• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পে স্বাবলম্বী পাহাড়ের প্রান্তিক চাষীরা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২০  

পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘মিশ্র ফল বাগান প্রকল্প’। এক সময়ের পরিত্যক্ত ও অনাবাদি পাহাড়ের ঢালু জমিতে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই সহস্রাধিক মিশ্র ফলের বাগান। এতে একদিকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ। বাগানের উৎপাদিত বিভিন্ন ফল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

২০১৬-১৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে শুরু করা হয় মিশ্র ফল বাগান প্রকল্প। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় টেকসই জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তিন পার্বত্য জেলায় ৫ হাজার দরিদ্র কৃষক পরিবারকে অর্ন্তভূক্ত করে মিশ্র ফল বাগান সৃজনের মাধ্যমে তাদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নেন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

এই প্রকল্পের একজন উপকারভোগী কৃষকের নাম মৃদুল কান্তি ত্রিপুরা। তার পরিত্যক্ত দেড় একর উঁচু টিলা ভূমিতে সৃজিত এ বাগানে লাগানো হয়েছে মাল্টা, লিচু পেঁপের পাশাপাশি আম্রপালি আমের চারা। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৬ মাইল এলাকায় বাগানটিতে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে পাহাড়ি সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির আম। ১০০ আমের চারার এই বাগানে ফলন হয়েছে ১৫ মণেরও বেশি। এই মিশ্র ফল বাগানটিই একমাত্র সম্বল তার। এবার আমের ফলন ভালো হওয়ায় অধিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। একইভাবে চলতি বছরে মাল্টা, পেঁপে ও লিচু বিক্রি করে বাগান থেকে তিনি আয় করেছেন প্রায় দু’লাখ টাকা। যা দিয়ে তার সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ যোগাচ্ছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মদন চাকমা জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক চাষীদের বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলের চারা, প্রশিক্ষণ, সার বিতরণসহ উপকারভোগীদের বাগান নিয়মিত মনিটরিং ও তদারকি করছি আমরা।

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্ত্তুজ আলী বলেন, এর সাথে কৃষি বিভাগকে সম্পৃক্ত করা গেলে আরও বেশি সুফল ভোগ করবেন কৃষকরা।

প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে সমতল জমির অভাবে এখানে ফসল আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। কিন্তু ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায় এখানকার অনাবাদি ও পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে ফলদ বাগান ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় ‘মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে আসছে উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলায় ১ হাজার ৮’শ ২৫টি ও অন্য দুই জেলায় ৩ হাজার ১২৫টি মিশ্র ফল বাগান করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, মিশ্র ফল বাগান প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো ৫ হাজার দরিদ্র কৃষক পরিবারকে অর্ন্তভূক্ত করে মিশ্র ফল বাগান সৃজনের মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া উদ্যান উন্নয়ন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ৫ হাজার কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষকদের ফল বাগান সৃজনে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা, কৃষকের নার্সারি ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা করা এবং ১২৫টি মার্কেট শেড নির্মাণ ও পানির উৎস উন্নয়নের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা।

বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ উদ্যান ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য শতভাগ বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে পরিপূর্ণ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ