• শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ভাদ্রের অসহ্য গরমে সুস্থ থাকার উপায়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

চলছে ভাদ্র মাস। শরতের শুরুর এই মাসটি মানেই সূর্যের গনগনে আঁচে ঝলসে যাওয়া কিংবা মেঘলা দিনের প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ হওয়া। এমন ভ্যাপসা গরমে তরতাজা মানুষই যেখানে নাকাল হয়ে পড়েন, শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের কী হাল হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই এমন গরমে শুধু এসির উপর ভরসা না করে অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। অসুস্থতার ধরন ও তার প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে রোগ সামলানো সহজ হয়। 

ভ্যাপসা গরমে যেসব অসুস্থতা দেখা দেয়

এমন গরমে অতিরিক্ত কাজ, খেলা বা ব্যায়াম করলে পেশিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে। একে বলে হিট ক্র্যাম্প। ঘাম ও চড়া রোদের যুগলবন্দিতে র‌্যাশ বেরোতে পারে চামড়ায়।

রান্নারান্না সেরেই এসি চালিয়ে বিশ্রাম নিলে, বাইরে থেকে এসে ঘাম না শুকিয়ে ঠান্ডা পানি খেলে বা ঠান্ডা ঘরে বসে পড়ার মতো অনিয়ম করলে জ্বর-সর্দি-কাশি এড়ানো কঠিন।

ভাদ্রের রোদের দিন হিট এক্সারসানে খুব বেশি ঘাম হয়। রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েন। দ্রুত শ্বাস পড়ে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নিলে এখান থেকে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

হিট সিনকোপ নামের সমস্যায় রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান।

হিট স্ট্রোকে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমজোরি হয়ে হঠাৎ শরীরের তাপ বেড়ে যায়। ১০৫ ডিগ্রির উপর। এটা কিন্তু জ্বর নয়। এর সঙ্গে ঘাম হয় না বলে শরীরের তাপ বেরোতে পারে না। বিপদ বাড়ে।

ভাদ্রে সারা দিন খুব ভ্যাপসা গরমের পর সন্ধের দিকে ঝড়বৃষ্টি এলে হঠাৎ ৭-৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে যায়। অ্যাজমার রোগীদের এই সময় যত্নে রাখুন। তাপমাত্রার ওঠানামায় এই রোগীদের অ্যাটাক হতে পারে।

বিপদ ঠেকাতে যা করবেন

প্রস্রাব হলুদ হয়ে গেলে বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে পানি খাওয়া বাড়ান। পানি খাওয়ার বিধিনিষেধ থাকলে অবশ্য আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।  

ডিহাইড্রেশন এড়াতে মদ-কফি-কোলা খাওয়া কমান। পেট একটু খালি রেখে হালকা খাবার খান। বেশি খেয়ে রোদে বের হবেন না বা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না।

চড়া রোদ এড়ানো সম্ভব না হলে বেরনোর আগে এক গ্লাস পানি খান। প্রেশার-সুগার না থাকলে লবণ-চিনির পানি বা ওর স্যালাইন খেতে পারেন। এক-আধবার ডাবের পানি, টাটকা ফলের রস বা ঘোলও খেতে পারেন। রাস্তার পানি, শরবত বা কাটা ফলের রস খাবেন না।

রোদে বের হলে ছাতা/টুপি, সানগ্লাস ও হালকা সুতির পোশাক পরুন।

রোদে বা গরমের মধ্যে অনেকক্ষণ টানা কাজ করবেন না। কাজের ফাঁকে ঠান্ডা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে ফিরুন।

হাঁপানি রোগীরা এই সময় দিনের শেষে আকাশে মেঘ দেখলে প্রিভেন্টার ইনহেলারের একটা পাফ নিন। বা যদি মনে হয় কষ্ট শুরু হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের ডোজ বাড়ান।

সমস্যা হলে যা করবেন

পেশিতে ব্যথা হলে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন। ওআরএস খেতে হবে। ছাতা, টুপি ও সানস্ক্রিনে সান বার্ন ও র‌্যাশ ঠেকানো না গেলে দিনে দুই-তিন বার ঠান্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ক্যালামাইন লাগান। অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হতে পারে।

হিট এক্সারশন হলে গরম থেকে সরে গিয়ে বিশ্রাম নিন। কষ্ট না কমা পর্যন্ত লবণ-চিনির শরবত বা ওরস্যালাইন খেতে থাকুন। ডাবের পানিও খেতে পারেন। কষ্ট কমতে শুরু করার পর হাত-মুখ ধুয়ে ফ্যান বা এসি চালিয়ে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিন।

অজ্ঞান হয়ে গেলে ব্যাপারটা এমারজেন্সি। খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে গরম থেকে সরিয়ে ঠান্ডা পানি শরীর বার বার মুছুন এবং মাথায় ঢালুন। জোরে ফ্যান বা এসি চালিয়ে দিন। স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে স্নানও করাতে পারেন। অজ্ঞান না হলে বাথটবে শুইয়ে দেওয়া যায়। এর পাশাপাশি শরীরে লবণ-পানির ঘাটতি মেটাতে হয় দ্রুত। জ্ঞান থাকলে রিহাইড্রেশন সল্ট খাওয়াতে থাকুন। অজ্ঞান হলে বা বমি করলে স্যালাইন চালাতে হবে। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ