মুক্তিযুদ্ধের গল্প: ঘরপালানো এক শিশুর কাহিনী
দৈনিক গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮
গ্রামের বাড়িতে আসলে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। কোথাও না কোথাও ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। শহুরে বন্দিজীবন থেকে বের হওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য। তবু একটু সুযোগ পেলেই আমি ছুটে আসি গ্রামের বাড়িতে, যেখানে আমার ভালোলাগার সব উপকরণ আছে।
সুবিশাল মাঠ, নদী, খাল-বিল, গাছগাছালি কিংবা কাদামাখা মেঠোপথ আরোও কতো কি! সেদিন বিকেলবেলা বাড়ির পাশেই একটা মুদিদোকানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। মুদি দোকানি আজিজ মামা আর আমরা চারজন মতি, সুমন ও মুয়াজ ছাড়া আর কেউ ছিল না তখন।
আমাদের আড্ডা চলছে এমন সময় এসে উপস্থিত হলেন এনাম চাচা। পুরো নাম শফিকুল হক এনাম হলেও এনাম নামেই পরিচিত সবার কাছে। এলাকাজুড়ে এনাম চাচার অন্য একটা পরিচয় রয়েছে, তা হলো তিনি একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। চাচা আমাদের পাশে বসলেন। আমরা তখন চাচার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, আচ্ছা চাচা যখন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাহলে তো চাচার কাছ থেকে যুদ্ধকালীন তথ্য জানা যাবে।
আমি চাচার কাছে জানতে চাইলাম- আচ্ছা চাচা, আপনি তো সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তখনকার কোনো ঘটনা যদি বলতেন।
-অসুবিধে নেই, নিশ্চয় বলবো ভাতিজা।
চাচা তখন বলতে শুরু করলেন-
শিল্পী সমর মজুমদার
পাকবাহিনী আমাদের নিরীহ বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিল পঁচিশে মার্চের কালো রাতে। অসংখ্য মানুষকে সেদিন তারা হত্যা করেছিল নারকীয় কায়দায়। তখন সারাদেশব্যপী প্রতিবাদের ঝড় শুরু হলো। স্বাধীনতার ডাক পড়ে গেলো, সবাই যে যার মতো করে মুক্তিসংগ্রামে যোগ দিলো। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি, খুব একটা বড় না হলেও তখনকার পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারতাম। আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে বেশ কথাবার্তা বলতেন। আমাদেরকে দেশের জন্য সব সময় জাগ্রত থাকতে বলতেন।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্কুল-কলেজ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমার সঙ্গে যারা পড়তো তাদের অনেকেই মুক্তিসেনার খাতায় নাম লিখিয়ে ট্রেনিং-এ চলে যায়। আমি তখনো যেতে পারিনি। তার কারণ হলো আমাকে পরিবার থেকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বয়সে ছোট বলে। কিন্তু আমার আর ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। রেডিওতে নিয়মিত সংবাদ শুনতাম। পাকসেনাদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিসেনার লড়াইয়ের খবর প্রচারিত হতো। লোকমুখে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা কথাবার্তা শুনে আমি সুযোগ খুঁজছিলাম কীভাবে যাবো।
একদিন রাতে ঘরের বারান্দায় বসে রেডিওতে খবর শুনছিলাম। এমন সময় কিছুদূর থেকে হঠাৎ করে কার যেন গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি রেডিও রেখে দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম, তিন-চারজন মানুষ আমাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে আসছিল। পথিমধ্যে আমাকে দেখে তারা আমাকে অনেককিছু জিজ্ঞেস করে। আমি তখন বাড়ি দেখিয়ে বললাম, এই যে আমার বাড়ি। তাদের কাছে আমি পরিচয় জানতে চাইলাম। তারা প্রথমে বলতে না চাইলেও আমার পীড়াপীড়িতে একজন বলল, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা’।
ওরা মুক্তিযোদ্ধা শুনে আমার তর সইছিল না। আমি তাদের সঙ্গে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আমার কথা শুনে উনারা একজন আরেকজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। হয়তোবা এতো ছোট ছিলাম যে উনারা আমার কথা শুনে কী বলবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। তবে সেদিন আমাকে না নিয়ে আশ্বাস দিলেন কয়েকদিন পর নিয়ে যাবেন। আমি তাদের অপেক্ষায় ছিলাম। প্রতিদিন রাতে ঠিক এই সময়টাতে আমি তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কিন্তু তাদের সঙ্গে আর যাওয়া হয়নি। তার আগে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে মুক্তিসেনাদের ক্যাম্পে চলে আসি। প্রথমে আমরা দুজনকে দেখে উনারা কী করবেন দ্বিধায় পড়েন। আমাদের ভীষণ ইচ্ছে দেখে সঙ্গে রাখবেন বলে আশ্বস্ত করলেন।
ক্যাম্পে মুক্তিসেনাদের ট্রেনিং দেখতাম, উনারা বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করতে যেতেন তাও শুনতাম, কীভাবে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াই করতেন। একদম কাছে থেকে তখন মুক্তিযুদ্ধ দেখতে পেরেছিলাম। মনে মনে ভাবতাম যদি আমাদেরও যুদ্ধ করতে নিতেন এবং ট্রেনিং দেওয়াতেন! তবে এই চাওয়া বেশিদিন অপূর্ণ থাকেনি। আমাদের ক্যাম্পের প্রধান একদিন আমাদের দুজনকে নিয়ে বসলেন এবং কিছু কাজ বলে দিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো- নিয়মিত রেডিওতে খবর শোনা, তবে এ কাজ করতে হবে একদম আড়ালে গিয়ে, তারপর নিজেদের ক্যাম্পে সতর্কতাবস্থায় থাকা, পাকসেনাদের ক্যাম্পে ছদ্মবেশে চোখ রাখা এবং তাদের চলাফেরার দিকে খেয়াল রাখা। আমরা আমাদের উপর আরোপিত কাজ করে যেতে লাগলাম।
একদিন একা আমি পাকবাহিনীর একটা ক্যাম্প দেখে আসার জন্য গেলাম। ছোট বলে ওরা আমাদের উপর তেমন নজর দিতো না। দেখা শেষ করে ফিরবো এমন সময় এক পাকসেনার সামনে পড়ে যাই। আমাকে জিজ্ঞেস করে, এখানে কী করি। আমি উত্তরে হাত দেখিয়ে বললাম, ‘দোকানে গিয়েছিলাম খরচ আনতে। কিন্তু দোকান বন্ধ পাই।’ সেদিনের মতো বেঁচে যাই।
এর কিছুদিন পর আমি আবার পাকসেনাদের ক্যাম্পে যাই, দূর থেকে ওদের আলাপ পুরোপুরি শোনা যাচ্ছিল না। আমি আরেকটু কাছে গিয়ে আড়ি পাতলাম। ওরা সবাই মিলে আলাপ করছিলো কীভাবে বাঙালিদের শেষ করে দেবে, কীভাবে হত্যা করবে, কোথায় কীভাবে অপারেশন চলছে ইত্যাদি। আলাপের একপর্যায় শুনতে পেলাম ওদের একজন বলছে আগামীকাল তো সুনাপুর ক্যাম্পে আমাদের অপারেশন। সুনাপুর বলতে যে ক্যাম্পটায় আমি ও আমাদের মুক্তিসেনারা অস্থায়ী বাস করছি।
সুনাপুর অপারেশন করতে আসছে শুনে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো, নিজেকে সামলে নিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসি। আমাদের ক্যাম্প-প্রধানের কাছে খবরটা পৌঁছে দেই। উনি সবার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেন, কীভাবে ওদের অপারেশন প্রতিহত করা যায়। সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা খুব দ্রুত ক্যাম্প ত্যাগ করি।
ওদের অপারেশন প্রতিহত করতে আমাদের প্রস্তুতি চলতে লাগলো। এদিকে আমি ও আমার বন্ধু পাকসেনাদের ক্যাম্পে গিয়ে তাদের অবস্থা দেখে আসি। রাত তিনটা। চারদিকে নিস্তব্ধতা। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। দূর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। হঠাৎ করেই গুলির আওয়াজ এসে কানে বাজে। বুঝতে আর বাকি নেই ওরা এসে গেছে আক্রমণ চালাতে। আমরা আমাদের কৌশলী অবস্থান থেকে দেখার চেষ্টা করছি। ওরা আক্রমণ করেই যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের থেকে কোনো রকম পাল্টা আক্রমণ না পেয়ে মনে মনে বেশ খুশি হয় পাকসেনারা।
ক্যাম্পের একদম কাছে এসে আক্রমণ চালাতে থাকে, তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আস্তে আস্তে ওদের গুলির আওয়াজ কমতে থাকে। আমরা তাদের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করে এগিয়ে আসি। যখন আর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো না, ঠিক তখনি শুরু হয় আমাদের পক্ষ থেকে পাকসেনাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ। আকস্মিক আক্রমণে ওরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। পেছন দিক থেকে আমাদের আক্রমণে ওরা একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়ে।
কিছু সময়ের মধ্যে পাকসেনাদের সবগুলোকে খতম করে দিতে সক্ষম হই। সেদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন পাকসেনা আমাদের হাতে মৃত্যুবরণ করে। সেদিনের কৌশলী যুদ্ধ আজও আমার মনে পড়ে, তখন গর্বে বুকটা ভরে উঠে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- টিসিবির জন্য কেনা হবে সাড়ে ৬১ কোটি টাকার মসুর ডাল
- সিঙ্গাপুর থেকে ২ কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার
- জিআই স্বীকৃতির সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে:শিল্পমন্ত্রী
- বাগেরহাটে বালু বোঝাই ট্রলির ধাক্কায় মা-ছেলে নিহত
- আম দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ
- হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়ছে আরও তিন দিন
- শপথ নিলেন নবনিযুক্ত আপিল বিভাগের তিন বিচারপতি
- বিশ্বনেতাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের আহবান প্রধানমন্ত্রীর
- গরমে মাথায় হাত মুরগি খামারির, আম চাষিরাও চিন্তায়
- ভারতের ৫২৭ খাদ্যপণ্যে বিষ : ইউরোপে নিষিদ্ধ
- স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত শনিবার
- মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো ২৮৮ সেনা-বিজিপিকে
- দুবাইয়ের পর এবার মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস
- বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেনজীর আহমেদের সম্পদের তথ্য চাইল দুদক
- হজ পারমিট দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব
- উপজেলা ভোট ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে
- বিএনপি আন্দোলনেব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাস-সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে:কাদের
- ১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী
- এভিয়েশন শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- বিএসইসির আদেশ জারি
৩ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমতে পারবে না - বে-টার্মিনালে বিনিয়োগ হবে দশ বিলিয়ন ডলার
- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মে থেকেই অভিযান : মেয়র, ডিএসসিসি
- মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ কৃষকের মধ্যে সাড়া
- ব্যাংক একীভূত হলেও আমানত সুরক্ষিত থাকবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
- হজযাত্রীদের সহযোগীতার আশ্বাস সৌদির
- টেলিযোগাযোগ আইনের খসড়া
আইনের আওতায় আসবে সব ধরনের অনলাইন সেবা - এআই নীতিমালা
সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ - তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন
- তাপপ্রবাহ : গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
- সেই নারী কাউন্সিলর চামেলীকে দল থেকে বহিষ্কার
- এশার নামাজ না পড়ে তারাবি পড়া যাবে?
- গোপালগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করলেন এসপ
- বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হটকারি সিদ্ধান্ত: হাছান মাহমুদ
- দুর্নীতি করব না, প্রশ্রয়ও দেব না: দীন মোহাম্মদ
- ইতিকাফের জন্য যেসব শর্ত মানতে হবে
- প্রতিবেশী দেশগুলোর অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশে
- নূহ (আ.) এর নৌকা পাওয়া গেলো আরারাত পর্বতে!
- শেখ হাসিনা-জো বাইডেনের একান্তবৈঠকের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের
- মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
- আজ ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস
- আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর
- কত দিতে হলো মুক্তিপণ?
- মুকসুদপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই বাইকারের
- মুকসুদপুরে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার
- ঢাকায় মিলছে উটের দুধের চা
- কলকাতায় হিরো আলমকে সংবর্ধনা
- গোপালগঞ্জে ভাসুরের বিরুদ্ধে গৃহবধূর উপর এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ
- সেনেগালের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি হাফেজ আবু রায়হানের ‘বিশ্বজয়’
- এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ
- বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ই মাহীর ‘পেশা’