• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হস্তশিল্প

পাট, হোগলাপাতার পণ্য যাচ্ছে ২৬ দেশে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২৩  

রাজবাড়ী শহর থেকে পূর্ব দিকে ছোট্ট পাকা রাস্তা ধরে পাঁচ কিলোমিটার পেরোলে ভবদিয়া গ্রাম। রাস্তার দুই পাশে ফসলি মাঠ। এ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই কৃষিজীবী। সহজ-সরল এ লোকজন অভ্যস্ত সাধারণ জীবনযাপনে। তাদের নেই উচ্চাভিলাষ। তবু অভাব-অনটন পিছু ছাড়ে না। সম্প্রতি অবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। একটি কারখানাকে ঘিরে স্থানীয়দের মুখে ফিরেছে সচ্ছলতার হাসি। বহু মানুষ পেয়েছেন জীবিকা নির্বাহের উপায়। 

২০১৫ সালে ভবদিয়ার এক একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট। ক্রমেই এর ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। কারখানাটিতে পাট, কচুরিপানা, হোগলাপাতা, ধানের খড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ১০০ রকমের পণ্য। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে অন্তত ২৬টি দেশে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত দুই হাজার শ্রমিক হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল। তাদের মধ্যে ৮০০ জন কারখানায় এসে কাজ করেন; ১ হাজার ২০০ কর্মী বাড়িতে বসেই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েকজন শারীরিক প্রতিবন্ধীও।
এ কারখানায় তৈরি হচ্ছে নার্সারি পট, ফ্লোর ম্যাট, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুড়ি, টিফিন বক্স, পেট হাউস, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ফুল ঝুড়িসহ নানা পণ্য। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব, জাপান, হংকং, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ডের মতো দেশে।

এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বেশির ভাগই নারী। একসময় যাদের দিন কেটেছে অর্থকষ্টে, কারখানাতে কাজের সুবাদে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। তেমনই একজন সদর উপজেলার হাউলি জয়পুর গ্রামের সালমা আক্তার। তিনি জানান, তাঁর স্বামী দিনমজুর। করোনাকালে তাদের পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। দুই বছর হলো এ কারখানায় কাজ করছেন। এখন তাদের সংসার ভালো চলছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছেন। দু-একটা শখের জিনিসও কিনতে পারছেন।
একই কথা জানিয়েছেন কারখানার শ্রমিক ময়না বেগম, নাজমা খাতুনসহ কয়েকজন। প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক রূপালী খাতুন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি জানান, তিনি ভাবেননি কেউ তাঁকে কাজ দেবে। এখানে কাজ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন।

গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের সহকারী ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন সুজন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শ্রমিক নারী। অনেকে বাড়িতে বসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। দেশ-বিদেশে তাদের প্রতিষ্ঠানের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে খুবই ভালো হতো। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর চালাতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান ২০০৭ সালে ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের দিকে তারা রাজবাড়ীতে আরেকটি কারখানা স্থাপনের চিন্তা করেন। এখানে শুধু পাট নয়, হোগলাপাতা, ধানের খড় ও কচুরিপানা দিয়ে পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। রপ্তানির পাশাপাশি এগুলো অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে পাটপণ্যের সঠিক ব্যবহার হলে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকত। পাটচাষিরাও লাভবান হতেন।
তিনি জানান, তাদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে ঝুড়ি, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, লেডিস ব্যাগ, ফ্রুট বক্স, লন্ড্রি বক্স, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ট্রে, ফুল ঝুড়ি ইত্যাদি রপ্তানি হয়।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের কার্যক্রম খুবই ভালো। আমরা তাদের সহায়তা করছি। পণ্যগুলো বেশ মানসম্মত।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ