• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

শ্রীপুরে গলা কেটে স্বামীকে হত্যা, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন স্ত্রী

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যাবসায়ী আব্দুর রহমানের (৪৫) গলা কেটে হত্যার ঘটনায় র‌্যাবের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে হত্যার প্রধান আসামি স্ত্রী সামিরা আক্তার। মূলত স্বামীর অবৈধ দাবি পূরণের ক্ষোভ থেকে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী সামিরা। 

নিহতের স্ত্রীসহ দুই সহযোগীকে গ্রেফতার কেরেছে র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা। সোমবার দিবগত রাত সাড়ে ১০ টায় রাজধানীর দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার তার চাচার বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পাণী কমান্ডর লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন গেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী প্রধান আসামি সামিরা আক্তার (২৬) ও তার তার বাবা বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আলী হোসেন (৫৫)।

লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান হত্যার প্রধান আসামি সামিরা আক্তার ওই এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। এ সংবাদে র‌্যাব সদস্যরা ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সামিরা আক্তার জানান, গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে আব্দুর রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার রতন মিয়ার সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কাজে লিপ্ত করে। পরে রতন রাত ১১টায় বাসা থেকে চলে গেলে ভোর রাত আনুমানিক ৩টায় সামিরা বাসায় থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী আব্দুর রহমানকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে না চেনার জন্য লাশের মুখে অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেয় এবং লাশ তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখে। ঘটনার পর লাশ সরিয়ে ফেরার জন্য সামিরা তিনদিন ওই ভাড়া বাসায় অবস্থান করে। লাশ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহযোগীতায় বাসা থেকে পালিয়ে যায়। পরে পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় মামার বাসায় অবস্থান করতে থাকে। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার তার চাচার বাসায় আত্মরগাপন করে থাকে।

আসামি সামিরা আরো জানায়, আব্দুর রহমান তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গীতে বসবাস করতো। সামিরা ২০১৬ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ছিল এবং তার সাথে পূর্ব পরিচিত ছিল। সেই সুবাদে সে ভিকটিমের টঙ্গীর বাসায় থেকে ডিগ্রী পরীক্ষা দিত। এ সুযোগে ভিকটিম তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাকে কৌশলে তার টঙ্গীর বাসায় খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ পান করিয়ে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে এবংধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে উক্ত ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে আব্দুর রহমান তাকে বিভিন্ন সময় দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। ধর্ষনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরার প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। 

এরপর থেকে সামিরা শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ঔষধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিকটিম আব্দুর রহমান সামিরাকে বিবাহ করে এবং তাকে নিয়ে শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করে। বিয়ের পর থেকে আব্দুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তার পাটনারদের সাথে ঘটনার দিন পর্যন্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০) স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে বাধ্য করতো। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামিরা ভিকটিম আব্দুর রহমানের কাছে ডিভোর্স চাইলে ভিকটিম সামিরাসহ তার মা ও ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়। এ ঘটনার জেরে স্ত্রী সামিরা আব্দুর রহমানের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাকে খুন করে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ