• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯  

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ও সার্থক গণআন্দোলন হলো ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এই চার বছরের ভাষা আন্দোলনে রক্তক্ষয়ী পরিণতির মধ্য দিয়ে পাকিস্তান শাসকগোষ্টী পূর্ববাংলার মানুষের ভাষার অধিকার স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনে আরও অনেকের সঙ্গে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ২৮ বছরের তরুণ, উদ্দীপ্ত ছাত্রনেতা। এই সময় তিনি কেবল ভাষার অধিকার নয় পূর্ববাংলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা আন্দোলন ও জনমত তৈরিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন। তিনি কোনো একক আন্দোলন নিয়ে থাকেননি, সকল ন্যায়সঙ্গত ও পূর্ববাংলার মানুষের অধিকারসংশ্লিষ্ট সব ধরনের আন্দোলনে সক্রীয় এবং নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রাখেন। যার ধারাবাহিকতায় এই তরুণ ছাত্রনেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই পরবর্তীকালে (১৯৭১ সালে) রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভেতর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সূর্য উদিত হয়। চল্লিশের দশকের শেষ দিকেই শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ববাংলার জাতীয় নেতা হয়ে ওঠার বিষয়টি পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর চোখ এড়িয়ে যায়নি, যে কারণে আরও অনেক প্রবীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে থাকলেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা তখন শেখ মুজিবকেই গোয়েন্দা-নজরদারিতে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপন নথি নিয়ে প্রকাশিতব্য ১৪ খণ্ডের বইয়ের মধ্য প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইয়ের প্রথম খণ্ডটির সময়কাল ১৯৪৮-১৯৫০ এবং দ্বিতীয় খণ্ডের সময়কাল ১৯৫১-১৯৫২। অর্থাৎ ১৯৪৮ সাল থেকে এই নজরদারি শুরু করা হয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৪৮-৫২ এই সময়টা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা আন্দোলনের কারণে। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে এই সময় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান নিজের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠে। বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়নের যে রাজনীতি পশ্চিম পাকিস্তান পূর্বপাকিস্তানের সঙ্গে শুরু করে তার বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ এই সময় থেকেই সচেতন ও অধিকার আদায়ে আন্দোলনমুখী হতে শুরু করে। আর এ সকল আন্দোলনের বাংলার হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও সেসব আদায়ে যূথবদ্ধ করে তোলেন তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু আমরা জানি ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতির কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও দেশগঠনের কারিগর বঙ্গবন্ধুর সমস্ত অবদানকে খাটো ও বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস জ্বলে ওঠে আপন আলোয়। ফলে মেজর জিয়া শাসিত বিএনপি এবং পরবর্তীসময়ে মেজর জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শাসিত এই জাতীয়তাবাদী দলটি সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকে তারা খাটো করেছে। বদরুদ্দীন উমর প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা খুবই গৌন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারগারারের রোজনামচা’ এবং তাঁর সম্পর্কিত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের সামনে এখন ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দুখণ্ডে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার ভূয়সী প্রসংশা করে তাঁর নেতৃত্বের ঋণস্বীকার করেছেন অধিকাংশ ভাষাসৈনিকেরা। সম্প্রতি সেসব তথ্যকে আরও অকাট্য করেছে উল্লিখিত ঐতিহাসিক দলিলসমূহ। 

বঙ্গবন্ধু কীভাবে ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন, এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক মুনতাসীর মামুন রচিত ‘বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন’ গ্রন্থ থেকে জানতে পারি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে আরও অনেকের সাথে অন্নদাশঙ্কর রায় ঢাকা আসেন। কথা হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। অন্নদাশঙ্কর রায় লেখেন: ‘‘শেখ সাহেবকে আমরা প্রশ্ন করি, ‘বাংলাদেশের আইডিয়াটি প্রথম কবে আপনার মাথায় এল?’ ‘শুনবেন?’ তিনি (বঙ্গবন্ধু) মুচকি হেসে বললেন, ‘সেই ১৯৪৭ সালে। আমি সুহরবর্দী (সোহরাওয়ার্দী) সাহেবের দলে। তিনি ও শরৎচন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। আমিও চাই সব বাঙালীর এক দেশ।... দিল্লী থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সুহরাবর্দী ও শরৎ বোস। কংগ্রেস বা মুসলিমলীগ কেউ রাজী নয় তাঁদের প্রস্তাবে।... তখনকার মতো পাকিস্তান মেনে নিই। কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা।... হঠাৎ একদিন রব উঠল, আমরা চাই বাংলাভাষা। আমিও ভিড়ে যাই ভাষা আন্দোলনে। ভাষাভিত্তিক আন্দোলনকেই একটু একটু করে রূপ দিই দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন এমন একদিন আসে যেদিন আমি আমার দলের লোকদের জিজ্ঞেস করি, আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে, পাক বাংলা। কেউ বলে, পূর্ব বাংলা। আমি বলি, না বাংলাদেশ। তারপর আমি শ্লোগান দিই, ‘জয়বাংলা’।... ‘জয় বাংলা’ বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলুম বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির জয় বা সাম্প্রদায়িতকার উর্ধ্বে।’’ [বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন, মাওলা ব্রাদার্স]

১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক জানান, ‘সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করলেন সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’ ভাষা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বললেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক। এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।’ [সূত্র : ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গাজীউল হক; ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪]

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রীয়তায় প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবির মধ্যে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার ও সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের নিয়োগ এবং বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষার দাবি ছিল অন্যতম দাবি। ১৩ জানুয়ারি রমনার বর্ধমান হাউজে মুসলিম লীগের পার্টি বৈঠকে যোগ দেন শেখ মুজিবসহ ছাত্রদের একাংশ। ওই বৈঠক নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে [ভলিউম-১, পৃ. ৪] বলা হয়: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবসহ অন্য ছাত্ররা একটি বুকলেট বিতরণ করে। যাতে লেখা ছিল- পূর্ব পাকিস্তানের দূর্ভাগা জনতা, কৈফিয়ত দিতে হবে আমাদের।’

[Some unknown workers of Eastern Pakistan Muslim League workers camp sold booklets @3/- each entitled ‘পূর্ব্ব-পাকিস্তানে দুর্ভাগা জনসাধারণ কৈফিয়ত দিতে হবে আমাদের দাবী’, Published by Sk. Mujibar Rahman, B.A. and Naimuddin Ahmed, B.A. (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-4)]

২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তমদ্দুন মজলিস প্রধান অধ্যাপক আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে এক সমাবেশ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে দলে দলে এ সমাবেশে যোগদান করেন। এই মিছিলের সমগ্র ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালনায় শেখ মুজিব বলিষ্ঠ নেতৃত্বদান করেন। [সূত্র : ভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৯-২০]

১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। এই সভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহম্মদ তোয়াহা, আবুল কাসেম, রণেশ দাশগুপ্ত, অজিত গুহ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সভায় গণপরিষদ সিদ্ধান্ত ও মুসলিম লীগের বাংলা ভাষা-বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এতে গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিস, ছাত্রাবাসগুলোর সংসদ প্রভৃতি ছাত্র ও যুব প্রতিষ্ঠান দুজন করে প্রতিনিধি দান করে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। এই সংগ্রাম পরিষদ গঠনে শেখ মুজিব বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন।

গোপন নথিতে ৩ মার্চ লালবাগ থানায় এক প্রতিবেদনে [ভলিউম-১, পৃ ৫] বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানে স্বাক্ষর করা একটি লিফলেট ছাড়া হয়েছে। যাতে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে কেন আলাদা ছাত্রলীগ গঠন করা হয়েছে।’

[A search statement was prepared by an SI of Lalbagh P.S., Dacca on 3.3.1948, where he listed a Bengali Leaflet entitled ‘An Appeal to Eastern Pakistan’, The Leaftet explained the necessity of the formation of EPMSL after the partition of Bengal…It was published under the signature of Sheikh Mujibur Rahman. (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-5)] 

৪ মার্চ ঢাকা জেলা গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করেছে তারাই বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লিফলেট ছড়াচ্ছে।’ [ভলিউম-১, পৃ ৭]

৩ মার্চ গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের সম্মেলনে বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে কথা বলেন। গোপন নথিতে এ সম্পর্কে বলা হচ্ছে: Sheikh Mujibur Rahman & other leaders delivered speeches in a meeting of the students over the Language Movement, which was held at the premises of the court mosque, Gopalganj on 3.3.1948. [ভলিউম-১, পৃ ৩৪০]

[DIO, IBEB, Dacca submitted a report containing the particulars of the members of the provisional organizing committee of EPMSL including the name of Sheikh Mujibur Rahman, who was one of the signatories of the leaflet which advocated Bengali to be the State Language of Pakistan. (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-7)]

আমরা জানি, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এই ধর্মঘট সফল করতে ১ মার্চ, ১৯৪৮ তারিখে প্রচার মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিস সম্পাদক), শেখ মুজিবুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য), নঈমুদ্দীন আহমদ (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক) এবং আবদুর রহমান চৌধুরী (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যুব সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা) জাতীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে এ বিবৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।

এই ধর্মঘট পালনের আগের রাতে অর্থাৎ ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে দিনটির কর্মসূচি নিয়ে এক সভা বসে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে:

Secret information was received on 12.3.48 that the subject (Sheikh Mujibur Rahman) along with others took part in the discussions held at Fazlul Haq Hall on 10.3.48 and gave opinion in favour of violating section 144 cr.p.c. on 11.3.48.

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পালিত এই ধর্মঘটটি ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সফল ধর্মঘট। এই ধর্মঘটে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে:

[IB report on Sheikh Mujinur Rahman, who was arrested on 11.3.1948… This subject (Sheikh Mujibur Rahman) was arrested on 11.3.48 for violating the orders…He took very active part in the agitation for adopting Bengali as the State language of Pakistan, and made the propaganda at Dacca for general strike on 11.3.48 on this issue. (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-7)]

দিনটি নিয়ে ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বঙ্গবন্ধু জানাচ্ছেন: ‘প্রথম ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (এখন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ) ও তমদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে। ঐদিন ১০টায় আমি, জনাব শাসমুল হক সাহেবসহ প্রায় ৭৫ জন ছাত্র গ্রেপ্তার হই এবং আবদুল ওয়াদুদ-সহ অনেকেই ভীষণভাবে আহত হয়ে গ্রেপ্তার হয়।’ [কারাগারের রোজনামচা, বাংলা একাডেমি, পৃ ২০৬]

ভাষাসৈনিক অলি আহাদ তাঁর ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন: ‘আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন।’ ১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচিতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল ও কর্মসূচি তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে। মোনায়েম সরকার সম্পাদিত বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এটিই তাঁর প্রথম গ্রেপ্তার।’

শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জে সর্বাত্মক হরতাল ডাকা হয়। এ নিয়ে ৩ এপ্রিল গোয়েন্দাদের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ মার্চ গোপালগঞ্জে প্রায় চারশ ছাত্র বিক্ষোভ করে। তারা সেই বিক্ষোভ থেকে ১৬ তারিখে শহরে দিনব্যাপী হরতাল ডাকে। তারা শেখ মুজিবুরের মুক্তির দাবিতে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান দেয়। [ভলিউম-১, পৃ ৮-৯]

[Extract from WCR of SP office, Faridpur, where it was mentioned that a complete hartal was announced at Gopalganj town on 16.3.1948 as a mark of protest against the arrest of Sheikh Mujibur Rahman. (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-8)]

এই অংশে বিবৃতির নিচে ‘সাইড নোট’ লিখে ফের বলা হচ্ছে: Was Muzibar Rahman arrested in Dacca city in connection with the language controversy? Why did the Gopalganj students take up his cause? Ask Faridpur to clarify the latter point., Sd. S.K.G, 16/17.4.38

১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ-এর সঙ্গে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে আট দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে জেলখানায় আটক ভাষা আন্দোলনের কর্মী রাজবন্দিদের চুক্তিপত্রটি দেখানো হয় এবং অনুমোদন নেয়া হয়, অনুমোদনের পর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। কারাবন্দি অন্যদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও চুক্তির শর্ত দেখেন এবং অনুমোদন প্রদান করেন। এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে সর্বপ্রথম বাংলাভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল এবং চুক্তির শর্ত মোতাবেক বঙ্গবন্ধুসহ অন্য ভাষাসৈনিকরা কারামুক্ত হন।

১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে এক সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পূর্ববাংলা আইন পরিষদ ভবন অভিমুখে এক মিছিল বের হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ লিখেছেন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেলা দেড়টায় সভা শুরু হলো। মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করলেন। সংশোধনীগুলি গৃহীত হলো এবং অলি আহাদের মাধ্যমে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হলো। [তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি ১৯৪৭-১৯৪৮, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৩০]

বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকেও পাওয়া যায়: ‘১৬ই মার্চ আবার বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় সভা হয়, আমি সেই সভায় সভাপতিত্ব করি। আবার বিকালে আইনসভার সামনে লাঠিচার্জ হয় ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়। প্রতিবাদের বিষয় ছিল, ‘নাজিমুদ্দীন সাহেবের তদন্ত চাই না, জুডিশিয়াল তদন্ত করতে হবে।’ [কারাগারের রোজনামচা, পৃ. ২০৬]

মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় বেশ কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধুর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘এমএলএ-দের বিরুদ্ধে মোটামুটিভাবে বিক্ষোভ হয়। তাদের গালাগালি ও অনেকক্ষেত্রে মারধর করা হয়। মোয়াজ্জেম ডাক্তার নামে বাগেরহাটের এক এমএলএ-কে ধরে নিয়ে মুসলিম হলে ছাত্ররা আটক করেছিল। সেখানে গিয়ে আমি তাঁকে ছাড়াই। শওকত সেদিন সন্ধ্যা বেলায় বেশ আঘাত পায় পুলিশের হাতে।’ [সূত্র : ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ- কতিপয় দলিল, ২য় খণ্ড, কৃত- বদরুদ্দীন উমর : ঢাকা, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৫ : পৃ. ৩২৫]

১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে নঈমুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় শেখ মুজিব অংশগ্রহণ করেন। [জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫- অলি আহাদ]। ‘১৭ তারিখ এ দেশব্যাপী শিক্ষায়তনে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সেই ধর্মঘট অপভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ১৭ মার্চ সন্ধ্যার পর ফজলুল হক হলে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র সভা অনুষ্ঠিত হয়, এই সভায় শেখ মুজিবুর রহমান যোগদান করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে তিনি এ সভার উল্লেখ করেছেন।

১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে এসে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তার দীর্ঘ বক্তৃতায় রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়।’ সভার এক প্রান্ত থেকে যে প্রতিবাদের ধ্বনি ওঠে সেখানে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধুসহ তাজউদ্দীন আহমদ ও আবদুল মতিন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু জানান, ‘‘জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানে এসে ঘোড়দৌড় মাঠে বিরাট সভায় ঘোষণা করলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’ আমরা প্রায় চার-পাঁচ শত ছাত্র এক জায়গায় ছিলাম সেই সভায়। অনেকে হাত তুলে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিল, ‘মানি না।’’ [পৃ. ৯৯]

কারাগারের রোজনামচা-তেও বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘‘তিনি (জিন্নাহ) এসে ঘোষণা করলেন, ‘উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’  ছাত্ররা তার সামনেই প্রতিবাদ করল।... যতদিন বেঁচে ছিলেন এরপর কোনোদিন ভাষার ব্যাপারে কোনো কথা বলেন নাই।’’ [২০৬]

জিন্নার বক্তৃতার কয়েকদিন পর ফজলুল হক হলের সামনে একজন ছাত্রনেতা উর্দুভাষার পক্ষে বক্তৃতা দিলে শেখ মুজিবুর রহমান তীব্র প্রতিবাদ জানান। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে আমরা জানতে পারি: ‘জিন্নাহ চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর ফজলুল হক হলের সামনে এক ছাত্রসভা হয়। তাতে একজন ছাত্র বক্তৃতা করছিল, তার নাম আমার মনে নাই। তবে সে বলেছিল, ‘জিন্নাহ যা বলবেন তাই আমাদের মানতে হবে।’... আমি তার প্রতিবাদ করে বক্তৃতা করেছিলাম, আজও আমার এই কথাটা মনে আছে। আমি বলেছিলাম, কোনো নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তা প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে।... বাংলা ভাষা শতকরা ছাপান্নজন লোকের মাতৃভাষা, পাকিস্তান গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সংখ্যাগুরুদের দাবি মানতেই হবে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। তাতে যাই হোক না কেন, আমরা প্রস্তুত আছি। সাধারণ ছাত্ররা আমাকে সমর্থন করল। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবকরা ভাষার দাবি নিয়ে সভা ও শোভাযাত্রা করে চলল।’’ [পৃ. ৯৯-১০০]    

রাস্তায়, দেয়ালে-দেয়ালে পোস্টার ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবি আদায়ের জন্য ভাষা সংগ্রাম কমিটি অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে লাগলো। এই ভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্কে যাঁরা নিরলস কাজ করেছেন সেই সব ছাত্রনেতার মধ্যে মুজিব ছিলেন অন্যতম। শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৯ সালে দুবার গ্রেপ্তার হন।

১৯৪৮ সালের ১৩ই আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান দৈনিক ইত্তেহাদে ‘ছাত্র সম্প্রদায়ের কর্ত্তব্য’ শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিটি পেপারের ছবিসহ সিকরেট দলিলে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিবৃতির একটি অংশে ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ মুজিবুর রহমান লেখেন: ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম ছাত্র সমাজের উপর এবং আরও কতিপয় ক্ষেত্রে জনতার উপর লাঠী চার্জ্জ, কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার ও গুলী চালনা করিয়া তারা আজাদীকে কলঙ্কিত করিয়াছে। [ভলিউম-১, পৃ ৪৪]

১৯৪৮ সালে ১১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন লিয়াকত আলী খান। তার প্রথম পূর্ববাংলা সফরকে কেন্দ্র করে ‘১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি বৈঠক বসে। আজিজ আহমদ, আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহমদ, আব্দুল মান্নান, আনসার ও তাজউদ্দীনসহ উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।’ [বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, প্রথম খণ্ড, সুবর্ণ সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৭, পৃ. ১২৬৪] 

ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ‘জুলুম প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়। ১৯৪৯ সালের ৮ জানুয়ারি এই কমিটির উদ্যোগে প্রতিরোধ কর্মসূচি ও ছাত্রসমাবেশ ডাকা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ছাত্রসভায় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাইমউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ নিয়ে বলা হয়েছে: ‘In connection with the observance of the Anti-repression Day at Dacca on 8.1.49 the subject (Sheikh Mujinur Rahman) bitterly criticized the Government for it’s alleged repressive measures against the students and suggested Direct Action it the demands of the students were not met.’ [V-1, P. 319]

১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি গোপন দলিলের ২৭ নাম্বার ভুক্তিতে দেখা যায় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ ও চালু করার বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর একাধিক ভাষণে জোর দিয়েছেন।

[Addenda to the Brief history of Sheikh Mujibur Rahman, sent from SP, DIB Khulna to IBEB, Dacca, where a number of political activities of Sheikh Mujibur Rahman were mentioned. It was also reported that he delivered speeches demanding to adopt Bengali as court language…(Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-66)]

গোপন দলিলের ৪০ নাম্বার ভুক্তিতে উল্লেখ আছে, ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ সদরঘাট থেকে প্রায় দুইশজন ছাত্রের অংশগ্রহণে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে শেখ মুজিবুর রজমান, দবিরুল ইসলাম ও কল্যাণ দাস ‍গুপ্ত নওয়াবপুর রোড হয়ে দুপুর ১২টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আসেন। তার এক ঘণ্টা পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা জমায়েত হয়।

গোপন নথিতে প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে এভাবে: Report of a procession brought out Sheikh Mujibur Rahman at Nowabpur road & Sadarghat area on 12.3.1949. A meeting of students held at Dacca University ground. Nadira Begum & other student leaders spoke in the meeting. All of them delivered their speeches in support of Bengali as state Language… …[Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-101]

গোপন নথির ৪৪ নাম্বার ভুক্তিতে উল্লেখ আছে: Daliy intelligence report of DIB, Dacca, no, 32 & 35 dated respectively 4.3.1949 & 13.3.1949. It was mentioned in the reports about holding of different meetings & procession of DU students, some boys & girls of different schools of Dacca led by Sheikh Mujibur Rahman & DU students protested against the Govt. policy of proposed introduction of Arabic script in East Bengal & placing armed Police pickets at the University.…[Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-109]

গোপন নথিতে ৬৯ নাম্বার ভুক্তিতে ১৯৪৯ সালের ৯ মে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে একটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুরে ২৯শে মার্চের মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের বাংলায় আরবি স্ক্রিপ্ট চালু করার প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে সরব হতে আহ্বান জানান। [ভলিউম-১, ভুক্তি ২৮, পৃ ১৫৩]

গোপন নথির ১৫৪ নাম্বার ভুক্তিতে ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সার্বিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর গোয়েন্দা নজরদারির সারবস্তু তুলে ধরা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘He (Sheikh Mujibur Rahman) took a very active part in the agitation for adopting Bengali as the State language of Pakistan, and made propaganda at Dacca for general strike on 11.3.48. on this issue. On 11.3.48 the subject was arrested for violating orders under section 144 Cr. P.C. [Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-319]

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন। ফলে এ সংগ্রামে শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসে নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: ‘১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে জেলে থেকেই তিনি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।’ ‘[গাজীউল হক, আমার দেখা আমার লেখা, পৃষ্ঠা-৪০]

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই স্বীকার করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে এবং পরে হাসপাতালে থাকাকালীন আন্দোলন সম্পর্কে চিরকুটের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাতেন। ভাষাসৈনিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ‘একুশকে নিয়ে কিছু স্মৃতি, কিছু কথা’ প্রবন্ধে বলেছেন: শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ ফরিদপুর জেলে যাওয়ার আগে ও পরে ছাত্রলীগের একাধিক নেতার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছেন।’[তথ্যসূত্র : ভালোবাসি মাতৃভাষা- পৃষ্ঠা: ৬২]

পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকেও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি। ১৯৫১ সালের ১৩ই নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ঐদিন সকাল নটায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আনোয়ারা বেগম এমএনএ, খয়রাত হোসেন এমএনএ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আহমদ হোসাইনসহ ৩০জনের মতো মেডিকেল ছাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। [ভলিউম-২, পৃ. ১১৬]

এরপর প্রতিবেদনের আরেকটি জায়গায় বলা হচ্ছে যে, ১৯৫১ সালের ৩০ নভেম্বর সকাল ৯.১৫-তে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান ও জনৈক নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা সেখানে ৩০ মিনিট আলাপ করেন। [ভলিউম-২, পৃ. ১২৩]   

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকা সফরকালে পল্টন ময়দানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে পূর্ববঙ্গে প্রতিরোধের ঝড় ওঠে। বন্দি অবস্থাতেই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের আলোচনা হয় পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন: (খাজা নাজিমুদ্দীনের ঘোষণার পর) দেশের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হল। তখন একমাত্র রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ছাত্র প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ এবং যুবাদের প্রতিষ্ঠান যুবলীগ সকলেই এর তীব্র প্রতিবাদ করে। আমি হাসপাতালে আছি। সন্ধ্যায় মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদ দেখা করতে আসে। আমার কেবিনের একটা জানালা ছিল ওয়ার্ডের দিকে। আমি ওদের রাত একটার পরে আসতে বললাম। আরও বললাম, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহাবুব আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে খবর দিতে। দরজার বাইরে আইবিরা পাহারা দিত। রাতে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন পিছনের বারান্দায় ওরা পাঁচ-সাতজন এসেছে। আমি অনেক রাতে একা হাঁটাচলা করতাম। রাতে কেউ আসে না বলে কেউ কিছু বলত না। পুলিশরা চুপচাপ পড়ে থাকে, কারণ জানে আমি ভাগব না। গোয়েন্দা কর্মচারী একপাশে বসে ঝিমায়। বারান্দায় বসে আলাপ হল এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও খবর দিয়েছি। ছাত্রলীগই তখন ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ নেতারা রাজি হল। অলি আহাদ ও তোয়াহা বলল, যুবলীগও রাজি হবে। আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে। নাজিমুদ্দীন সাহেব উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথাই বলেন নাই, অনেক নতুন নতুন যুক্তিতর্ক দেখিয়েছেন। অলি আহাদ যদিও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্য হয় নাই, তবুও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই শ্রদ্ধা করত ও ভালবাসত। আরও বললাম, খবর পেয়েছি, আমাকে শীঘ্রই আবার জেলে পাঠিয়ে দিবে, কারণ আমি নাকি হাসপাতালে বসে রাজনীতি করছি। তোমরা আগামীকাল রাতেও আবার এসো। আরও দু’একজন ছাত্রলীগ নেতাকে আসতে বললাম। শওকত মিয়া ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীকেও দেখা করতে বললাম। পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসল। সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি করা শুরু হবে। [পৃ. ১৯৬-৯৭]

জাতীয় নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিবৃতি দেন। সোহরাওয়ার্দী এই অবস্থানে দৃঢ় থাকলে ভাষা আন্দোলনে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারত (সূত্র : একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক, ড. মোহাম্মদ হান্নান, পৃ. ৫৩)। শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দীর এই মত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তাঁর সমর্থন আদায় করেন। এই প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সে সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষা সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা বেশ অসুবিধায় পড়ি। তাই ঐ বছর জুন মাসে আমি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য করাচি যাই এবং তার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বাংলার দাবির সমর্থনে তাকে একটি বিবৃতি দিতে বলি।’ [তথ্যসূত্র : পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি- ৩য় খণ্ড, বদরুদ্দীন উমর, পৃষ্ঠা-৩৯৬]

শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিটি ১৯৫২ সালের ২৯ জুন সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার পক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে মুজিব সক্ষম না হলে শুধু ভাষা আন্দোলন নয়— আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তো।’

২৭ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের জেলা ও মহকুমা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আতাউর রহমান খান ওই সভায় সভাপতিত্ব করার সময় অসুস্থতাবশত এক পর্যায়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে সভাপতির লিখা ভাষণ পাঠ করেন কমরুদ্দীন আহমদ। ওই প্রতিনিধিত্ব সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম বার্ষিকী পালনেও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল। সে দিন সব আন্দোলন, মিছিল এবং নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণের পর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সমকালীন রাজনীতি এবং বাংলা ভাষার উন্নয়নে অবদান রাখেন।

১৯৫৬ সালের ১৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু সংসদের দৈনন্দিন কার্যসূচি বাংলা ভাষায় মুদ্রণ করার দাবি জানান। একই সালের ৭ ফেব্রুয়ারির অধিবেশনে তিনি খসড়া শাসনতন্ত্রের অন্তর্গত জাতীয় ভাষা সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ববঙ্গে আমরা সরকারি ভাষা বলতে রাষ্ট্রীয় ভাষা বুঝি না। কাজেই খসড়া শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ভাষা সম্পর্কে যে সব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা কুমতলবে করা হয়েছে। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ৫৬ ভাগ লোকই বাংলা ভাষায় কথা বলে, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রশ্নে কোনো ধোঁকাবাজি করা যাবে না। পূর্ববঙ্গের জনগণের দাবি এই যে, বাংলাও রাষ্ট্রীয় ভাষা হোক। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের আইন সভার অধিবেশনেও তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।’ [সূত্র : ভালোবাসি মাতৃভাষা-ভাষা-আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি স্মারকগ্রন্থ-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মার্চ ২০০২, পৃ. ১৮২-১৯১]

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা ভাষাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ