• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কোটি টাকার পরী পালং নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩  

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কোটি টাকার পরী পালং খাটের স্টলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে নিপুণ হাতের তৈরি এ খাট দেখতে প্রতিনিয়ত ছুটছেন দর্শনার্থীরা। ব্যতিক্রমধর্মী ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন ও রাজকীয় নকশায় খাটটি তৈরি করা হয়েছে। ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে চেরাই করে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির গুইমারা ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া এলাকার নুরুন্নবী মিয়া খাটটি মেলার স্টলে তুলেছেন। একই এলাকার কাঠ মিস্ত্রি আবু বক্কর তিন বছর দুই মাসে খাটটি তৈরি করেন। খাটটি এখন বাণিজ্য মেলার ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের ৪২নং স্টলে শোভা পাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টলে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও পুরুষ-মহিলাদের উপচে পড়া ভিড়। খাটটি দর্শনার্থীরা ঘুরেফিরে দেখছেন। কেউ ছবি তুলছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। কেউবা মোবাইলের ভিডিও কলে স্বজনদের দেখাচ্ছেন। কেউবা খাট নির্মাণের ইতিহাস স্টলের ইনচার্জের কাছে জানতে চাচ্ছেন। স্টলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় জমছে। খাটটি নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হয়েছে। খাটটির বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ। কাঠে খোদাই করে খাটের চারকোণে বড় ৪টি পরীসহ ১৬টি পরী রয়েছে। রয়েছে ৪টি চাঁদ ও ৬টি সূর্যের নকশা। পরীগুলোর কানে দুল, গলায় হার, হাতে চুড়ি, নাকে ফুল, দুই হাতের বাহুতে রয়েছে বাজুবন্দ নামের অলংকার, মাথায় ঝুড়ি, বাম হাতে প্রজাপতি আর ডান হাতে মাথার ঝুড়ি ধরে রাখা হয়েছে। পরনে রয়েছে শাড়ি। এ সবকিছুই কাঠে খোদাই করে নিপুণ হাতে খাটের এ কারিগর তৈরি করেছেন।

খাটের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ শৈলিতে ১৬টি পরীর নকশা থাকায় পরী পালং খাট নামকরণ করা হয়েছে। এটা মেশিনে নয়, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়েছে। এর ডিজাইন কিংবা ক্যাটালগ বিশ্বের কোথাও নেই। নিজের এলাকাকে দেশব্যাপী পরিচিতি করার জন্যই শখে এটি তৈরি করা হয়েছে। তৈরিতে কারিগরের মজুরি খরচ হয়েছে ৪০-৪১ লক্ষ টাকা। কাঠের ও বাণিজ্য মেলার স্টল ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে।

ঢাকার উত্তরা থেকে আসা ব্যবসায়ী ওবায়দুল মজিদ জুয়েল বলেন, খাটটি সত্যিই ব্যতিক্রম। নিপুণ হাতের কারুকাজ। মসৃণ ও সুন্দর। কিন্তু দাম হাঁকছেন অনেক বেশি। ৪০ লক্ষ টাকায় খাটটি তিনি কিনতে চেয়েছেন। বিক্রেতা এক কোটি টাকা দাম চেয়েছেন। তাই কেনা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী ফিরোজ ভুঁইয়া বলেন, মেলায় প্রবেশ করেই কোটি টাকার খাটের কথা শুনেছি। তাই ছুটে আসলাম। দাম বেশি। তবে খাটটি দেখতে সুন্দর।

নরসিংদীর শিবপুর থেকে আসা কলেজ ছাত্রী সাবরিনা আক্তার বলেন, আর্থিক সংকটে আমাদের পরিবারের পক্ষে এতদামি খাট ক্রয় করা সম্ভব নয়। তবুও খাটের সঙ্গে সেলফি তুলে এবং স্বজনদেরকে মোবাইলে ভিডিও লাইভে দেখিয়েছি। খাটের কারুকাজ দারুণ হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, পরী পালং খাটের স্টলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ব্যতিক্রম ডিজাইনের খাটটি দেখতে সুন্দর। খাটের দাম অনেক বেশি। তাই শখের বশীভুত হয়ে কেউ খাটটি কিনতে পারেন।

খাটের মিস্ত্রি আবু বকর বলেন, তিন বছর দুইমাসে খাট তৈরিতে যে মজুরি পেয়েছি। তুলনামূলক ভাবে তা খুবই কম। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ি খাটের কারুকাজ করেছি। কাঠের গুণগত মান ভালো থাকায় খাটটি টেকসই হবে।

ডিজাইনার নুরুন্নবী মিয়ার ছোট ভাই অন্তর মাহমুদ বলেন, পরী পালং খাটের মূল্য ১ কোটি টাকা দাম হাঁকছেন। এ পর্যন্ত খাটটি সর্বোচ্চ ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে। খাগড়াছড়িতে খাটের দাম ৮০ লাখ টাকা উঠেছিল। খাটের ডিজাইনার ও পরিকল্পনাকারী নুরুন্নবী মিয়া চেয়েছেন ব্যতিক্রমধর্মী এ খাটটি বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শন করতে। তার ইচ্ছানুযায়ী খাটটি এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

খাটের ডিজাইনার নুরুন্নবী মিয়া বলেন, খাট নির্মাণ মজুরি, সেগুন কাঠ ক্রয়, পরিবহন, স্টল খরচসহ বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। এককোটি টাকা হলে পরী পালং খাটটি বিক্রি করা হবে। খাটের ক্রেতার জন্য রয়েছে মোটরসাইকেল ও এক ভরি ওজনের স্বর্ণের গয়নাসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ