• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বোনের প্রতি রাসুল (সা.) এর শ্রদ্ধা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮  

আল্লাহর রাসুল (সা.) বাল্যকাল কাটিয়েছেন বনি সাদ গোত্রে। মা হালিমা সা‘দিয়া তাকে দুধ পান করিয়ে ছিলেন। শায়মা বিনতে হারেস ইবন আবদুল উজ্জা সাদিয়া ছিল তার দুধবোন। বাল্যকালে রাসুল (সা.) হালিমা সা‘দিয়ার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ছাগল চরাতে যেতেন। তার দুধবোন শায়মা তাকে কোলে নিত। আদর করত। দোলনায় দুলাত। ঘুমপাড়ানি গান শোনাত। ছায়ায় বসিয়ে তাকে গুনগুনিয়ে বলত, ‘হে আমার প্রভু! মুহাম্মদ (সা.)-কে বাঁচিয়ে রাখো। যাতে তাকে আমি যৌবনকালে চোখে দেখতে পারি। অত:পর তাকে জাতির সর্দার রূপে দেখতে পারি। হে আমার রব! তুমি তার সকল শত্রু ও হিংসুককে ব্যর্থ করে দাও। (হে আল্লাহ!) তাকে এমন সম্মান দাও যা চিরদিন বাকি থাকে।’

শায়মার এই সুরেলা কথামালা ব্যর্থ যায়নি। তার এসব দুআ কবুল হয়ে যায় আল্লাহর দরবারে। আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-কে সারা জগতের ইমাম ও সর্দার বানিয়ে প্রেরণ করেন। রাসুল (সা.) বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখেছেন বনি সাদে এবং প্রায় চার/পাঁচ বছর সেখানে কাটিয়ে নিজের আপন মায়ের কাছে মক্কায় ফিরে আসেন। কিন্তু সারাটি জীবন তিনি তার সেই স্মৃতিময় বাল্যকাল, তার দুধমাতা-পিতা, ভাই-বোন, তাদের আদর ও ভালোবাসার কথা ভুলেননি।

ইমাম ইবন হাজার রহ. ‘আল ইসাবা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হুনায়নের যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয় তখন বনি সাদ যা মূলত হাওয়াযিন গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারাও মুশরিকদের দলে শামিল হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে যুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা অবশেষে হুনায়নের যুদ্ধে মুসলমানদের যখন বিজয় দান করলেন তখন বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ, পশু, উট, ছাগল মালে গনিমত হিসেবে অর্জিত হয়। এসবের সঙ্গে অসংখ্য বাদি ও গোলামও ছিল।

সম্মানিত পাঠক! জা‘রানা নামক স্থানে যাবার সুযোগ হয় এই লেখকের। তখন আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে ঘুরলাম। সেই জায়গাটিকে দেখার চেষ্টা করি যেখানে আল্লাহর রাসুল সা. তার দুধবোন শায়মাকে সম্মানিত করেছিলেন।

মুসলমানরা হুনাইনের কয়েদিদের মধ্যে মা হালিমার কন্যা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দুধবোন শায়মা বিনতে হারিসকেও উপস্থাপন করে। তারা তাদের অজান্তে অন্যান্য কয়েদিদের সঙ্গে তার প্রতিও একটু কঠোরতা দেখালে তিনি বলে উঠেন, ‘তোমরা কি জানো, আমি তোমাদের সঙ্গী (অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দুধবোন!? সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর খেদমতে হাজির করেন।

শায়মা রাসূলুল্লাহ সা.এর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার দুধবোন। আল্লাহর রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘এর কোনো চিহ্ন আছে?’

শায়মা বলল, ‘আমার পিঠে দাঁতের কামড়ের একটা চিহ্ন রয়েছে। আপনি ছোট থাকতে আপনাকে যখন আমার পিঠে উঠিয়েছিলাম, তখন আপনি এই কামড় দিয়েছিলেন।’

আল্লাহর রাসুল (সা.) আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই মধুময় বাল্যস্মৃতি। এরপর তিনি তার উন্নত চরিত্রের আলো ছড়িয়ে শায়মার জন্য চাদর বিছিয়ে দিলেন। বললেন, ‘তুমি যদি চাও, আমার কাছে থাকতে পারো। তুমি খুবই খাতির-যত্ন ও সম্মানে ভূষিত হবে। আর যদি চাও, আমি তোমাকে প্রয়োজনীয় আসবাপত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে দেব, তুমি নিজ গোত্রের কাছে ফিরে যাবে। তুমি যেটা পছন্দ করো।’

শায়মা বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু সম্পদ, আসবাবপত্র-সরঞ্জাম দিয়ে আমার গোত্রের কাছে পাঠিয়ে দিন। সুতরাং তার কথা মতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে উত্তম মানের বেশকিছু সরঞ্জাম দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।

এদিকে শায়মা তার দুধভাইয়ের মহৎ চরিত্র দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হন। মুগ্ধতায় ভরে যায় তার মন। ইসলাম কবুল করে নিলেন তিনি।

সিরাতে ইবন হিশামের বর্ণনা মতে রাসুল (সা.) তাকে তিনটি গোলাম, একটি বাঁদি, কয়েকটি উট এবং কিছু সংখ্যক ছাগল দান করেছিলেন। তার দুধবোন শায়মা সেগুলো নিয়ে আনন্দমনে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়েছিলেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ