• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

জীবনে প্রথম বিমানে উঠতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

‘কখনও বিমান দেখি নাই, দেখার ইচ্ছে ছিল খুব। তাই শখের বসে যাত্রীদের সঙ্গে বিমানবন্দরে ঢুকে বিমানে উঠে যাই। যাওয়ার পথে আটকায়নি কেউ। তবে বিমানের সিটে বসার পর একজন বললেন, তোমার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসো। কিন্তু আমার সঙ্গে বাবা-মা ছিলেন না। তাই বিমানের ভেতরে হাঁটাহাঁটি শুরু করি। তখন বিমানের লোকজন এসে নানা প্রশ্ন শুরু করেন। একপর্যায়ে বিমান থেকে নামিয়ে আনেন। জীবনে প্রথম বিমানে উঠতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে।’

কথাগুলো বললো ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠে পড়া জুনায়েদ মোল্লা (১২)। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে সে। এক সপ্তাহ আগে শিশুটি বাড়ি থেকে পালিয়ে থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় তার ফুফুর বাসায় আসে। সেখান থেকে মঙ্গলবার বিমানবন্দরে ঘুরতে যায়।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন বিমানবন্দরের কোনও মানবপাচার সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় শিশুটি এমনটি করেছে। এ ব্যাপারে জুনায়েদের ভাষ্য, ‘না, না। সেখানে কেউ আমাকে বিমানে উঠতে বলেনি। নিজের ইচ্ছাতেই উঠেছি। আমি ভেবেছিলাম, বাসে যেভাবে যাত্রীরা ওঠে, সেভাবে বিমানেও উঠা যায়।’

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (কেইউ-২৮৪) যাত্রীরা উঠছেন, চলছে উড্ডয়নের প্রস্তুতি। এ সময়ে এক শিশু এই ফ্লাইটে দাঁড়িয়ে থাকলে কেবিন ক্রুরা তাকে বসতে বলেন। শিশুটি ফ্লাইটে একটি সিটে বসে। তবে সেই সিটের যাত্রী এলে কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে কেউ আছে কিনা জানতে চান, তার বোর্ডিং কার্ড, পাসপোর্ট দেখতে চান। তবে শিশুটি কিছু বলতে পারছিল না। যাত্রী লিস্ট চেক করে দেখা যায়, নির্ধারিত যাত্রীর মধ্যে শিশুটি নেই। তখন ফ্লাইট থেকে নামিয়ে কেবিন ক্রুরা তাকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির কাছে হস্তান্তর করেন। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। পরে পরিবারকে খবর দিয়ে রাতেই শিশুটিকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। 

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে পারইহাটি গ্রামে জুনায়েদ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষজন এসেছেন। এ সময় গেঞ্জি-পায়জামা পরে ঘর থেকে বের হয় জুনায়েদ। সবার সঙ্গে কথা বলছিল সে। তবে তাকে নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি বাবা-মা।

ওই সময়ে বাড়ির পাশে কৃষিজমিতে কাজ করছিলেন জুনায়েদের চাচা ইউসুফ মোল্লা। ভাতিজার সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেখে এগিয়ে আসেন ইউসুফ। বলেন, ‘জুনায়েদ ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম। মাদ্রাসা থেকে বারবার বাড়ি চলে আসছিল। পরে স্কুলে ভর্তি করে দিই। স্কুলে গিয়েও মাঝেমধ্যে হারিয়ে যেতো। বাড়ি থেকে চলে যেতো। আবার ফিরে আসতো। এক সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয়, তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতেই বিমানবন্দর থানা থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এখন বাড়িতেই আছে।’ 

জুনায়েদ মোল্লা জানায়, অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে বিমানবন্দরে ঢুকে বিমানে উঠে যাই। যাওয়ার পথে আটকায়নি কেউ। তবে বিমানে উঠার পর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এজন্য বিমানের লোকজনের প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনি। আসলে কাছ থেকে কখনও বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরে গিয়ে জানলাম, সেখানে কাছ থেকে বিমান দেখা যায়। পরে লোকজনের কাছ থেকে জেনে, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরে চলে যাই।’ 

বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, ‘শিশুটির অভিভাবকদের খবর দিয়ে রাতেই তার চাচা ইউসুফ মোল্লার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসলে সে বুঝতে না পেরে ভুল করে বিমানে উঠে গিয়েছিল।’  

মুকসুদপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিমানবন্দর থানা পুলিশ আমাদের থানায় ফোন করে শিশুটির পরিবারকে খবর জানাতে বলে। পরে তার পরিবারকে খবর দিই। পরে তারা বিমানবন্দর থানায় গিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বর্তমানে সে বাড়িতে আছে।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ