• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

পুষ্টিমানে পেয়ারাই সেরা, কীভাবে?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২১  

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল পেয়ারা। এটিকে অনেকে 'গরিবের আপেল' বলে থাকেন। সর্বত্রই এটির ফলন হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এলাকায় পেয়ারার বিস্তর চাষ হয়ে থাকে। 

পেয়ারা গাছের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হলো, এটি কম সময়ের মধ্যে ফল দেয়। এছাড়া এটি চাষের জন্য বেশি জায়গারও প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আঙিনায় এক দুটি গাছ হলেই যথেষ্ট, নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অর্থও উপার্জন করা যায়।

পেয়ারার পুষ্টিমান: সত্যি বলতে কি, পেয়ারার গুণাগুণ আপেলের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। পেয়ারায় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ছাড়াও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ তে ভরপুর, যা মানবদেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে বেশ উপকারী। পরিণত পেয়ারা কাঁচা ও পাকা, উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। পরিপক্ক পেয়ারা থেকে সালাদ, পুডিং প্রভৃতি তৈরি করা যায়। ভিটামিন ‘সি’সহ অন্যান্য পুষ্টিমানের বিবেচনায় আপেল ও কমলার চেয়ে অনেকাংশে উৎকৃষ্ট পেয়ারা। নিচের ছকে আপেল ও কমলার সঙ্গে পেয়ারার পুষ্টিমান তুলনা উপস্থাপন করা হলো-

ব্যবহার: পেয়ারার শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভালো কাজ করে। ক্ষত বা ঘাঁয়ে থেতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়। পেয়ারায় প্রচুর পেকটিন থাকায় জ্যাম, জেলি তৈরিতে অদ্বিতীয়। তৈরি জেলী সংরক্ষণ করে অমৌসুমে খেয়ে ভিটামিন ‘সি’র অভাব পূরণ করা যায়। শহর ও গ্রামের নারীরা ঘরে বসে পেয়ারার জেলি তৈরী করে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পর বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পেয়ারা থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু শরবত, আচার, আইসক্রিম প্রভৃতি। জাপানে পেয়ারার পাতা থেকে চা তৈরি করা হচ্ছে এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

পেয়ারার রোগবালাই: পেয়ারা উৎপাদনের মূল বাধা হচ্ছে পোকামাকড়ের আক্রমণ। এটি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যহত করে। তাই গাছ থেকে শতভাগ উৎপাদন পেতে ক্ষতিকর পোকামাকড় প্রতিহত করতে হবে। নিচে পেয়ারা গাছের কিছু রোগ, ক্ষতিকর পোকামাকড় এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় দেয়া হলো-

উইল্ট রোগ: এ রোগের কারণ ছত্রাক। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা এবং ডগা উপর থেকে প্রথমে হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা যায় এবং ১০-১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ ঢলে পড়ে। অম্লীয় মাটিতে এ রোগের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। এ রোগ দমনে নিয়মিত পেয়ারার বাগানের যত্ম নিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়া মাটিতে ব্রাসিকল প্রয়োগ করে জীবাণুমুক্ত করলে এ রোগের আক্রমণ কিছুটা কমানো যেতে পারে। অন্যদিকে পলি, আঙুর ও স্ট্রবেরি জাতের পেয়ারার ওপর যে কোন জাত গ্রাফটিং করলে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে দমন সম্ভব।

স্যুটি মোল্ড রোগ: ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। সাধারণত পাতায় এ রোগ হয়। এতে পাতার উপরিভাগ কালো পাউডারি আস্তরণে ঢেকে যায়। সাদামাছি পোকা নিঃসৃত মধুতে ছত্রাক এঁটে যায়। ওই অবস্থায় ছত্রাক কর্তৃক উৎপাদিত প্রচুর কালো স্পোর পত্র পৃষ্ঠে লেগে যায়। এতে কালো আস্তরণের সৃষ্টি হয়। সবুজ পাতা কালো আবরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে ঝরে পড়ে এবং গাছ উপর থেকে শুকাতে থাকে।

সাদা মাছি পোকা: পেয়ারা গাছের পাতায় ১-২ সে.মি. লম্বা পোকাটি আক্রমণ করে। পাতার নিচের পিঠে প্যাঁজা তুলোর মতো সাদা থোকা থোকা পোকা দেখা যাবে। বয়স্ক ও বাচ্চা পোকা পাতার রস চুষে নেয়। গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। চারাগাছে আক্রমণ বেশি হলে গাছ মরেও যায়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে ফুল ও ফলের সংখ্যা কমে যায়। বয়স্ক পোকা ও নিষ্ফ (বাচ্চা) প্রচুর পরিমাণে মধু নিঃসরণ করে, যার জন্য পাতার ওপর কালো আবরণ পড়ে। একে স্যুটি মোল্ড বলে। এতে গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। অর্থ্যাৎ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা সহজেই দমন করা যায়। 

এসব নানা দিক বিবেচনা করে পেয়ারা উৎপাদনে যত্নশীল হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে অনায়াসে। এতে পরিবারের পুষ্টি যেমন মেটানো যাবে, এছাড়া বাড়তি আয়েরও সংস্থান হবে। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ