• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৪  

প্রায় ১১ বছর পর দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে তারা নামমাত্র উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বাড়িভাড়া ভাতা পান। এরইমধ্যে বিষয়টি দেখভালের জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উদ্যোগে শিক্ষকরা এমন সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সর্বশেষ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের চিকিৎসা ও বাড়িভাড়া ভাতা বেড়েছিল। বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের সঙ্গে উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং বাড়িভাড়া ভাতা পান। এর মধ্যে মূল বেতনের ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা। চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার এবং বাড়িভাড়া ভাতা ৫শ টাকা পান। সরকারি শিক্ষকরাও তা পান। তবে তারা গড়ে ১৫শ টাকা পান চিকিৎসা ভাতা। আর বাড়িভাড়া ভাতা স্ব স্ব স্থান অনুযায়ী। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের ভাতার টাকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতার মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। বাড়িভাড়া ভাতায় ফারাক চোখে পড়ার মতো। এজন্য আপাতত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫শ টাকা থেকে বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। 

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সরকার শিক্ষকদের ভাতার বিষয়ে ইতিবাচকভাবে না ভাবলে আলোচনা শুরু হতো না। এরইমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া বাড়াতে হলে অতিরিক্ত কত টাকা বরাদ্দ লাগবে তা বের করার জন্য। শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভোরের কাগজকে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়ার ভাতা বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেব। তিনি বলেন, এতদিন আমরা অবকাঠামোর বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এবার শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতার জন্য বরাদ্দ চাইছি। 

প্রসঙ্গত, গত ৪ মে সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে এক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পার করেছে, তারা যেন মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত আসতে পারে এবং তারা যেন ঝরে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আর শিক্ষকের মর্যাদা ও বেতনের বিষয়টি নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের পোস্টটিতে মন্তব্যের ঘরে অনেকে শিক্ষামন্ত্রীর এমন আশ্বাসকে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।  এ কে লস্কর নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘স্যার, আপনার মুখে বেতন ভাতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে, এই কথা শুনতে চাই না। আপনি শিক্ষকদের অভিভাবক, তাই আপনার মুখে শুনতে চাই, জুনে অথবা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বেতন ভাতা বৃদ্ধি পাবে। যদি, তবুও, চলমান আছে, গবেষণা চলছে, কমিটি গঠন করা হয়েছে- এমন অনিশ্চিত কথা শিক্ষকরা বহু শুনছে। তারা আর এ ধরনের কথা বিশ্বাস করে না। তাই কবে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করবেন, তার সঠিক সময় বলবেন। তাহলে সব শিক্ষক খুশি হবেন এবং আপনাকে মন থেকে দোয়া করবেন এবং আপনাকে চিরজীবন মনে রাখবেন।’ এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ‘স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ’ এর নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। 

প্রসঙ্গত, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতার মাত্র ২৫ শতাংশ দেয় সরকার। এই ভাতা বাড়াতে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলো। সেদিনের বৈঠকের পর বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, উৎসব ভাতা নিয়ে আমি নিজে থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাব, যাতে তা নিশ্চিত করতে পারি। অর্থের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সব সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে গেলে কতটুকু অর্থ লাগবে সে পরিমাণটুকু আমরা পাব। তাই এখনই আমার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না। এখনই যদি প্রতিশ্রুতি দেই, তাহলে সেটা হবে বিভ্রান্তি ও প্রতারণামূলক। আমি অঙ্গীকার করতে চাই, শিক্ষকদের এই বিষয়টা আমি সরকারের যথাযথ পর্যায়ে আলোচনা করব। প্রধানমন্ত্রী দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার করেছেন উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে জাতির পিতার পর সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে হোক অথবা মাদ্রাসার মাধ্যমে হোক। সমাজের সবাইকে এটা বলতে (স্বীকার করতে) হবে। আমরা প্রায়ই বলি, ১৮শ মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন কে? বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন তিনি। 

জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। আমাদের দাবির ভিত্তিতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে শিক্ষকরা অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী যখন উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তখনো শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। আর এখন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়ে জানান দিলেন, তিনি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আর্থিক দিক বিবেচনা করে যত দ্রুত বিষয়টির সুরাহা হবে তত শিক্ষকরা খুশি হবেন বলে জানান তিনি। এদিকে গত ২৮ মার্চ এক সেমিনারে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির ফের সুপারিশ করেছিল শিক্ষাবিষয়ক এনজিওর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান। 

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া পাঁচগুণ বাড়িয়ে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। সেই সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতাও বাড়ানো হয়েছিল। এ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের ২৬ হাজার ৪৭টি বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯০ জন এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ১ হাজার ৬০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৩ হাজার ২৫৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী এ সুবিধা পান। এছাড়া সহকারী গ্রন্থাগারিকদের পদ এমপিওভুক্তকরণ এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করা হয়েছিল। সে সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৯৮০ সালে প্রথম এমপিওভুক্ত হন। তারা সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ১০০ টাকা হিসেবে বাড়িভাড়া পাচ্ছেন। তাদের চিকিৎসা ভাতা প্রথমে মাসিক ৬০ টাকা, পরে ১০০ টাকা এবং ১৫০ টাকায় বাড়ানো হয়, যা খুবই অপ্রতুল। 

গত প্রায় ১৮ বছর ধরে এভাবে চলছে। নানা আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার শিক্ষকদের বিষয়গুলো অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গে বিবেচনা করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা সংস্থান করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, সহকারী গ্রন্থাগারিকদের এমপিও প্রদান, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাতা বাড়াল। যথেষ্ট না হলেও এ দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির ক্ষেত্রে এটি বিশাল প্রাপ্তি ও তাদের চাকরিজীবনের একটি ঐতিহাসিক দিন বলে মনে করেছিলেন মন্ত্রী। এর আগের কোনো সরকার এত বেশি বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের যোগ্য মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা এখনো আমরা যথেষ্ট উন্নত করতে সক্ষম হইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সব সময় আন্তরিক।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ