• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বাবা ঘুষ দেননি বলেই কোহলি আজ বিশ্বসেরা!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২০  

যেকোন মানুষের জীবনে প্রথম হিরো তার বাবা। জীবনের কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা যে শিক্ষাটা দিয়ে থাকেন, তা মনে থাকে আজীবন। বাবার মতো হতে চাওয়ার ইচ্ছা থাকে যেকোন মানুষের। যেকোন ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।

এর অন্যতম উদাহরণ ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। তিন ফরম্যাটেই এখন চলছে একজন ব্যাটসম্যানের রাজত্ব, তিনি বিরাট কোহলি। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৭০টি সেঞ্চুরি। অনেকেই বলছেন, শচিন টেন্ডুলকারের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙবেন কোহলিই।

নিজের পরিশ্রম আর সততা দিয়েই সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন কোহলি। আর এই সততার পাঠ তিনি পেয়েছেন নিজের বাবা প্রেম কোহলির কাছ থেকে। তখনও পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু হয়নি কোহলি। সে সময়েই কোহলিকে সততার এক দারুণ শিক্ষা দেন তার বাবা।

দিল্লি রাজ্য দলে সুযোগ পাইয়ে দেয়ার নাম করে কোহলির বাবার কাছে বাড়তি টাকা অর্থাৎ ঘুষ চেয়েছিলেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা। তখন প্রেম কোহলি সরাসরি বলে দিয়েছিলেন কোন বাড়তি টাকা দিয়ে নিজের ছেলের ক্যারিয়ার গড়তে দেবেন না তিনি।

সম্প্রতি ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রির সঙ্গে এক লাইভে এ ঘটনা জানিয়েছে কোহলি বলেছেন, ‘আমার রাজ্য দলে মাঝেমধ্যে অনেক অসৎ কাজও হয়। একবার যখন দল নির্বাচনের সময় এলো, তখন শীর্ষ কর্তাদের একজন নিয়ম মানতে রাজি ছিলেন না। তিনি আমার বাবাকে বলেন, যেহেতু আমার মেধা আছে দলে সুযোগ পাওয়ার। তাই জায়গাটি নিশ্চিত করতে কিছু বাড়তি টাকা (ঘুষ) প্রয়োজন।’

‘আমার মধ্যবিত্ত বাবা, যিনি নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন সফল উকিল হয়েছেন, তিনি এই বাড়তি টাকার মানেই বোঝেননি। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আপনারা যদি বিরাটকে বাছাই করতে চান, তাহলে ওর মেধার ওপরেই করেন। আমি বাড়তি কিছু দিতে পারব না।’

এ ঘটনা থেকেই বিশ্বসেরা হওয়ার টোটকা পেয়ে যান কোহলি। পরবর্তী জীবনে পরিশ্রমের গাড়িতে চড়ে তিনি পেয়েছেন একের পর এক সাফল্য। শুধুমাত্র বিশ্ব টি-টোয়েন্টি বাদে খেলোয়াড়ি জীবনের সকল সাফল্য পেয়ে গেছেন তিনি।

কোহলি বলেন, ‘তো আমি তখন সুযোগ পেলাম না। অনেক কান্না করেছিলাম, ভেঙে পড়েছিলাম পুরোপুরি। তবে সেই ঘটনা আমাকে অনেক শিক্ষা দিয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম যে, সফলতা পাওয়ার জন্য আমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে এবং এটা অবশ্যই পুরোপুরি নিজের পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করতে হবে। বাবা নিজের কাজের মধ্য দিয়েই আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন।’

ছেলেকে সততার পাঠ দিলেও, নিজ চোখে ক্রিকেটার হতে দেখে যেতে পারেননি প্রেম কোহলি। ২০০৬ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। বাবার মৃত্যুর সময়ই কোহলির উপলব্ধি হয়, জীবনে অনেক বড় কিছু করতে হবে তাকে।

তিনি বলেছেন, ‘আমি বাবার মৃত্যুটাও মেনে নিয়েছিলাম। নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হই। সত্যি বলতে, বাবার মৃত্যুর পরদিনই আমি রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে চলে যাই। তার মৃত্যু আমাকে অনুধাবন করাল যে, জীবনে কিছু একটা করতে হবে। আমি প্রায়ই ভাবি, এখন আমি তার (বাবার) অবসর পরবর্তী সময়ে কী সুন্দর একটা জীবন দিতে পারতাম। তখন আবেগপ্রবণ হয়ে যাই আমি।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ