• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ব্যবসায়ীদের ২০০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২০  

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই মাসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ হিসাবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। গতকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। এ সময় সরকারপ্রধান বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেজন্য এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে না।

লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'সবকিছু দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। তাই আমি দেখতে পাচ্ছি অন্য দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং যাতায়াতসহ নানা বিষয় অল্প অল্প করে উন্মুক্ত করছে। কাজেই আমরাও সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি।' খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ফলে আনুমানিক এক কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন। কভিড-১৯-এর কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ ছিল। সেই কারণেই তাদের এই সুযোগটা সরকার দিচ্ছে যাতে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারেন।

করোনাভাইরাস মহামারির অর্থনৈতিক প্রতিঘাত মোকাবিলায় এটা সরকারের ১৯তম প্রণোদনা প্যাকেজ।

এর মধ্য দিয়ে প্রণোদনা তহবিলের মোট আকার এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলো, যা দেশের জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, দুই মাসে স্থগিত সুদের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্য থেকে দুই হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে দেবে, ফলে ঋণগ্রহীতাদের আনুপাতিক হারে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ আর পরিশোধ করতে হবে না। তাদের এইটুকু আমরা মুক্ত করে দিচ্ছি।

সরকারপ্রধান জানান, সুদের অবশিষ্ট অর্থ ব্যবসায়ীরা যাতে ১২ মাসের কিস্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করতে পারেন, সরকার সেই উদ্যোগ নেবে। অর্থাৎ, যেটা প্রতি মাসে দিতে হতো, সেটা এই দুই মাসে যেহেতু দিতে পারেননি, এটাকে আমরা ১২ মাসের একটা সময় দিয়ে দিচ্ছি। এই ১২ মাসে ধীরে ধীরে তারা বাকিটা শোধ করতে পারবেন।

সর্বস্তরের মানুষের জন্যই বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি জানি না পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এভাবে দিয়েছে কিনা। কিন্তু আমরা সেভাবে এই সুযোগটা দিচ্ছি।'

এর বাইরেও মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আগে তার সরকার প্রদত্ত মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য এবং কওমি মাদ্রাসায় প্রদত্ত অনুদানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ভিন্নভাবে এসব খাতে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রণোদনা এবং আর্থিক সহযোগিতা বাজেটের ওপর চাপ ফেললেও সরকার আগামী ১১ জুন বাজেট ঘোষণা করবে।

তিনি বলেন, সরকারই এখন টাকা ধার করে সবার ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালু, জীবনযাত্রাটা চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মানুষের জন্যই রাজনীতি। কাজেই মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছি। ভবিষ্যৎ তো আমি ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সেই কারণে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্মুক্ত করব না। আমরা দেখি এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যায়ক্রমে আমরা তখন উন্মুক্ত করব।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবে। আমার বিশ্বাস, এই করোনাভাইরাসের আঘাত থেকে শিগগিরই বিশ্ব মুক্তি পাবে, বাংলাদেশও মুক্তি পাবে। যে কোনো সংকটে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নিজের আত্মবিশ্বাসটাই বড়। মনে রাখতে হবে, আমরা বিজয়ী জাতি। করোনাভাইরাসসহ যে কোনো দুর্যোগে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। যে কোনো ঝড়-ঝাপটা আসুক, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করব। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব- সবাই যেন ঘরে বসে পড়াশোনা করে। এটা একটা পড়াশোনার ভালো সুযোগও। আমরা নিজেরাও অনেক কিছু জানার, পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। সেটাও কম কথা না। এখানে আমি বলব, সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। আমি ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করব, তারা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। শুধু নিজে ভালো থাকা না, দেশের কল্যাণে কাজ করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ধাক্কা এলেও তার সরকার শিক্ষা খাতে যেসব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল, সেগুলো বন্ধ হবে না। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সরকারের দেওয়া বৃত্তি এবং উপবৃত্তি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি, বছরের শুরুতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং নানা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচিও এ সময় অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সচিবালয় থেকে অনলাইনে পরীক্ষার ফলের সংক্ষিপ্তসার প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ