• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

যে কারণে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ অনুমোদন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ খুলে ২০১৭-২০১৮ সেশন থেকে তিন শিক্ষাবর্ষে ৪১৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বারবার চেষ্টা করা হলেও বিভাগটির অনুমোদন দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির বক্তব্য, অনুমতি না নিয়ে এবং নিয়ম-নির্দেশনা লঙ্ঘন করে খোলায় তারা ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য জানান, অনুমতি না নিয়ে খোলার পরও ইতিহাস বিভাগ বাদে ছয় বিভাগের অনুমোদন পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ইতিহাস বিভাগে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় বিভাগের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। তবে তিন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শিক্ষার্থীদের অনুমোদন এবং তাদের অন্য বিভাগে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ইউজিসির নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীরা ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, অনুমোদন না নিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম বা ইনস্টিটিউট খোলা হলে, অনুমোদন দেবে না ইউজিসি; যদিও এর আগেও অনুমোদন না নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুষদ, বিভাগ ও প্রোগ্রাম খুলে পরে অনুমোদন নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম বা ইনস্টিটিউট খোলার বিষয়ে নিয়ম-নীতি মানতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, দেশের কোনও কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অনুমোদন না নিয়ে নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হচ্ছে। এমনকি পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। সরকারের আর্থিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। মোট ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের চিঠি দেয় ইউজিসি। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও বঙ্গবন্ধু ব্জ্ঞিান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন না নিয়েই ইতিহাস বিভাগ খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির একজন সদস্য বলেন, ‘অনুমোদন না নিয়ে বিভাগ খুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়েছে। এর দায় নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। অনুমোদন না নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে যদি অনুমোদন পাওয়া যায়, তাহলে তো এটি উদাহরণ হয়ে যাবে। রেওয়াজে পরিণত হবে।’

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অনুমোদন না নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কারণে কমিশন বৈঠকে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’
কমিশন বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মানবিক কারণে অন্য বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীকে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের অন্য বিভাগে নিতে গেলে জটিলতা সৃষ্টি হবে। আমরা চেষ্টা করবো, ইতিহাস বিভাগেই তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করার।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ের পর ইউজিসিতে আমরা আবারও অনুমোদনের জন্য আবেদন করবো। তবে নিয়ম অনুযায়ী, একজন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এটি করতে পারবেন না। পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যকে এই আবেদন করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘তিন বছর আগে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ইতিহাস বিভাগসহ মোট ৭টি বিভাগ চালু করি। পরে ইউজিসি ইতিহাস বাদে অন্য ৬টি বিভাগের অনুমোদন দেয়। ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দিলে ইউজিসির কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করি না।’
এদিকে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। আন্দোলনে শামিল হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও আহ্বান জানিয়েছি। আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ