• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মানুষের যেসব কাজ সবসময় নিষিদ্ধ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২০  

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- অনর্থক ও বাজে কথা বলা, বিনা প্রয়োজনে কোনো জিনিস নষ্ট বা অপচয় করা এবং বেশি প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ করা।’(বুখারি)

হাদিসে ঘোষিত এ কাজগুলো কোনো সময়ই করা যাবে না। মানুষের জন্য সব সময়ই তা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে অন্যতম ও দ্বিতীয় হলো- বিনা প্রয়োজনে কোনো জিনিস নষ্ট করা। বিনা কারণে কোনো জিনিস নষ্ট করাই হলো অপচয়।

স্বাভাবিকভাবে মানুষ এমন অনেক কাজ করে, যা না করলেও চলে। যাতে ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার নেই। অপচয় তেমনি একটি কাজ। এ অপচয়ের মধ্যে অন্যতম হলো- অহরহ পানির অপচয়, গ্যাস, বিদ্যুত, খাবার কিংবা সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদিও এর অন্তর্ভূক্ত। যা অপচয়ে মানুষ বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। সুতরাং যেসব জিনিসের অপচয় সব সময় নিষিদ্ধ, তাহলো-

- পানির অপচয়
পানি মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। এমন একটা সময় আসবে যখন ব্যবহারযোগ্য পানি সহজে পাওয়া যাবে না। সে সময় পানির জন্যও দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ বেঁধে যাবে। তাই বাসা-বাসি কিংবা অফিস-আদালত; কোথাও পানির অপব্যবহার ও অপচয় করা যাবে না। পানির অপচয় মারাত্মক অন্যায়ও বটে। হাদিসে এসেছে-
'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তুমি সাগর পাড়েও বসে থাক আর অতিরিক্ত পানির ব্যবহার কর; তাও অপচয় হবে।'

- গ্যাসের অপচয়
গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ। মহান আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে অন্যতম একটি। গ্যাসের মিটার পদ্ধতি না থাকার করণে সামান্য একটি দিয়াসলাইয়ের কাঠি বাঁচাতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পোড়াতেও চিন্তা করে না কেউ। এভাবে অহরহ গ্যাস পোড়ানোও অপচয় তথা মারাত্মক অন্যায়। এ ছাড়া মাসভিত্তিক মূল্য নির্ধারিত হওয়ার কারণেই চলছে গ্যাসের এ অপচয়। গ্যাসের এ অপচয় করাও ইসলামে নিষিদ্ধ।

- বিদ্যুতের অপচয়
সচেতনতার অভাবে এখনও রোধ হয়নি বিদ্যুতের অপচয়। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট এমনটি করিডোর কিংবা টয়লেটেও জলছে বৈদ্যুতিক বাতি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অকারণে ঘুরছে পাখা। যার ফলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত হচ্ছে অপচয়। এ অপচয় যেমন একদিকে অর্থের অপচয় তেমনি যারা এখনও বিদ্যুত সুবিধা পায়নি তারাও হচ্ছে বঞ্চিত। তাই এ অপচয় ইসলামে নিষিদ্ধ।

- খাবারের অপচয়
ফ্যাশন কিংবা সামাজিকতার নামে লোক-লজ্জার কারণে যে কোনো ঘর ও বাইরের অনুষ্ঠানে কিংবা দোকানে অহরহ নষ্ট হয় অনেক খাবার। অথচ ইচ্ছাকৃত যে কোনো হালাল খাবার নষ্ট করা ইসলামে নিষিদ্ধ বা গোনাহের কাজ। অবার ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক বাসা-বাড়িতেও অহরহ খাবার নষ্ট হয়। খাবার নষ্ট না করতে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘আর তোমরা খাও এবং পান কর। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)

- সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য্যের অপচয়
সাজসজ্জা, ফ্যাশন, আধুনিক রুচিবোধ কিংবা সুন্দরের নামে পোশাকের অপব্যবহার কিংবা অপচয় মহামারি আকার ধারণ করেছে। আবার শারিরীক সৌন্দর্য বাড়াতে পোশাকের নামে মানুষ যে সব কাপড় কিনে থাকে কিংবা পরে থাকে, যেগুলোর ক্ষতিই বেশি। আভিজাত্যের দোহাই দিয়ে সুন্দর ও ভালো পোশাকগুলোও অনেক সময় মাত্র দু/এক বার পরে থাকে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অসংখ্য মানুষ আছে, যারা অর্থের অভাবে নতুন পোশাক পরতে পারে না। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরনো কাপড়গুলো গরিবদের দান করতে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরবে, তার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে পুরাতন কাপড়টি গরিব ব্যক্তিকে দান করে দেবে।' (তিরমিজি)

সর্বোপরি কথা হলো হাদিসে ঘোষিত সব সময় নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা ঈমানের একান্ত দাবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত ৩ কাজসহ অপচয়ের ক্ষেত্রে নিত্যদিনের এসব গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, পোশাক ও খাবার-দাবারের অপচয় থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ