• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

নাইকো মামলার সাক্ষ্যে যা বলল দুই কানাডিয়ান পুলিশ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩  

আলোচিত নাইকো দুর্নীতির ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৮ জনের বিরদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন কানাডিয়ান পুলিশের দুই সদস্য লয়েড শোয়েপ ও কেবিন দুগ্গান। সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। 

এরমধ্যে লয়েড শোয়েপের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। তবে কেবিন দুগ্গানের বক্তব্য এখনও শেষ হয়নি। আদালত আগামী মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

২৮ অক্টোবর সাক্ষ্য দিতে আসছেন কানাডার ২ পুলিশ২৮ অক্টোবর সাক্ষ্য দিতে আসছেন কানাডার ২ পুলিশ
এরআগে, সকাল ১১ টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন কানাডিয়ান এ দুই সাক্ষী। সাড়ে ১১ টার দিকে লয়েড শোয়েপ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। তাঁর সাক্ষ্য শেষ হলে সাক্ষ্য গ্রহণ মূলতবির আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। অবশ্য তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কিছুক্ষণের বিরতিতে যান আদালত। বিরতির পর সাক্ষ্য শুরু করেন কেবিন দুগ্গান। 
আদালতের দিনের কার্যক্রম শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন দুই কানাডিয়ান পুলিশের সাক্ষ্যে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।  

অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতে তারা বলেছেন, নাইকোর যে জয়েন্ট ভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্ট যেটা করা হয়েছিল ২০০৩ সালে খালেদা জিয়া তখন সরকারে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন যে জিভিএ করা হয়েছিল, এটা করতে তাঁরা আর্থিকভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। কানাডিয়ার প্রতিষ্ঠান নাইকো এখানে, বাংলাদেশে টাকা দিয়েছিল কাশেম শরীফকে। কাশেম আরও দুজনকে দিয়েছিলেন। একজন সিদ্দিকী আরেক জন শামস। শামস ও সিদ্দিকী অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পরবর্তীতে সেলিম ভুঁইয়ার অ্যাকাউন্টে এসেছে, সেখান থেকে আবার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কাছে গেছে। অর্থাৎ একটি চেইনের মাধ্যমে তাঁরা টাকা পেয়েছেন। এই যে দুর্নীতি করে যে তাঁরা চুক্তি করেছে, আজ সেটা বিদেশিরা এসে তাঁদের সাক্ষ্যে প্রমাণ করে দিলো।’ 

নাইকো মামলা: অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপির আবেদননাইকো মামলা: অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপির আবেদন
মামলার কোনো এভিডেন্স দিলো না কেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তাঁদের সাক্ষ্যের প্রয়োজন ছিল তাঁরা শুধু সেটাই দিয়েছে। তাঁরা যেটা তদন্ত করেছে এবং তদন্ত করে যা পেয়েছে সেটা বলেছে। কার কাছ থেকে শুনেছে, কিভাবে পেয়েছে সবকিছু তাঁরা আদালতে বলেছে।’ 

সাক্ষীরা খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেছে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘খালেদা জিয়া কি ছিলেন? তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর এখানে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। যখন কোনো মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী থাকেন তখন প্রধানমন্ত্রী এটার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সে অনুযায়ী তাঁর (খালেদা) আদেশেই এটা হয়েছে। প্রিভেনশন অব করাপশনের যে আইনটা আছে সেটার ফাইভ–ডি দেখবেন। সেখানে দেখবেন তিনি এটা আদারওয়াজ অ্যাবিউজ করেছেন। এটা করে অন্যদের লাভবান হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সেটাই আজকে ওনারা প্রমাণ করলেন যে কিভাবে লাভবান হয়েছেন।’ 

অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের সাথে একমত নন আসামী পক্ষ। তাদের দাবি, বিদেশি সাক্ষীরা খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় এ ঘটনায় তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা খালেদা জিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য দেন নাই। তাঁর নামই উচ্চারণ করেন নাই। বা তাঁর ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি কোনো সংশ্লিষ্টতাও বলেন নাই। সে কারণে আমরা আজ বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আমরা প্রয়োজন মনে করি নাই। আর যে কথাটা আমরা বলতে চাই, আজকের যে সাক্ষী সে কিন্তু এই ঘটনার বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য দেয় নাই।’ 

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা বেসিক্যালি সাক্ষী দিয়েছে রয়েল কানাডা নাইকো রিসোর্সের বাংলাদেশে যে মুল কোম্পানি নাইকো কানাডা, তার যে মুল কনভিকশনটা হয়েছে কানাডাতে শুধু সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছে। বাংলাদেশের নাইকো কেস সম্বন্ধে, এখানে যে ঘটনা ঘটেছে আপনারা দেখেছেন যে সেখানে যে গ্যাসফিল্ডগুলো, সেগুলোর নামও উচ্চারণ করে নাই। এ ঘটনার এফআইআর, চার্জশিটের যে বক্তব্য সেগুলোর বিষয়েও কোনো কিছুই বলে নাই। আমরা আসলে বুঝতে পারছি না, রাষ্ট্রপক্ষ কেন এই সাক্ষীদের এনেছে। আমরা মনে করি, কানাডা পুলিশের যে দুজন সাক্ষী আনা হয়েছে তাদের দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো উদ্দেশ্যই সার্ভ হয়নি।’  

প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নাইকোকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের মে মাসে খালেদা জিয়াসহ মামলার ১১ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। আসামীদের মধ্যে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদসহ তিনজন মারা গেলে তাঁদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন পলাতক। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ