• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হাজীদের জন্য মক্কায় নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২২  

সউদী আরবের পবিত্র শহর মক্কায় নির্মাণাধীন আবরাজ কুদাই বিশ্বের বৃহত্তম হোটেল হতে যাচ্ছে। এতে অতিথিদের জন্য ১০ হাজার কক্ষ থাকবে। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম একক ভবন বিশিষ্ট হোটেল হচ্ছে এমজিএম গ্র্যান্ড লাস ভেগাস, যেখানে ৬,৮৫২টি কক্ষ রয়েছে। সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, আবরাজ কুদাই-এ এমজিএম গ্র্যান্ডের থেকেও ৩ হাজারের বেশি কক্ষ থাকবে৷

হজে আসা মুসল্লিদের জন্যই মূলত বিশাল এলাকাজুড়ে এ হোটেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। হোটেল না বলে এটিকে ছোটখাটো শহর বলাই ভালো, কারণ এর ১০ হাজার কক্ষে ৩০ হাজার অতিথি থাকতে পারবেন। বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান দার আল-হানদাসাহর নকশায় ১৪ লাখ বর্গমিটার এলাকায় নির্মাণাধীন আবরাজ কুদাই নামের ওই হোটেলটি মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেলের চেয়েও বড়। এটি তৈরিতে সউদী সরকারের খরচ পড়ছে ৩৫০ কোটি ডলার। মক্কার কেন্দ্রস্থল মানাফিয়া এলাকায় নির্মিত হচ্ছে এটি। ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩০ বর্গফুট আয়তনের হোটেল কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক শপিং মল, হেলিপ্যাড, রেস্তোরাঁ, ফুড কোর্ট, বাস স্টেশন, বলরুম ও কনভেনশন সেন্টার থাকবে।

বিশ্বের বৃহত্তম হোটেল হতে যাওয়া আবরাজ কুদাই প্রকল্প সউদী আরবের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। পুরো হোটেলের নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও তহবিল ব্যবস্থার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয় পালন করছে। পবিত্র কাবা শরিফ থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই হোটেল ২০১৭ সালে অতিথিদের জন্য খুলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণে ২০১৫ সালে এর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফের কাজ শুরু হলে ধারণা করা হয়েছিল, ২০১৯ বা ২০২০ সালের দিকে মক্কায় গিয়ে আবরাজ কুদাইয়ে থাকার সৌভাগ্য হবে বিশ্ববাসীর। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর আঘাতে আবার থেমে যায় প্রকল্পের কাজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সউদী আরবও করোনার ছোবলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পরপর দুই বছর হজ ও ওমরাহ সীমিত আকারে আয়োজন করতে বাধ্য হয় সউদী সরকার। এর প্রভাব পড়ে সউদী অর্থনীতিতে। তবে এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছরই আবরাজ কুদাই খুলে দেয়া হতে পারে।

আবরাজ কুদাই হোটেলে থাকছে ১০ হাজার কক্ষ। এসব কক্ষে একসঙ্গে ৩০ হাজার অতিথি থাকতে পারবেন, যা একটি ছোটখাটো শহরের জনগোষ্ঠীর সমান। সেই হিসেবে এটিকে হোটেল না বলে শহর বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। মক্কায় নির্মিতব্য অত্যাধুনিক ভবনগুলোর মধ্যে একটি হতে যাচ্ছে আবরাজ কুদাই। হোটেলের নকশা মনকাড়া করতে কসুর করেনি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দার আল-হানদাসাহ। হোটেলটির নকশা তারা করেছে অনেকটা বিয়ের কেকের মতো, ভবনের নিচের অংশ চওড়া এবং ওপরের দিকটা সরু। আয়তাকার স্তম্ভের রং গোলাপি আর জানলার কাচের রং রাখা হয়েছে নীল। হোটেল ভবনটি দেখলে অনেকটা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের স্বাদ পাওয়া যায়। আবরাজ কুদাই প্রকল্প এলাকায় আবাসিক ঘরবাড়িও থাকছে।

আবরাজ কুদাই ভবনের ১২টি সুউচ্চ টাওয়ারে কক্ষগুলো থাকবে। টাওয়ারগুলো কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে যাতে অতিথিরা কক্ষে বসে সহজেই বাইরের নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। ১০টি টাওয়ারে ৩০টি ফ্লোর আর বাকি দুটিতে থাকবে ৪৫টি ফ্লোর। ১২টি টাওয়ারে থাকবে ৭০টির মতো রেস্তোরাঁ, হেলিপ্যাড ও রাজ পরিবারের জন্য নির্ধারিত ফ্লোর। ১২টির মধ্যে দুটি টাওয়ারে পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলে জানিয়েছে দার আল-হানদাসাহ। বাকি ১০টি টাওয়ারে চার তারকা হোটেলের বন্দোবস্ত পাবেন অতিথিরা। হোটেলের অভ্যন্তরীণ নকশা মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হচ্ছে। কাজাখস্তানের বিভিন্ন শহরে সুদৃশ্য ভবনের পাশাপাশি দুবাইয়ে কয়েকটি বিমানবন্দরের নকশা করে বিশ্বব্যাপী নাম কুড়িয়েছে দার আল-হানদাসাহ। প্রতিষ্ঠানটির স্থপতিরা তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন, ‘বিশাল অঞ্চলজুড়ে যে আবরাজ কুদাই নির্মাণ করা হচ্ছে শুধু তাই নয়, টাওয়ারগুলোর উচ্চতার জন্যও এটি মানুষের দৃষ্টি কাড়তে বাধ্য। সউদী আরবের নিজস্বতার পাশাপাশি ইসলামি সর্বজনীনতার বিষয়টি বিবেচনা করে হোটেলটির আধুনিক সুনিপুণ নকশা করা হয়েছে।’

হোটেলের বাইরের নকশা দার আল-হানদাসাহ করলেও ভেতরের নকশা করেছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আরিন হসপিটালিটি কোম্পানি। এই হোটেলের সর্বোচ্চ টাওয়ার গম্বুজাকৃতির হবে। এই গম্বুজের চারদিকে চারটি হেলিপ্যাড ফুলের চার পাপড়ির মতো সাজানো থাকবে। এসব টাওয়ারে হজের জন্য আসা মুসল্লিসহ ভ্রমণকারীরা নিরুপদ্রব, নিশ্চিন্ত সময় কাটাতে পারবেন। তাদের নামাজের জন্য হোটেলে থাকবে সুনির্দিষ্ট হল। পর্যটকরা যাতে আবরাজ কুদাই হোটেলে ব্যাপক মুগ্ধতা ও আরাম-আয়েশের মধ্যে সময় কাটাতে পারেন, এজন্য সেখানে রাখা হবে ৭০টির বেশি রেস্তোরাঁ। হোটেল কর্র্তৃপক্ষ আশা করছে, আবরাজ কুদাইয়ের জাঁকজমকপূর্ণ ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সউদী রাজপরিবারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এতে সমাগম ঘটবে। এজন্য তাদের জন্য রাখা হবে আলাদা থাকার ব্যবস্থা। বিশেষ করে সউদী রাজপরিবার ও তাদের অতিথিদের জন্য থাকছে একটি টাওয়ারের পাঁচটি ফ্লোর। সাধারণ অতিথিদের ওই ফ্লোরগুলো ব্যবহারের অনুমতি থাকবে না।

আবরাজ কুদাই হোটেলের বেজমেন্টে কনভেনশন সেন্টার, শপিং মল, আড়াই হাজারের বেশি গাড়ি রাখার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া হোটেলে থাকছে একটি বাস স্টপ যেখান থেকে পুরো মক্কা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাবা শরিফে যাতায়াত করা যাবে। অতিথিদের আরাম ও বিনোদনের জন্য সবচেয়ে হালনাগাদ ও বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে হোটেল কর্র্তৃপক্ষ। বিশ্বের অন্যান্য বিলাসবহুল হোটেলের মতো অতিথিদের জন্য আবরাজ কুদাইয়ে থাকছে সর্বোৎকৃষ্ট মানের সুযোগ-সুবিধা। এতে ২৪ ঘণ্টার অভ্যর্থনা সেবা, বেশ কয়েকটি লিফট, এলিভেটর, চার ও পাঁচ তারকা মানের সুবিশাল কক্ষ, ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্যুট কক্ষ, রেন্ট-এ-কার সুবিধা, জিম, বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকছে। অতিথিদের জন্য বেশ কয়েকটি স্পা রয়েছে আবরাজ কুদাইয়ে। এসব স্পাতে সর্বোচ্চ সেবা দানের দিকে নজর দিয়েছে হোটেল কর্র্তৃপক্ষ। স্পাগুলোতে মাসাজ, ফ্রেশ থার্মাল ওয়াটার বাথ, স্ক্রাব, সনাসহ শরীর সতেজ করার আরও হরেক রকমের সেবা পাবেন কাস্টমাররা। মাসাজ করার সময় তারা হোটেলের বাইরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

অতিথিদের জন্য উন্নত মানের সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বন্দোবস্ত রাখায় সবার পক্ষে আবরাজ কুদাইয়ে থাকা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগালের বাইরে এ হোটেলের ভাড়া। একটি সিঙ্গেল কক্ষের ভাড়া প্রতি রাতে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি বলে জানা গেছে। উদ্বোধনের পর বুকিংডটকম, এক্সপেডিয়াডটকম, ট্রিপঅ্যাডভাইজারডটকম, অ্যাগোডাডটকমসহ অন্যান্য হোটেল বুকিং সাইট থেকে আবরাজ কুদাইয়ের কক্ষ বুক করা যাবে। সূত্র: দ্য ট্রাভেল।ৃ

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ