• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ যাচ্ছে নড়িয়ার দুর্গম এলাকায়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। আগামী শনিবার  ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি বিদ্যুতের এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম। 

শরীয়তপুরের নড়িয়ার চরআত্রা, কাচিকাটাসহ তিনটি ইউনিয়নে চর অধ্যুষিত ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষ এই সুবিধার আওতায় আসছে। এতদিন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর নওপাড়া ও চরআত্রায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা এবং জাজিরার কুন্ডেরচরের বহু মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি যখন ওই চরে গণসংযোগে যাই, তখন চরবাসীর সবচেয়ে বড় দাবি ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে ৩ মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের আলো পৌঁছাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় ও তার নির্দেশে আমি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। নির্ধারিত সময়ের আগেই সারাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। আগামী ২৩ এপ্রিল সাবমেরিন ক্যাবল ও সাব পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কুপি বাতির আলো থেকে মুক্ত হয়ে চরাঞ্চলের মানুষগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো চরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র জানায়, প্রায় শত বছর আগে গড়ে ওঠা এই চরগুলোর মানুষ হারিকেন ও প্রদীপের আলো ছাড়া কখনো বিদ্যুতের আলো পায়নি। এবার পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সেই চরে বিদ্যুতায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে এসব সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের। 

জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরের জনপদের পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত দুর্গম চর। দুর্গম চরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে গত বছরের ২২ এপ্রিল সাবমেরিন ক্যাবল ও সাব পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। চরের কাছিকাটা, নওয়াপাড়া, চরআত্রা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নগুলো জেলার মূল ভু-খণ্ডথেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আধুনিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই এলাকার মানুষ। এখানকার মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ অনেকটা স্বপ্নের মতো। যে চরে সন্ধ্যা নেমে এলেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পুরো চরাঞ্চল। এই অঞ্চলকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে এবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা শহর বা উপজেলা থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ায় পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর ৮০০ মিটার অংশে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হচ্ছে বলে প্রকৌশলীরা জানান। ফলে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে ওই চরে বসবাসকারী ৫০ হাজার পরিবার। মুক্তি মিলবে কুপি বাতির আলো থেকে। এ নিয়ে চরাঞ্চলের এ ৩ ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা চরে প্রায় ৭০ বছর আগ থেকে মানুষের বসবাস শুরু। ওই চরের নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়ন পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। আর কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। চরের মানুষ হারিকেন ও প্রদীপের আলো ছাড়া কখনো বিদ্যুতের আলো পায়নি। এ চরগুলো শরীয়তপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীম নির্বাচনী গণসংযোগে গেলে স্থানীয়রা চরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি তোলেন। নির্বাচিত হতে পারলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দলের এ সাংগঠনিক সম্পাদক।

নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রতিশ্রুতি পূরণের উদ্যোগ নেন। এজন্য জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাথে বৈঠক করেন। শরীয়তপুর তীর অংশ হতে ওই চরের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫ কিলোমিটার হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। তবে চরের নিকটবর্তী মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে নওপাড়া নদীর দূরত্ব ৮০০ মিটার হওয়ায় সহজে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে মুন্সীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাথে বৈঠক করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। সভায় সিদ্ধান্ত হয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদী দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হবে। এরপর বিচ্ছন্ন চরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো কর্মযজ্ঞ। 

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর মাঝের ৩টি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে। কোথায় কোথায় পুল বসবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রক্রিয়ার জরিপ কাজ চলছে। শিগগির কাজ শুরু করা হবে। নদীর অংশটুকু সাবমেরিন ক্যাবলে আর বাকি অংশে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীনের বলেন, ২০০ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার লাইন ইতোমধ্যে প্রস্তত হয়েছে। বাকি ৫০ কিলোমিটার লাইন খুব শিগগিরই প্রস্তু করা হয়। 

জানতে চাইলে স্থানীয় নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল মুন্সী বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি দুর্গম চর। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ দেয়া হবে তা কখনো ভাবিনি। এ এলাকায় বিদ্যুৎ আসছে এমন খবরে আমরা আনন্দিত। 

কাছিকাটা গ্রামের শিক্ষার্থী আলামিন দেওয়ান বলেন, কুপি বাতির আলোতেই পড়ালেখা করেছি। এই চরে বিদ্যুৎ পাবো ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন সত্যি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ