• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ফিরে দেখা : ১১ বছরে রেলপথ উন্নয়নে সরকারের সফলতা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। রুপকল্প ২০২১ এবং একশ’ বছরের ডেল্টা প্লানকে সামনে রেখে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। উন্নয়নের মহান রুপকার, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাধারা ও যুগোপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশ থেকে দূর হয়েছে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারত্ব। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক পরিবেশনা ‘উন্নয়নের ১১ বছর’।

রেলপথ উন্নয়ন :

রেলপথ বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী জনপরিবহন মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান। রেলওয়েকে একটি শক্তিশালী পরিবহন নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে পৃথক ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়’ গঠন করা হয়। প্রায় ১০ বছরে ৩৩০.১৫ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণ। ৯১টি স্টেশন বিল্ডিং নতুন নির্মাণ ও ২৪৮.৫০ কি.মি. মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর। নতুন ৭৯টি রেল স্টেশন নির্মাণ। ২৯৫টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ। ক্সরেলওয়ের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ৩০ বছর মেয়াদী (২০১৬-২০৪৫) একটি মাস্টার প্ল্যান অনুমোদিত। রেলপথ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। রেলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। সর্বমোট ১১৩৫.২৩ কি.মি. রেললাইন উন্নয়ন/পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ। ১৭৭টি রেলস্টেশন উন্নয়ন/পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ। ৬৪৪টি রেল সেতু পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ। ৪৬টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ (২০টি এমজি ও ২৬টি বিজি) এবং ২০টি ডিইএমইউ। ২৭০টি (১৭০টি বিজি ও ১০০টি এমজি) ক্যারেজ সংগ্রহ। ৪৩০টি ক্যারেজ পুনর্বাসন। ৪৩০টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন শেষে রেলওয়ে বহরে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা যাত্রী সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। ৫১৬টি (৫০টি এমজি ফ্ল্যাট + ৫০টি এমজি ফ্ল্যাট + ১৭০টি এমজি ফ্ল্যাট + ১৬৫টি বিজি ট্যাঙ্ক + ৮১টি এমজি ট্যাঙ্ক) ওয়াগন সংগ্রহ এবং ৩০টি ব্রেক ভ্যান (৫টি + ৫টি + ৬টি + ১১টি + ৩টি) এবং ২৭৭টি পুনর্বাসন। ৯০টি সিগন্যালিং উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং ৯টি পুনর্বাসন। ১১৭ টি নতুন ট্রেন চালুকরণ। ৩৬টি ট্রেন সার্ভিস/রুট বর্ধিতকরণ। ২টি  রিলিফ ক্রেন সংগ্রহ। ৬৮টি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কাজ চলমান। ১টি (ডুয়েলগেজ) হুইল লেদ মেশিন স্থাপন। বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ২টি লোড মনিটরিং ডিভাইস সংগ্রহ।

চীন হতে ২০ সেট (৩ ইউনিটে ১ সেট) ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) বা ডেমু সংগ্রহ। সংগৃহীত ডেমু দ্বারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, ময়মনসিংহজয়দেবপুর, আখাউড়া-কুমিল্লা, লাকসাম-কুমিল্লা-চাঁদপুর, লাকসাম-কুমিল্লা-নোয়াখালী, সিলেট-আখাউড়া, পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম সার্কুলার কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু। আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ ১১৭টি নতুন ট্রেন বিভিন্ন রুটে চালু এবং ৩৬টি ট্রেনের সার্ভিস/রুট বর্ধিত করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে নতুন যাত্রীবাহী কোচ দ্বারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেন উদ্বোধন। ১০০টি এমজি ও ৫০টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় ২৭০টি যাত্রীবাহী গাড়ী সরবরাহ পাওয়া গিয়েছে। আরও ১৫০টি এমজি যাত্রীবাহী কোচ ও ২০টি এমজি লোকোমোটিভ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্সতারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) ৩৫ কি.মি. নতুন রেলওয়ে সেকশন নির্মাণ। এ সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। লালমনিরহাট হতে বুড়িমারী পর্যন্ত ৯৫ কি.মি. সংস্কারকৃত রেললাইন ট্রেন চলাচল চালু। কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া ও পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর বন্ধ রেলওয়ে সেকশন পুনঃচালুকরণ। বাংলাদেশ রেলওয়েকে ৮টি লাইনস অব বিজনেস (এলওবি)-এ ভাগ করে ৫ জন এডিজিকে এলওবি প্রধান হিসেবে পদায়ন করা হয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘লাইনস অব বিজনেস’ (এলওবি) ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওতে ২০০৯ সাল হতে অদ্যাবধি বিভিন্ন শ্রেণির শূণ্য পদের বিপরীতে সর্বমোট ১০,৮০৬ জন নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট শূণ্য পদের বিপরীতে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে। রেলে অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থা চালু। ট্রেন ট্র্যাকিং এন্ড মনিটরিং সিস্টেম চালু। যাত্রীদের তথ্য প্রদানের জন্য কল সেন্টার ‘১৩১’ চালু। ই-টিকেটিং কার্যক্রমের আওতায় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকেট প্রাপ্তি এবং ট্রেনের তথ্য জানার সুবিধা চালু করা হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এ যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫৬টি স্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন। অধিকন্তু,  ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অফিস ভবন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে ৬১ কিলোমিটার এবং টঙ্গী-ভৈরব বাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণকাজ সমাপ্ত। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর ৩২১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৪৩ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করছে। আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ চলমান।

ঈশ্বরদী হতে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮.৮০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। পুকুরিয়া-ভাঙ্গা ৬.৬০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নাভারণ হতে সাতক্ষীরা হয়ে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সমীক্ষা প্রকল্পটি ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং এর আওতায় ১১ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন এবং ২.৮৭ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন। ২য় ভৈরব ও ২য় তিতাস সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। ট্রেন চলাচল করছে। ৮ই এপ্রিল ২০১৭, বিরল-রাধিকাপুর সেকশনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। ৯ই নভেম্বর খুলনা ও কলকাতার মধ্যে আন্তঃদেশীয় প্যাসেঞ্জার বন্ধন এক্সপ্রেস উদ্বোধন। ২৫ নভেম্বর হতে বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা-খুলনা-কলকাতা রুটে চলাচল করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটার গেজ সিঙ্গেল লাইনের সমান্তরালে ১৬.১০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ নতুন একটি রেল লাইন নির্মাণকাজ চলছে। খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে।

চীন সরকারের অর্থায়নে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজের Feasibility Study, Detail Design and Tendering Service এর কাজ সম্পন্ন।  নির্মাণ কাজ চলমান। পায়রা বন্দরের সাথে রেল সংযোগের লক্ষ্যে ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ। বগুড়া হতে সিরাজগঞ্জ জেলার শহিদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ। কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প চলমান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ