• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

রায়টি প্রত্যাশিতই ছিল

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৯  

বহুল আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন মামলার প্রধান আসামি সিরাজউদ্দৌলাসহ সব আসামি আদালত প্রাঙ্গণে বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। মামলার ১৬ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে যখন আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয় তখন তারা ছিলেন খোশমেজাজে।

হাসতে হাসতে তারা আদালতের ভেতরে যান। তাদের ভাবসাব ছিল এমন যেন রায়ে তাদের কিছুই হবে না। এতবড় একটি পাপাচার করার পরও তাদের মনে কোনো অনুশোচনাই যেন ছিল না। তবে আদালতের রায়ে সবার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হলে আদালতের কাঠগড়াতেই কাঁদতে শুরু করেন সব আসামি। রাফির খুনিরা হাসতে হাসতে আদালতে প্রবেশ করলেও কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসেন। আদালতের এ রায় ছিল প্রত্যাশিত।

রাফি হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়ের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। এর অন্যতম হল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি। ঘটনা ঘটার মাত্র ৩৩ দিনেই সম্পন্ন হয়েছে মামলার তদন্তকাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অতঃপর মামলার সব সাক্ষ্য, জেরা সম্পন্ন করে আদালত মাত্র ৬১ দিনে মামলার রায় ঘোষণা করলেন। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার মাত্র ৩ মাস পরই রায় ঘোষিত হল। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার মাত্র ৯৪ দিনের মধ্যে রাফির পরিবার বিচার পেয়েছে। গোটা দেশবাসী এ মামলার যে রায় প্রত্যাশা করেছিলেন, সে রায়ই দিয়েছেন আদালত। এক কথায়, এ রায়ে মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।

বলা হয়ে থাকে, ‘জাসটিস ডিলেইড ইজ জাসটিস ডিনাইড।’ অর্থাৎ বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার রায় এখনও ঝুলে আছে। এমনও দেখা গেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অনেক আলোচিত বা চাঞ্চল্যকর মামলা থেকে আসামিরা খালাস পেয়ে গেছে। রাফি হত্যা মামলার মতো সব মামলারই দ্রুত নিষ্পত্তি কাম্য।

রাফি হত্যা মামলার রায়ের মাধ্যমে কয়েকটি সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়। এর একটি হল, অপরাধী যতই প্রভাবশালী বা শক্তিশালী হোক না কেন, এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। এ মামলায় সরকারদলীয় লোকজনও শাস্তির আওতায় আসায় প্রমাণিত হয় রাজনৈতিক পরিচয় অপরাধীর ক্ষেত্রে মুখ্য নয়, তার কর্মকাণ্ডটিই মুখ্য।

আমরা সাধারণত মনে করে থাকি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থানে একটি প্রাণবন্ত মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা আমাদের সেই বিশ্বাসের জায়গাটিকে নড়বড়ে করে দিয়েছিল। এ রায়ের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সতর্ক হবে। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমে আসবে। তবে সরকারের উচিত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা।

রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ দুটি মাধ্যম প্রতিনিয়ত রাফি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সরব ভূমিকায় ছিল। রাফি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে রায় পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলো যত দ্রুতগতিতে হয়েছে, পরবর্তী ধাপগুলোও সেভাবেই দ্রুতগতিতে হবে, এটাই প্রত্যাশা।

ইসমাইল মাহমুদ : প্রাবন্ধিক, শ্রীমঙ্গল

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ