• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বিদ্যুতায়নের আওতায় দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

এম এ মান্নান। জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। টানা তৃর্তীয় বারের মতো সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব পেয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রীর। স্বাধীনতার পর থেকে জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসনে যত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এম এ  মান্নানের মতো এত উন্নয়ন আগে কেউ করেননি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই পাল্টে যেতে থাকে নির্বাচনী এলাকার চিত্র। সম্প্রতি ঢাকায় তার অফিসে সরকার গঠনের এক বছরের মূল্যায়ন, বৃহৎ প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা এবং নিজ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। 

 বছরের শুরুতে আপনার যে কর্মপরিকল্পনা ছিল তার কতটুকু আপনি পূরণ করতে পেরেছেন?

এম এ মান্নান: বর্তমান অর্থবছরে আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল এর মধ্যে জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাসে আমাদের যে বাস্তবায়নের হার, যা আমরা আশা করেছিলাম তার থেকে সামান্য কম হয়েছে। কিন্তু টাকার অংকে বেশি হয়েছে। টাকা বেশি ব্যয় করেছি। কিন্তু বাস্তবায়নের ফিজিক্যাল যে লক্ষ্য তার থেকে একটু কম ছিল। এই বছরের সব থেকে বড় সংবাদ হলো আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫-তে পৌঁছে গেছি। গত বছর ক্লোজ করে চূড়ান্তভাবে এই নিউজটা আমরা দিতে পারছি।

আমাদের মেগাপ্রকল্পগুলোর গতি অনেক বেড়ে গেছে। যেমন পদ্মা সেতুর গতি এবার বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসে প্রায় তিনটি স্প্যান উঠে গেছে। এটা বিশাল একটি অগ্রগতি। আমার বিশ্বাস আগামী বছরের প্রথমার্ধের আগেই আমরা ইনশাল্লাহ সব স্প্যান তুলে কমপ্লিট করতে পারবো। এটা আমার নিজের ধারণা। মেট্রোরেলেরও খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। মেট্রোরেলেও আমরা আগামী বছর আগারগাঁওয়ের অংশটি চালু করতে পারবো। পরেরটাও কাজ চলবে। সার্ভিকভাবে যোগ বিয়োগ করে বলা যায় কোনো খানে লস কোনো খানে গেইন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গেইন আছে। সুতরাং সার্ভিকভাবে আমাদের গেইন আছে। মাথাপিছু আয় টাকার হিসেবে প্রায় সাড়ে চারশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ডলার যেহেতু শক্তিশালী আছে তাই ডলার হিসেবে আগের যায়গায়ই আছে। কিন্তু আমরাতো হাট বাঁজার করি বাংলাদেশি  টাকায়। তাই বাংলাদেশি টাকায় যেহেতু বৃদ্ধি পেয়েছে তাই এর উপকার আরো পাবো।

 মূল্যস্ফীতির ওঠানামা কীভাবে দেখছেন?

এম এ মান্নান: মূল্যস্ফীতির স্বভাবই হচ্ছে এটি ওঠানামা করে। এই মাসটা (নভেম্বর) আমাদের একটু মন্দ গেছে এটা আমি গত সভায় বলেছি। পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি ছিল। অবশ্যই অনেক অনেক বেশি ছিল যা আমাদের চিন্তার বাইরে। আর চালের দামেরও একটা প্রেসার ছিল। যেটা অবশ্য এখন কমে গেছে। পেঁয়াজের দামও কমে গেছে।

 পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আপনিই প্রথম একটি লক্ষ্য নিয়েছিলেন সব বিভাগে সরেজমিনে প্রকল্প পর্যালোচনা করবেন। সেক্ষেত্রে বরিশাল এবং ঢাকা পর্যালোচনা করা হয়নি। এই দুই বিভাগে এই বছরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

এম এ মান্নান: বরিশালে সরেজমিনে প্রকল্প পর্যালোচনা খুব শিগগিরই করবো। ঢাকা অনেক বড় বিভাগ হওয়ায় এবং প্রকল্প সংখ্যা অনেক বেশি থাকার কারণে দুইবারে করতে হবে। এ বছর শেষ হতে বেশি দিন বাকি নেই যেহেতু, তাই বরিশালে এই মাসেই পর্যালোচনা করার ইচ্ছে আছে। ঢাকারটা নতুন ইংরেজি বর্ষে করতে পারবো।

 প্রকল্প পর্যালোচনার কাজে সম্প্রতি আপনি ময়মনসিংহ গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি কী অবস্থায় রয়েছে?

এম এ মান্নান: ময়মনসিংহ এবং জামালপুর জেলায় আমি গিয়েছিলাম। ময়মনসিংহে প্রকল্পের অগ্রগতি ভালোই ছিল। আইএমইডি সচিব ছিলেন। তিনি আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন এই দুই জেলার প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো আছে। সেখানে গিয়ে আমি দেখেছি প্রকল্প পরিচালকদের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া আগের তুলনায় খুবই ভালো। তাদের মধ্যে একটা সংশয় ছিল যে আমরা তদারকি বা নজরদারি করছি। আমরা বারবার বলেছি আমাদের নজরদারি বা তদারকি করার কোনো ইচ্ছে নেই। আমরা আপনাদের সহায়তা করতে চাই। আপনাদের অসুবিধা থাকলে আমাদের বলেন আমরা সেগুলো মোকাবিলা করবো। তারা সেটা বুঝতেও পেরেছে।

 বর্তমানে যে সমস্ত প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ আছে সে বিষয়ে সংশোধিত এডিপিতে একটি বিশাল সংশোধন হচ্ছে যে বৈদেশিক অর্থ খরচ করতে পারছে না। এর কারণ কী?

এম এ মান্নান: প্রকল্প বাস্তবায়নের হার কম হলে খরচ কম হবে। অনেকগুলো বৈদেশিক অর্থ আছে যেগুলোতে আমাদের নিজস্ব অর্থের একটি অংশ দিতে হয়। সেটা অনেক সময় আমরা যথা সময়ে দিতে পারি না। যে কারণে ওটা ছাড় হয় না। আর একটি অঘোষিত বা আমাদের জানার বাইরে কিছু ব্যাপার আছে। আমাদের যেমন টাকা ছাড়ের কিছু নিয়ম কানুন আছে। বিদেশিদেরও টাকা ছাড়ের নিয়ম-কানুন আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পুরোপুরি মিলে না। অনেকে মনে করে বিদেশি টাকা হলেই আমাদের চেয়ে খুব দ্রুত করবে এটা কিন্তু সঠিক নয়। অনেকগুলো বিদেশি অর্থায়নের ব্যাপার আছে। আমরা রেডি হয়ে কাগজ সাবমিট করে বসে আছি। তাদের অভ্যন্তরীণ যে নিয়ম সেটা মিটমাট করে এখনো ফান্ড রিলিজ করতে পারেনি। আমি কারো নাম নিচ্ছিনা ইচ্ছে করেই। আমি দির্ঘদিন এই লাইনে কাজ করে আসছি। আমাদের জনগণ বা আমাদের দেশের গণমাধ্যম মনে করে বিদেশি ফান্ডে কাজ করা মানেই দ্রুত কাজ শেষ হবে এটা সর্বাংশে সত্য নয়।

আইএমইডির যে রিপোর্ট তাতে দেখা যায় রেলের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খুব ধীরগতি। রেল নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

এম এ মান্নান: আলাদা নয়। রেলপথ আমাদের সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। কারণ এটা স্বীকৃত যে রেলকে অবহেলিত করা হয়েছিল। এই কাজটি করা ঠিক হয়নি। আমরা অতীতে যেতে পারবো না, আমরা চাচ্ছি এখন রেলকে তুলে আনতে। এখন রেলের বড় বড় প্রকল্প আপনারা দেখছেন। ঢাকা চট্টগ্রাম ডাবল লাইন হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের মূল হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রাম রেললাইন। সেখানে খুব দ্রুততার সঙ্গে ডাবল লাইনের কাজ চলছে।

 আপনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক বছর হয়েছে। এই এক বছরে আপনার ভালো লাগার যায়গাটা কোথায়?

এম এ মান্নান: এই এক বছরে সব থেকে ভালো লাগার জায়গা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ খাতে আমাদের অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। আমরা প্রায় ৯০ বা ৯২ শতাংশের বেশি নাগরিকদের বিদ্যুৎ দিতে পারছি। এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি সব থেকে বড় শক্তি আমাদের অর্থনীতিতে। এছাড়া এই বছরে কয়েকটি মেগা প্রকল্প কাজ খুব দ্রত করছে আগের তুলনায়। ঢাকা চট্টগ্রাম ডাবল ট্র্যাকের রেললাইনের কথা বললাম। কর্নফুলী টানেল এখন মোটামুটি মুঠোর মধ্যে চলে আসছে। পদ্মাসেতুর কাজও খুব দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। এছাড়া আকাশপথেও আমাদের বিরাট অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের বিমানের বহরে এখন ৬টি ড্রিমলাইনার যুক্ত হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ বিমানও নবযৌবন পাচ্ছে বলতে গেলে। অনেক যায়গায় যেতে পারবে ভালো ভাবে উড়তে পারবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা নিজেরা এখন ব্যবহার করছি। সেকেন্ড স্যাটেলাইট পাঠানোর জন্য তৈরি হচ্ছি। সব মিলিয়ে এই বছরটা খুব ভালো।

খারাপ লাগা যদি থেকে থাকে সেটা কী?

এম এ মান্নান: যখন শুনি দরিদ্র ও ধনির মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে।  আমি স্বীকার করি এটা বাস্তব। এটা বলে কান্নাকাটি করে লাভ নেই। বাস্তব কাজ করতে হবে এটা দূর করার জন্য। সেই কাজটাই সরকার করছে। যেমন ভাতা দিচ্ছি, বিদ্যুতের সম্প্রসারণ করেছি, সড়ক বানাচ্ছি, স্কুলের বাচ্চাদের দুপুরে খাওয়ানোর জন্য একটি পরিকল্পনায় হাত দিয়েছি বা শুরু করেছি।

 অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ