• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মাশরাফির কাল্পনিক সাক্ষাৎকার

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

মাশরাফি বিন মুর্তজা আমাদের কালের নায়ক। খেলার মাঠে বারবার আহত হয়েছেন তিনি, তাঁর হাঁটু ফালা ফালা হয়েছে সার্জনের কাঁচির নিচে, আবার ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কোটি তরুণের কাছে তাঁর পরিচয় ‘বস’, ‘ভাই’। সেই নায়ক ভোটে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ যেন আহত না হন, মনেও আঘাত না পান।’

তো ধরা যাক, আমরা সেই মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করলাম, ক্রিকেটের সঙ্গে ভোটের তথা রাজনীতির মিল-অমিল নিয়ে। তিনি কী জবাব দিতে পারতেন, কল্পনা করা যাক। আবারও বলছি, লেখাটা পুরোপুরি কাল্পনিক।

প্রশ্ন: ক্রিকেট এবং রাজনীতির অমিল কোথায়? 
উত্তর: ক্রিকেট মাঠে কট বিহাইন্ড হলে আউট।

প্রশ্ন: ক্রিকেটে এবং ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে কী হয়? 
উত্তর: টসে জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে নির্বাচন কেন ভারতের মতো কয়েক দিন ধরে হয় না? 
উত্তর: কারণ, বাংলাদেশ ওডিআইতে বেশি ভালো।

প্রশ্ন: খেলা থেকে আমরা কী শিখি? 
উত্তর: জয়-পরাজয় নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা।

প্রশ্ন: আম্পায়ারিংয়ে ভুল হলে খেলোয়াড়দের করণীয় কী? 
উত্তর: আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাই মেনে নেওয়া।

প্রশ্ন: আম্পায়ার কখন টেলিভিশন রিপ্লে কল করেন? 
উত্তর: যখন কোনো দলের ক্যাপ্টেন রিভিউর আবেদন করেন। এ ছাড়া নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি নিজেও কতগুলো ক্ষেত্রে হাত দিয়ে শূন্যে বর্গক্ষেত্র বানিয়ে টিভি রিভিউর সংকেত দেন।

প্রশ্ন: ক্রিকেট থেকে টিভি রিভিউর বেলায় আমাদের শিক্ষণীয় কী? 
উত্তর: মাঠের দর্শকদের বিতর্কিত রিভিউ দেখাবেন না।

প্রশ্ন: ক্রিকেট ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী? 
উত্তর: জনগণের ভোটে ফল নির্ধারণ ক্রিকেটে হয় না। খেলোয়াড়দের খেলে জয়লাভ করতে হয়।

প্রশ্ন: ক্রিকেট এবং ভোটের মধ্যে মিল কী? 
উত্তর: খেলা যখন অনিশ্চয়তাময়, তখনই তা গৌরবময়।

প্রশ্ন: ক্রিকেট বল আর জনগণের মধ্যে মিল কী? 
উত্তর: যে পক্ষই বল করুক না কেন, বল কেবল মারই খায়।

প্রশ্ন: বিপিএল আর ভোটের মধ্যে মিল কী? 
উত্তর: খেলোয়াড় কেনাবেচা করা যায়। দলবদল বৈধ।

প্রশ্ন: ক্রিকেট আর রাজনীতিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা কী? 
উত্তর: খেলার আগে প্রিভিউ আর খেলার পরে রিভিউ করা। কিন্তু লেখা দিয়ে খেলার ফল বদলানো যায় না।

প্রশ্ন: বিপিএল, আইপিএল থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? 
উত্তর: ক্রিকেট মাঠে সিনেমার তারকারা ঢুকে পড়েছেন।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের দর্শকের সঙ্গে রাজনীতির ভোটারদের মিল কী? 
উত্তর: জিতলে ক্রিকেটাররা টাকাপয়সা পান। ফ্ল্যাট পান। কারও কারও দাম কোটি কোটি টাকা ওঠে। দর্শকেরা শুধু হাততালি দিয়েই খুশি। প্রিয় দল হেরে গেলে তারা চোখের জল ফেলে। জিতলে মিষ্টি বিতরণ করে। দিন শেষে দর্শকেরা আর কিছুই পায় না। কিন্তু দলের জয়ই তারা নিজেদের জয় বলে গণ্য করে। তাই ক্রিকেট আর ভোট—এই দুই নিয়েই মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই।

প্রশ্ন: কোচ আর অধিনায়কের মধ্যে পার্থক্য কী? 
উত্তর: ফুটবলে দল হেরে গেলে কোচের চাকরি যাবেই। কিন্তু হেরে গেলেও ক্যাপ্টেনের চাকরি না-ও যেতে পারে। আর ক্রিকেটে দল হেরে গেলে ক্যাপ্টেন বদল হয়। কোচ বহাল তবিয়তে থাকেন।

প্রশ্ন: রাজনীতি আর ক্রিকেটের মধ্যে যে পার্থক্য আগে ছিল এখন নেই। 
উত্তর: ক্রিকেট ছিল রাজার খেলা, আর খেলার রাজা। রাজনীতি ছিল রাজার নীতি নয়, নীতির রাজা।

প্রশ্ন: হাতে তেল মাখালে কী হয়? 
উত্তর: ক্রিকেটে ক্যাচ ড্রপ হয়, রাজনীতিতে উন্নতি হয়।

প্রশ্ন: ক্রিকেট আর রাজনীতি দুইটাই যিনি ভালো বোঝেন, তাঁকে কী বলা হয়? 
উত্তর: টক শোর আলোচক।

প্রশ্ন: ক্রিকেট মাঠের আর ভোটের মাঠের দর্শকদের একটা প্রধান পার্থক্য কী? 
উত্তর: ভোটকেন্দ্র থেকে ফেরার পর হাতে অমোচনীয় কালি লেগে থাকে।

প্রশ্ন: ক্রিকেটারদের বউ আর রাজনীতিবিদদের বউয়ের মধ্যে পার্থক্য কী? 
উত্তর: রাজনীতিবিদের বউয়েরা ইলেকশন করতে পারেন, কিন্তু ক্রিকেটারদের বউয়েরা স্বামীর পজিশনে খেলার সুযোগ পান না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে ক্রিকেটে আর রাজনীতিতে জেন্ডার ভারসাম্য নিয়ে কিছু বলুন। 
উত্তর: বাংলাদেশে উভয় ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে ভালো করছেন।

প্রশ্ন: দেশপ্রেম বিষয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাটা কি রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? 
উত্তর: আমি বলেছিলাম, সবাই ক্রিকেটে কেন দেশপ্রেম খোঁজে। আসল দেশপ্রেমিক হলেন মুক্তিযোদ্ধারা, যে কৃষকেরা কষ্ট করে অন্ন জোগান, তাঁরা; যে শ্রমিকেরা চাকা ঘোরান, তাঁরা। ডাক্তাররা, ইঞ্জিনিয়াররা। ক্রিকেটাররা খেলেন, টাকা পান। আসলে ক্রিকেটে দেশপ্রেম না খুঁজে সবাই যদি যাঁর যাঁর কাজটা ঠিকভাবে করেন, তাহলেই কিন্তু দেশ উন্নত হয়ে যায়। একই কথা রাজনীতিবিদেরাও বলতে পারেন, ভাই, আপনারা কেন আমাদের দেশপ্রেমিক হতে বলছেন। আপনারা নিজেরা দেশপ্রেমিক হন। নিজের কাজ ভালো করে করেন। সবাই নিজের কাজ ভালো করে করছেন বলেই দেশ এত উন্নতি করছে।

প্রশ্ন: রাজনীতি আর ক্রিকেট নিয়ে একটা কমন প্রবাদ বলুন। 
উত্তর: রাজনীতি আর ক্রিকেটে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আজকে যে আবাহনী, কালকে সে কলাবাগান।

প্রশ্ন: স্লেজিং নিয়ে কিছু বলেন। 
উত্তর: ওটা খেলারই অংশ।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার মাথাব্যথা বিষয়ে কী বলবেন? 
উত্তর: বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রিকেটের মতো নয়, আমেরিকান ফুটবল বা রাগবির মতো। আমেরিকানরা হাত দিয়ে ফুটবল খেলে থাকে। তাদের মাথায় থাকে হেলমেট। একটা বল নিয়ে কাড়াকাড়ি, মারামারি হয়, আবার বলটা ওরা ছুড়েও মারে। প্রচণ্ড শক্তির খেলা। আমরা টিভিতে এই খেলা হতে দেখি, কিন্তু কিছুই বুঝি না।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতির একটা তুলনা, প্রতি–তুলনা করুন। 
উত্তর: ক্রিকেট মাঠের ট্র্যাজেডি হলো উইকেটরক্ষক উইকেট ভেঙে ফেলেন। আর রাজনীতিতেও...

প্রশ্ন: দর্শক কিংবা জনগণের উদ্দেশে কিছু বলুন। 
উত্তর: আমাদের দর্শকেরাই এই দেশের ক্রিকেট বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা খারাপ করেছিলাম, কিন্তু দর্শকেরা আশা ছাড়েননি। আমাদের দেশটাকেও বাঁচিয়ে রাখবে এ দেশের জনগণ। মানুষের ওপর থেকে আস্থা হারাবেন না।

প্রশ্ন: নির্বাচনের ফল কী হবে বলে আশা করছেন? 
উত্তর: আমরা জয়ের জন্য খেলব। এক পক্ষ জিতবে, এক পক্ষ হারবে। তবে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে বাংলাদেশ।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ