• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সিরিয়ায় তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ-সমঝোতা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৯  

আঙ্কারায় গত বৃহস্পতিবার এরদোয়ান এবং মাইক পেন্স ও মাইক পম্পেও বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টরপন্থীরা সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে চায়; মূলত সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার রুশ চেষ্টাকে হেয় করার জন্য।

তুরস্ক একই সঙ্গে মার্কিন ও রুশ কার্ড খেলছে। এরদোয়ান চান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এমনভাবে কাজ করুক, যাতে তুরস্ক লুপ্ত মর্যাদা ফিরে পায় এবং তাঁর স্বার্থ রক্ষিত হয়।

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ব্যাপারে যে সমঝোতায় পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক আইনে তার কোনো বৈধতা নেই। বৃহস্পতিবারের সমঝোতা সিরীয় ভূমিতে তাদের অবৈধ দখলদারি ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক। তারা চায় সিরিয়া বিভক্ত হোক এবং সার্বভৌমত্ব হারাক।

যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক উত্তর সিরিয়া থেকে কুর্দি ওয়াইপিজি সদস্যদের পশ্চাৎপসরণ চায়। এরদোয়ান সেখানে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর পরিকল্পনার সঙ্গে সিরীয়দের (কুর্দিসহ) নিরাপত্তা ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।

সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় দখলদারি বজায় রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ও আঙ্কারা উভয়েই সিরিয়ার তেলসমৃদ্ধ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। বৃহস্পতিবারের সমঝোতার সঙ্গে সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার কোনো সম্পর্ক নেই।

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র কী কী বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং এসবের কী মানে?—

এক. দুই দেশের কর্মকর্তারা তুরস্কের নিরাপত্তাবিষয়ক যেসব প্রসঙ্গ নিয়ে উদ্বিগ্ন, বাস্তবে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির কারণ এসব তার আগ্রাসনমূলক যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি তৈরি করে।

দুই. যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক তাদের সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ের বিষয়ে একমত হয়েছে।

তিন. তারা ন্যাটো চার্টারের সেই বিষয়ে একমত হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে কোনো সদস্য হুমকির সম্মুখীন হলে সবাই একযোগে তা মোকাবেলা করবে।

চার. মানবাধিকার এবং ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীর সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে তারা। দুই দেশের সরকারই ভেতরে-বাইরে কিভাবে কাজ করে তা সবার জানা। সেটা আরো স্পষ্ট হয়েছে।

পাঁচ. আইএস মোকাবেলায় ওয়াশিংটন ও আঙ্কারা ভূমিকা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কর্মকাণ্ডও সবাই জানে।

ছয়. সন্ত্রাসী ও তাদের আস্তানা, আশ্রয়, সমরাস্ত্র ও যান সরঞ্জামকে টার্গেট করবে তারা। বাস্তবে তাদের কর্মকাণ্ড ঠিক এর বিপরীত।

সাত. ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এ জনবসতি ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেবে তারা এবং বেসামরিক নাগরিক ও স্থাপনার ক্ষতি যাতে সর্বনিম্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করবে। বাস্তবতা উল্টো কথা বলে।

আট. উভয় দেশ সিরিয়ার রাজনৈতিক ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সিরীয় যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫৪ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করবে। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাসের পর যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লিতে যুদ্ধ বেড়েছেই শুধু।

নয়. ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এর গুরুত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে তারা একমত। পুরোটাই মার্কিন-তুর্কি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ।

দশ. যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে দখলকৃত সিরীয় ভূমি নিয়ন্ত্রণে সম্মতি দিয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

এগারো. ওয়াশিংটন ও আঙ্কারা তাদের আধিপত্যবাদী লক্ষ্য অর্জনে পরস্পরকে সহায়তা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

বারো. যদি ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টরপন্থীরা এরদোয়ানকে তাদের পক্ষে টানতে সমর্থ হয়, তাহলে তুরস্কে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি রদ হবে।

তেরো. উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা তাদের লক্ষ্য পূরণে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

সিরিয়া এই অবৈধ মার্কিন-তুর্কি সমঝোতা নাকচ করেছে। আসাদের উপদেষ্টা বৌছাইনা শাবান বলেছেন, নিরাপদ অঞ্চলের ধারণা ভ্রান্তিকর। তুরস্ক আসলে ‘দখলদারির অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

কুর্দি কর্মকর্তা আলদার খলিল ‘যুদ্ধবিরতি’কে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাতে এরদোয়ানের উত্তর সিরিয়া নিয়ন্ত্রণের বাসনার বদল ঘটবে না।

কার্যত এরদোয়ান, পেন্স ও পম্পেও সিরীয় ভূমি নিয়ন্ত্রণের ও ভাগাভাগির ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। সিরিয়ার প্রবল আপত্তিতে সেটা কী করে কার্যকর হয় তা স্পষ্ট নয়। কুর্দিদেরও বলা হয়েছে, তারা যেন ভারী অস্ত্র ত্যাগ করে। কেন করবে? এটা করলে তারা প্রতিরোধ শক্তিহীন হয়ে পড়বে।

পাঁচ দিনের ‘যুদ্ধবিরতি’র পর শোচিতে আলোচনায় বসবেন পুতিন ও এরদোয়ান। আপাতত তুর্কি ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘাত এড়াতে রুশ মিলিটারি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

লেখক : গবেষণা সহযোগী, সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ