• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

উন্নয়নমুখী সরকারের বিকল্প নেই

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে গত এক দশকে বড় ধরণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। যা একেবারেই অবিশ্বাস্য! বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন, ঢাকা-এলেঙ্গা চার লেন সড়ক, সর্বশেষ সংযোজন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এবার সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে আরেকটি পালক সংযোজন হচ্ছে। আর সেটি হলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। যার মধ্য দিয়ে কর্ণফুলীর এপাড়-ওপাড় সংযোগ গড়ে উঠবে বাধাহীন। অর্থনীতির চাকাকে টেনে নিবে দ্রুত গতিতে।

এই যে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে এতো বড় বিপ্লব হয়ে গেছে তার নেপথ্যের কারিগর একজন। তিনি আর কেউ নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই গত এক দশকে দেশের যোগাযোগ খাতের চেহারা আমূল পাল্টে গেছে। নীরব ঘটে যাওয়া এই বিপ্লবের পরও সমালোচকদের মুখ থামছে না। আর কতো পরিবর্তন হলে সমালোচকরা বলবেন, আমরা সত্যি সত্যিই বদলে গেছি। আমাদের আত্মমর্যাদা বেড়েছে বহুগুণ। কবে তারা বলবেন, আমরা এখন অন্যের মুখাপেক্ষি নই, আমরা ধীরে ধীরে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠছি। এটা অবশ্য সমালোচকদের বিষয়। তারা শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করবেন নাকি কিছুটাও হলেও শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিবেন- এটা নিতান্তই তাদের বিষয়।

কিন্তু কে কৃতিত্ব দিলো আর কে দিলো না সেই দিকে না গিয়ে আমরা বরং দেশের যোগাযোগখাতের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে কিছু আলোচনা করতেই পারি। তলা বিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে পরিচিত কিংবা বলা যেতে পারে এমন দুর্নাম বহন করে দশকের পর দশক চলা বাংলাদেশ, গত এক দশকে ধীরে ধীরে কীভাবে বদলে গেছে এবং বদলে যাচ্ছে সেদিকে একটু মনোনিবেশ করা।

২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো খুবই ভগ্নদশা। সড়ক গুলো ছিলো ছোট। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, টানেল, এক্সেপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীত করার কোনো ভাবনাই আমাদের মাথায় আসেনি। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। আমাদের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা এ নিয়ে কখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বা চিন্তা করেছেন সেটা মনে করা খুবই কঠিন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে বঙ্গবন্ধু সেতু ছাড়া যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে আর বড় কোনো প্রকল্প কখনও দেখেনি এদেশের মানুষ। তাই গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এদেশের যোগাযোগখাতে যা ঘটে গেছে তাকে বিপ্লব ছাড়া আর কি বলবেন?

১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেন। তারপর দেশের এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। যার কিছুকিছু বাস্তবাযন হলো। কিছু বাস্তবায়নের পথে। ঠিক তখন পাঁচ বছর মেয়াদী তার সরকার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনী যুদ্ধে মাঠে নামলেন। সেই যুদ্ধে তার প্রধান শক্তি ছিলো এদেশের মানুষ এবং ভোটার। তাদের উপর তিনি আস্থা রেখেছিলেন। আশা ছিলো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে তার অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করবেন। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আরো উদ্যোগ নিবেন।

আরো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিবেন সামনের দিকে। দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বিশ্ব দরবারে। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের রায় থেকে বঞ্চিত হলেন শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। যদি স্পষ্ট করে বলা যায়, তাহলে বলতে হবে ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে জোর করে পরাজিত করা হয়েছিল। এদেশেরই কিছু কু-চক্রিমহল তথাকথিত সুশীলরা মিলে তত্ত্ববাধায়ক সরকারকে প্রভাবিত করে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকেই নিজেদের মতো করে সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত করা হলো। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে না পারলেও আওয়ামী লীগ যে সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল সেটা পরিস্কার হয় ভোটের হিসাব দেখলে। পারজিত দল হয়েও আওয়ামী লীগ সেবার এককভাবে ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অপরদিকে যাদেরকে নির্বাচনে বিজয়ী করে আনা হয়েছিল সেই বিএনপি-জামায়াত জোট ভোট পেয়েছিল ৪৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট। ভোটপ্রাপ্তির এই হিসাব বলে দিচ্ছে সবধরণের বিরোধীতার পরও ভোটারদেরকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা থেকে বিমুখ করা যায়নি।

সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে আগের মেয়াদে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যেসব পরিকল্পনা শেখ হাসিনার সরকার নিয়েছিলেন সেগুলো আর এগোয়নি। বরং আওয়ামী লগের বিরোধীতা করতে গিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ‘‘ধান ভাঙতে শিবের গীত ’‘ গাইছি। হ্যাঁ, কিছু কিছু সময় ধান ভাঙতে শিবের গীতই গাইতে হয়। এই কথাগুলো বলার কারণে হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক এবং দেশপ্রেমিক সরকারের ধারবাহিকতা না থাকলে যে, দেশের উনয়ন মারত্বকভাবে বাধাগ্রস্থ হয় তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ২০০১-এ এসে সরকারের ধারবাহিকতা না থাকা। বলা যায়,পরিকল্পিতভাবে সেই ধারবাহিকতা রক্ষা করতে দেওয়া হয়নি। এর একটাই উদ্দেশ্য দেশকে পিছিয়ে দেওয়া। তার প্রমাণও আমরা দেখতে পেয়েছি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। উন্নয়নের দিক থেকে দেশকে যেমন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যারা মুক্তিযুদ্ধের অগ্রভাগে ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ সেই নেতৃত্বকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল। যাতে আর কোনোদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশে সরকার গঠন না হয়। আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। তবে রাখে আল্লাহ মারে কে। যার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত আছে তাকে তো আর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনাই আজ দেশের কাণ্ডারি।

যাক এবার আসি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রসঙ্গে। লেখার শুরুতেই বলেছি, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছে। এরই ধারবাহিকতায় নির্মাণ করা হয়েছে দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এ রূপ দিতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে এই টানেল। যার নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল।

৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটারের এই টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এর পরদিন অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর থেকে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এরমধ্য দিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে টানেলের যুগে। আর এই টানেল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে পর্যটন নগরী সাগরকন্যা কক্সবাজার, দেশের সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাবে। টানেলের চট্টগ্রাম অংশে প্রবেশ করে ওই পাড়ে আনোয়ারা দিয়েই বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।

যেটি এই অঞ্চলের মানুষের কল্পনাতেও ছিলো সেই অকল্পনীয় কাজটিই হয়ে যাচ্ছে টানেলের যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে। আর এরমধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যেসব মেগা প্রকল্প চলমান, সেগুলো বাস্তবায়ন শেষ হলে সুফলও পাওয়া যাবে। বাড়বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।

এই যে এতো এতো কর্মযজ্ঞ গত এক দশকেরও বেশি সময়ে হয়ে গেলো এবং আরো হচ্ছে সেটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। তাই এখন আমাদের আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে, ভাবনার সময় এসেছে- এই দেশটাকে একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই, না-কি দরিদ্র ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ যারা কি-না অন্যদের সহযোগিতায় চলবে দশকের পর দশক, যুগের পর যুগ। যদি আমরা পরিবর্তন করতে চাই অর্থাৎ দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই, একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে, একটি সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদেরকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এদেশের সচেতন ভোটাররা। তাদের সুচিন্তিত রায় আগামী দিনে দেশের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটা মনে রাখতে হবে, উন্নয়মুখী সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ