• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে বাঁচাতে অসহায় মায়ের আহাজারি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

ছেলের দুটো কিডনিই নষ্ট। একটি কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে প্রস্তুত মা। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন ৮ লাখ টাকা। দিনমজুর পরিবারের পক্ষে এতো টাকা যোগার করা সম্ভব নয়। ফলে আটকে আছে কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ।

কোটালীপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, মায়াবী চেহারার যুবক শামসুল হক দাঁড়িয়া। বয়স মাত্র ২৮। পৈত্তিক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামে হলেও জন্ম থেকেই বসবাস করছেন গোপালপুর গ্রামের নানা বাড়িতে।

ছোটবেলায় আরবি পড়ায় আগ্রহ থাকায় ভর্তি হন মাদ্রাসায়। মাওলানা, মুফতি পাশ করে কোটালীপাড়ার হিরণ মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন শামসুল হক। নিমিশেই তার আচার-আচরণ, পড়ানোর দক্ষতায় প্রিয় হয়ে ওঠেন সকলের কাছে।

মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে ও ছোট ভাইকে নিয়ে একটি সুখের সংসার সামসুল হকের। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শামসুল হক ছেলে সন্তানের বাবা হন। আনন্দিত হন পরিবারের সবাই। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে পুরো পরিবারে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। অসুস্থ হয়ে পরেন শামসুল হক। পরে ডাক্তারি পরীক্ষা-নীরিক্ষায় ধরা পরে সামসুল হকের দু’টো কিডনিই নষ্ট। কান্নার রোল পড়ে ঘরে-মাদ্রাসা সর্বত্র।

বাবা সলেমান দাঁড়িয়া সামান্য বর্গাচাষী। কঠিন এই রোগের চিকিৎসার টাকা নিয়ে বিপাকে সবাই। যেটুক জমি জমা ছিল তা বিক্রি করে চলাতে থাকেন চিকিৎসা। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসার ছাত্ররা নিজেদের টিফিনের টাকা তুলে দেয় চিকিৎসা খরচের জন্য। এগিয়ে আসেন আত্মীয়-স্বজন, পার্শ্ববর্তী স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নিয়মিত ডায়ালাইসিস ও পরীক্ষা-নিরিক্ষায় নিমিষেই শেষ হয়ে যায় অর্থ। হাত পাতেন আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে। ইতোমধ্যে শামসুল হকের নানা গোপালপুর গ্রামের আবু হানিফ খান তার শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে খরচ চালিয়েছেন চিকিৎসায়।

রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা চলছে শামসুল হকের। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শামসুল হককে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে।

কিন্তু কিনডি কেনার সামর্থ্য না থাকায় মমতাময়ী মা রাহেলা বেগম কিডনি দেয়ার জন্য প্রস্তুত। অপারেশন এবং ওষুধসহ সব মিলিয়ে প্রয়োজন প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। অর্থের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না কিডনি প্রতিস্থাপন।

টাকার অভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারায় দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে সামসুল হকের। মৃত্যু যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নিরুপায় বাবা-মায়ের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে ছেলে।

স্বামীর চিকিৎসা করতে না পারায় অসহায় হয়ে পড়ছে স্ত্রী হাবিবা বেগম। কিছু না বোঝার আগেই ছেলের পিতা হানারোর ভয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন মা। অবুঝ সন্তান মাসরুর মিষ্টি চেহারা দেখে প্রায়ই ডুকরে কেঁদে ওঠেন শামসুল হক। তিন প্রজন্মের কাছে যেন পুরো জীবনটাই এখন অন্ধকারে ঢাকা।

এদিকে এ ঘটনা জানার পর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সমাজিক সংগঠন 'জ্ঞানের আলো পাঠাগার'। তারা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে শামসুল হকের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার জন্য সকলের কাছে সহযোগীতা চেয়েছেন। ১০, ২০, ৫০ বা ১০০ টাকা যার যার সাধ্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে শামসুল হকের চিকিৎসায় সহায়তা করার আহ্বান জানায়।

অসুস্থ শামসুল হকের বাবা দিনমজুর সলেমান দাঁড়িয়া বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ৮ লাখ টাকা প্রয়োজন। ছেলের চিকিৎসা করতে সহায় সম্বল যা ছিল, সব শেষ করেছি। এখন আর কিছুই নেই। যে যা দিচ্ছে তাই দিয়ে কোনরকমে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ছেলের জীবন বাঁচাতে সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সহযোগীতা কামনা করছি।

মা রাহেলা বেগম বলেন, যেখানে চিকিৎসা করতে পারছি না, সেখানে আবার কিডনি কেনা। সামর্থ্য না থাকায় এখন নিজের একটি কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্ঠা করছি। কিন্তু কিডনি বসাতে ৮ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব। টাকা যোগার করতে না পারলে চোখের সামনেই ছেলের মৃত্যু দেখতে হবে। তাই ছেলেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সকালের সহযোগীতা কামনা করছি।

জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সভাপতি সুশান্ত মন্ডল বলেন, শামসুল হকের চিকিৎসার জন্য সকালের কাছে সহযোগীতার আবেদন জানানো হয়েছে। সকলের প্রতি আমাদের আহ্বান, আসুন সবাই মিলে শামসুল হকের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করি। এছাড়া সকালের পাঠানো প্রতিটি টাকার হিসাবের আপডেট জ্ঞানের আলোর ফেসবুক পেজে দেয়া হবে।

একটি টাকাই হয়তো বাঁচাতে পারে শামসুল হককে। ফিরিয়ে দিতে পারে অবুজ শিশুর পিতাকে। শামসুল হকের চিকিৎসার জন্য সহযোগীতার টাকা পাঠাতে পারেন বিকাশের এই নম্বরে। বিকাশ নম্বর- জ্ঞানের আলো পাঠাগার: ০১৯৮৫-৬২৭৬৯০।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ