরটি জরাজীর্ণ। তাদের ঘরটি আমরা সংস্কার করে দেব।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ