• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সরস্বতী পূজা উদযাপন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

গত ৪ বছর ধরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় বিশাল উচ্চতার সরস্বতী মূর্তি পূজা হচ্ছে। এতে সরস্বতী পুজায়  ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের আমবাড়ী গ্রামের শ্রীশ্রী রাধাগবিন্দ ও গনেশ পাগল সেবাশ্রম চত্ব¡রে ৬৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমায় সরস্বতী পুজার আয়োজন করা হয়। ২০২৩ সালে এখানে  ৬০ ফুট উচ্চতার মূর্তিতে পূজা হয়েছে। ২০২২ সালে ৫০ ফুট উচ্চতার সরস্বতী মূর্তি পূজা হয়। ২০২ সালে ৩৫ ফুট উচ্চতার মূর্তিতে পূজা দিয়ে বিশাল উচ্চতার মূর্তিতে পূজার প্রচলন করা হয়। তাই এ পূজা ও মূতি দেখতে গোপালগঞ্জসহ  আশপাশের জেলা থেকে ভক্ত ও পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে আসছে আমবাড়ি গ্রামে। ৩ দিন পর্যন্ত ( ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) এখানে মূর্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে বসেছে গ্রমীণ মেলা। 
বুধবার ( ১৪ ফেব্রুুয়ারি) আমবাড়ী গ্রামে পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন শত শত ভক্তবৃন্দ। ঢাক, ঢোল, কাশির বাদ্য ও উলুধ্বনিতে গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। আয়োজকদের দাবি, এটিই হচ্ছে এ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমায় সরস্বতী পূজা। 
এ বিশাল  প্রতিমাটি তৈরী করেছেন ভাস্কর শ্রীবাস গাইন। 
এ পুজায় গত ৪ বছর ধরে আমবাড়ী গ্রামের আশপাশের এলাকার মানুষ জড়ো হয়ে আসছেন। এছাড়াও বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, ফরিদপুর. যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আত্মীয়-স্বজন আসেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।   এ পূজাকে কেন্দ্র করে বসেছে ৩দিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা। আয়োজন করা হয়েছে ধর্মীয় যাত্রাপালা ও কবি গানের। 
পাল শ্রীবাস গাইন (৪৮)বলেন, আমি আমার ৮ জন সহকারীকে নিয়ে এক মাস ধরে এ প্রতিমাটি নির্মাণ করেছি। আমি এর আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের প্রতিমা তৈরী করেছি। আমি এ ধরনের প্রতিমা তৈরী করতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে থাকি। কিন্তু এটা আমার গ্রামের পূজা । আমাকে আয়োজকরা যা দিবে আমি তাতেই খুশি। তবে আমি এর আগে গত বছর এ স্থানে ৬০ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরী করেছিলাম। এবছর ৬৫ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরী করেছি। 
পুরোহিত অশোক ভট্রাচার্য (৪৫) বলেন, আমি ২০ বছর ধরে পূজা করি। কিন্তু এতো বড় প্রতিমায় কোন দিন পূজা করিনি। আমার আজকে অনেক স্থানে পূজা করার কথা ছিল, কিন্ত সব বাদ দিয়ে এখানে পূজা করতে এসেছি। এতো বড় প্রতিমায় পূজা করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
পূজা কমিটির সভাপতি সুনীল চন্দ্র বিশ্বাস (৪৮) বলেন, আমরা এলাকার যুবকরা মিলে এ পূজার আয়োজন করেছি। গত বছর আমরা ৬০ ফুট উচ্চতার প্রতিমায় সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছিলাম।  এ বছর ৬৫ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমায় পূজার আয়োজন করেছি। আমাদের এ পূজায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। আমরা এ ধরনের পূজার আয়োজন করতে পেরে খুবই আনন্দিত। আগামী কাল শুক্রবার পর্যন্ত ৩দিন এখানে মূর্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমদের আযোজন দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছেন। 
পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্রনাথ গাইন বলেন, এ পূজা দেখার জন্য বাগেরহাট জেলা থেকে আমাদের বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। এদেরকে নিয়ে আমরা সবাই আনন্দ ফুর্তির মধ্যে দিয়ে পূজা উদযাপন করছি। আগামীতেও আমরা এ পূজা চালিয়ে যাবো।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ৫বছর আগে এ আমবাড়িতে ৩৫ফুট উচ্চতার প্রতিমা দিয়ে বড় পরিসরে এখানে সরস্বতী পূজা শুরু হয়েছিল। এ বছর ৬৫ফুট উচ্চতার প্রতিমা দিয়ে পূজা হচ্ছে। আমার জানা মতে এটিই এ উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিমায় সরস্বতী পূজা।
বরিশাল থেকে আগত সুধীর মধু বলেন, আমি আমবাড়ী গ্রামের জামাই। যখন জানতে পারলাম ৬৫ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমায় পূজা হবে তখন এ পূজা দেখার জন্য স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে শ^শুরবাড়ী চলে আসলাম। আমার জীবনে এতো বড় সরস্বতী প্রতিমা দেখেনি। 
কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান তুষার মধুু বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এতো বড় সরস্বতী পূজা হচ্ছে শুনে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আগামীতে যাতে এ পূজা আরো বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমার পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজকদের সার্বিক সহযোগিতা করবো।
কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া। এখানে আমরা হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করি। আমার জানামতে এ উপজেলায় এ বছর ছোট বড় প্রায় সহস্রাধিক সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ পূজার আনন্দ আমরা কোটালীপাড়াবাসী ভাগ করে নেই। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ