• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো আয়ারল্যান্ড স্পেন ও নরওয়ে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৪  

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে। এ ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। এর আগেই এ তিনটি দেশ এই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইসরাইল। তারা স্পেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, মাদ্রিদ ইহুদিদের গণহত্যা করতে উস্কানি দিচ্ছে।
ওদিকে স্লোভেনিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে। তারাও এই স্বীকৃতি দিতে পারে। এর ফলে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশ। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশ আছে। 

কিন্তু এর মধ্যে নেই ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সমঝোতার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমাধান হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

ক্রমশ চাপ বাড়ছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। শুধু তা-ই নয়, এসব দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আহŸান জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মোট ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিও একই আহŸান জানানো হয়। আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ের এমন উদ্যোগকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই তিনটি দেশ তাদের বিবেকের কারণে সাড়া দিয়েছে। 
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলও তাদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন। ফলে ইউরোপের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে টান পড়েছে। ওই তিনটি দেশ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য সবচেয়ে উন্নত পথ হলো তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সমাধান। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে তার নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইল। সঙ্গে সঙ্গে ওই তিনটি দেশে নিয়োজিত তাদের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইসরাইল। 
সিএনএন বলেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওই তিনটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে ইসরাইলের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হবে। কারণ, তারা গাজাকে সাত মাসের যুদ্ধে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। সেখানে মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। হত্যা করেছে কমপক্ষে ৩৬,০০০ মানুষ। এর ফলে অবিলম্বে গাজার রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরাইল আন্তর্জাতিক অপ্রত্যাশিত ক‚টনৈতিক চাপ মোকাবিলা করছে। ওদিকে নিজদেশে নিজের সরকারের ভিতরে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে নেতানিয়াহুর। ৮ জুন পর্যন্ত তাকে আলটিমেটাম দিয়েছেন একজন মন্ত্রী। এ সময়ের মধ্যে তার দাবি না মানলে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
কারা স্বীকৃতি দিল, আর কারা দেয়নি : সর্বশেষ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। এর আগে গত বুধবার (২২ মে) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আগাম জানিয়ে দিয়েছিল এই তিন দেশ। এ ঘটনার জের ধরে সেদিনই ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ আয়ারল্যান্ড ও নরওয়েতে অবস্থান করা রাষ্ট্রদূতদের জরুরি আলোচনার কথা বলে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ সেদিন বলেছিলেন, ‘আজ আমি আয়ারল্যান্ড ও নরওয়েকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি-ইসরায়েল এই বিষয়ে নীরব থাকবে না।’ সে সময় স্পেন থেকেও ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছিলেন কাৎজ।
নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড এমন একসময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যখন ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এর মধ্যে স্লোভেনিয়া, মাল্টা ও বেলজিয়ামের নাম বিশেষ ভাবে উলে­খযোগ্য। নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন ছাড়াও ইউরোপের আরও ৯টি দেশ ইতিপূর্বে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এমন আরও কয়েকটি দেশ হলো বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, ত্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাকো, জ্যামাইকা ও বার্বাডোজ।
এর আগে ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বেশ কিছু দেশ। এর মধ্যে ২০২৩ সালে স্বীকৃতি দেয় মেক্সিকো। ২০১৯ সালে স্বীকৃতি দিয়েছিল সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, ২০১৮ সালে কলম্বিয়া, ২০১৫ সালে সেইন্ট লুসিয়া, ২০১৪ সালে সুইডেন, ২০১৩ সালে গুয়াতেমালা, হাইতি ও ভ্যাটিকান এবং ২০১২ সালে স্বীকৃতি দেয় থাইল্যান্ড।
২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল উলে­খযোগ্য সংখ্যক দেশ। সেবার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করতে একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তবে জাতিসংঘের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে মর্যাদা দিয়েছিল। ২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলো হলো চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট এ্যান্ড্র গ্র্যানাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগা এ্যান্ড বারমুডা, গ্রানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড।
এর আগের দশকে অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল আরও ১২টি দেশ। এর মধ্যে ২০১০ সালে স্বীকৃতি দেয় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডর। ২০০৯ সালে ভেনেজুয়েলা ও ডমিনিকান রিপাবলিক, ২০০৮ সালে কোস্টারিকা, লেবানন ও আইভরি কোস্ট, ২০০৬ সালে মন্টেনেগ্রো, ২০০৫ সালে প্যারাগুয়ে এবং ২০০৪ সালে স্বীকৃতি দেয় পূর্ব তিমুর।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় ২১টি দেশ। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালে স্বীকৃতি দেয় মালাউই, ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও কিরগিজস্তান, ১৯৯৪ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও পাপুয়া নিউগিনি, ১৯৯২ সালে কাজাখস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমিনিস্তান, জর্জিয়া ও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ১৯৯১ সালে এস্বাতিনি এবং ১৯৮৯ সালে স্বীকৃতি দেয় রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, ইরান, বেনিন, কেনিয়া, ইকুয়েটোরিয়া গিনি, ভানুয়াতু ও ফিলিপাইনস।
এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনকে সবচেয়ে বেশি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সেই বছরের ১৫ নভেম্বর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং তিনি এর রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের কথা উলে­খ করেছিলেন। সেবার প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ ও ভারত সহ বিশ্বের ৮৩টি দেশ। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলো হলো আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কিউবা, জর্ডান, মাদাগাস্কার, মাল্টা, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সার্বিয়া, জাম্বিয়া, আলবেনিয়া, ব্র“নেই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া, মিসর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, চীন, বুরকিনা ফাসো, কমোরোস, গিনি, গিনি-বিসাও, কম্বোডিয়া, মালি, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল, হাঙ্গেরি, ক্যাপ ভার্দে, উত্তর কোরিয়া, নাইজার, রোমানিয়া, তাঞ্জানিয়া, বুলগেরিয়া, মাল­ীপ, ঘানা, টগো, জিম্বাবুয়ে, চাদ, লাওস, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, রিপাবলিক অব কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, সাও টমি অ্যান্ড প্রিন্সিপে, গ্যাবন, ওমান, পোল্যান্ড, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, বতসোয়ানা, নেপাল, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ভুটান ও পশ্চিম সাহারা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত বেশির ভাগ দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। স¤প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার জন্য সংস্থাটির ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৩ দেশই ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। সংস্থাটির সদস্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে উলে­খ যোগ্য হলো ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাজ্য।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ