• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মেননে ইনুর চেতন: এরশাদ সিনড্রম

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৯  

ক্যাসিনো থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পেলে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে তথ্য দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রাজনৈতিক কৌশল ও আউলাঝাউলা বক্তব্যে আবার বাম্পার হিট সময়ে রাশেদ খান মেনন সম্পর্কে বার্তাটি দিলেন তথ্যমন্ত্রী। এতো নিন্দা-গীবতের পরও নানা সূচকে মেনন সফল রাজনীতিকের উদাহরণ। আলোচনায় থাকতে পারছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সিনড্রমে এমনটি কিছুদিন করেছেন আরেক সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও।

জীবদ্দশায় সকাল-সন্ধ্যা নাটকীয় কথা বলে পরে অস্বীকার, মিডিয়াকে দোষারোপ, সিদ্ধান্ত নিয়ে পাল্টে ফেলার পাশাপাশি নিজেও পল্টি দিয়ে রাজনীতিতে আলোচনায় টিকেছিলেন এরশাদ। মেনন-ইনুর সঙ্গে এরশাদের বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ সম্পর্ক নানা সময়ে আলোচিতও হয়েছে। ক’দিন চুপ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গত কিছুদিন থেকে আবার একটু-আধটু সরকারবিরোধী হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে চড়া-কড়া কথা বলছেন। বলতে বলতে বলেই ফেলেছেন- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত সংসদ, উপজেলা, ইউপি কোনো নির্বাচনেই ভোট হয়নি’।

 জীবদ্দশায় সকাল-সন্ধ্যা নাটকীয় কথা বলে পরে অস্বীকার, মিডিয়াকে দোষারোপ, সিদ্ধান্ত নিয়ে পাল্টে ফেলার পাশাপাশি নিজেও পল্টি দিয়ে রাজনীতিতে আলোচনায় টিকেছিলেন এরশাদ। মেনন-ইনুর সঙ্গে এরশাদের বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ সম্পর্ক নানা সময়ে আলোচিতও হয়েছে। ক’দিন চুপ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গত কিছুদিন থেকে আবার একটু-আধটু সরকারবিরোধী হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে চড়া-কড়া কথা বলছেন। বলতে বলতে বলেই ফেলেছেন- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত সংসদ, উপজেলা, ইউপি কোনো নির্বাচনেই ভোট হয়নি’। 

এমন মন্তব্যে গণমাধ্যমে এক ঝলক ভ্যালুয়েবল হয়ে ওঠেন মেনন। যুবলীগ, ক্যাসিনো, অভিযান ইত্যাদি গরম খবরের মধ্যে ভিন্ন ফ্ল্যাভার পায় তার বক্তব্য। রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরেও দেখা দেয় তোলপাড়। ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মেননকে ধন্যবাদ জানাতে দেরি করেননি প্রবীণ নেতা ড. কামাল হোসেন। দেরিতে হলেও সত্য বলায় মেননকে ধন্যবাদ জানান ড. কামাল। ঠেলায় নয়, খুশিতে ধন্যবাদ আসে বিএনপি থেকেও।

সরকারকে আহ্বান জানানো হয় ভুল স্বীকার করে সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করতে। এর বিপরীতে সরকারী দলে দেখা দেয় উসখুস। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেনন মন্ত্রীত্ব পেলে কি এখন এভাবে বলতেন ৩০ ডিসেম্বর ভোট হয়নি? রাজনীতির সঙ্গে ক্ষমতা, মন্ত্রীত্ব, হজ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদিতে মেননের ঘনিষ্ট পার্টনার হাসানুল হক ইনু বেঁকে বসেন। তিনি বাস্তব চেতনে বলে দিয়েছেন, ১৪ দলের জোটসঙ্গীদের শেখ হাসিনাকে পরিত্যাগ করা ঠিক হবে না।

এ অবস্থায় বেশি দেরি করেননি মেননও। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কথা পাল্টে ফেলেন তিনি। দোষ চাপান সাংবাদিকদের ওপর। বিনোদনের ওপর বিনোদন। গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেন, তার বক্তব্য সম্পর্কে গণমাধ্যম ভুল বার্তা দিয়েছে। ততক্ষণে তার বক্তব্য মানুষের ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শত শতবার দেখা ও শোনা হয়ে গেছে। মেনন পল্টি দেয়ায় মানুষ সেটা আরো বেশি শুনেছে। শেয়ার করেছে। ভাইরাল-স্ট্রল হয়েছে ধুমছে। এরশাদের ধাঁচে সুপার হিট আলোচনায় থাকতে সফল হয়েছেন মেনন।

এবার সরকার গঠনের পর ১৪ দলকে সরকারে নেননি প্রধানমন্ত্রী। তাদের বলেছেন বিরোধীদলে থাকতে। মেনন-ইনু সেই থেকে মনক্ষুন্ন। ইনু কিছুদিন মাঝেমধ্যে গরম কথা বলে ঝামেলায় পড়তে থাকেন। সরকার সমর্থিত সাংবাদিক মহল থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত অভিযোগে ইনুকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নেয়ার দাবিও তোলা হয়। বেগতিক হাল বুঝে এক পর্যায়ে দমে যান ইনু। "৩০০ কোটি বরাদ্দ হলে ১৫০ কোটি মেরে দেন এমপিরা" এমন মন্তব্য করেও ফেঁসে যাচ্ছিলেন ইনু। পরে শুধরে নিয়েছেন ‘মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে’ বলে।

অন্যদিকে, দম না ধরে মেনন বাড়তে থাকেন সামনে। গত কিছুদিন নন-স্টপেই চলছিল তার কঠিন কঠিন কথা। সর্বশেষ বলেছেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। শনিবার বরিশালে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্মেলনে মেনন ঐ বক্তব্য দেওয়ার দিনই গণমাধ্যমে খবর আসে যে, বর্তমানে রিমান্ডে থাকা যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও আরমান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন— আরামবাগে ইয়াংমেনস ক্লাবে পরিচালিত ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা করে পেতেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-৮ আসন) মেনন।

এ ছাড়াও নানা ঘটনায়ও একান্ত কর্মীদের কাছেও মেননের কদর প্রশ্নবিদ্ধ । তাদের কেউ কেউ বলে থাকেন-বিপ্লবী মেনন হেরে গেছেন এমপি মেননের কাছে। চাকুরী টেকানোর জন্য কী দরকার ছিল তাঁর কৈফিয়ত দেয়ার? আবার বলেই যখন ফেলেছেন, তখন যদি বলতেন- যা বলেছি, ঠিক বলেছি। কী সমস্যা হতো তাতে? বাম ভাবাদর্শীদের কারো কারো মতে, একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন, একসাথে সরকার গঠন- ১৪ দলে তাদের অবস্থান এই পর্যন্ত মেনে নেয়া যেত। কিন্তু, এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যখন মহাজোট করল, সেই সময়টাতেই কেটে পড়া উচিত ছিল। তাতে মানুষের কাছে মুখ দেখানোর একটা মওকা মিলতো। অবশ্য পল্টির কথা মানুষও মনে রাখে না বেশিদিন। এই সুযোগে মুখ দেখাতে শেষ পর্যন্ত সমস্যা হয় না চমক-ঠমকে বেড়ে ওঠা মান্যবরদের। তাদের মুখ দর্শনের প্রার্থীও অনেক। তারা নিয়মিত মুখই দেখান। অন্য কিছু নয়।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ