• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

রিপোর্টারের ডায়রি। জেলা প্রশাসকের সাথে সারা দিন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

বৃহস্পতিবার(২২ ফেব্রুয়ারী)দিনটি কেটেছে বেশ ভাল।দিনভর নানা কর্মসূচীতে যোগদান শেষে বিকেলে স্বোচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগদান।সেময় বাইরে মুসলধারে বৃস্টি, আমরা ভবনের দোতালায় তখন পাহাড়ি মেয়েদের পরিবেশনায় দেখছিলাম পাহাড়ি নৃত্য।আর তাদের নানা উপস্থাপনা। জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলমও বেশ আগ্রহ ভরে উপভোগ করছিলেন অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানটি করছিল বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাস্ট কনসার্ন্(বি.ওয়াই.এফ,সি)নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। এখানে দুঃস্থ ও অসহায় ছেলে মেয়েদেরকে লালন পালন সহ তাদের লেখা পড়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি কোটালীপাড়ার অজপাড়াগা রাধাগঞ্জে মাদক নিরাময় কেন্দ্র করে সেখানে মাদক সেবীদেরকে চিকিৎসা দিয়ে নানা ধরনের মানসিক সাপোর্ট দিয়ে সুস্থ করে  বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে। অনেকেই তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাড়িতে গিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করছে।

এসময় জেলা প্রশাসকের সাথে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাসনা শারমিন মিথি, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন, কোটালীপাগা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার রন্টি পোদ্দার, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আয়নাল হোসেন সেখ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বি.ওয়াই.এফ,সি-র দাবী প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ওই প্রতিষ্ঠানকে নগদ দুই লাখ টাকা ও ৫টি ল্যাপটপ দেয়ার ঘোষনা করেন। তিনি পরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে মাদক সেবীদের সাথেও কথা বলেন। কেন তারা মাদকে আশক্ত হয়ে পড়েছিল এবং মাদক সেবন বাদ দিয়ে এখন তারা কেমন আছে এসব খোঁজ খবর নেন। নানা উপদেশ মূলক কথাও বলেন তাদেরকে।

সেখান থেকে বেরিয়ে জেলা প্রশাসক রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেন।সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ভীম চরন বাকচী তাঁকে স্বাগত জানান।

সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসক দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হাতে চাল, ডাল, নানা খাবার প্যাকেট, কম্বল তুলে দেন। এসব মালামাল পেয়ে দরিদ্র লোকজন বেশ খুশি হন।

এর আগে জেলা প্রশাসক বাগান উত্তরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝটিকা সফরে গিয়ে বেশ বেকাদায় ফেলে দেন শিক্ষকদেরকে।বিদ্যালয়ের লেখা পড়ার মান নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষকদেরকে আরো যত্নবান হবার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।পঞ্চম শ্রেনীতে ইংরেজি ও অংক ক্লাশ নেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। ক্লাস নিতে গিয়ে দেখেন শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও অংকে বেশ কাঁচা। তাছাড়া শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতিতেও রয়েছে বিস্তর অসংগতি। আর এসব কারনে শহরের শিক্ষার্থী ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানার বা বোঝার রয়েছে অনেক ফারাক তাও তিনি বললেন।এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা শিক্ষকদের জানা নাই এমনটি বোঝা যাচ্ছিল। এসব সমস্যা কাটিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদেরকে ঠিকমত শিক্ষা প্রদান করা হয় তার তাগিদ দিলেন জেলা প্রশাসক। তা’ছাড়া যেসব শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃতও করেন।

এসব কর্মসূচীতে যাবার আগে সকালে জেলা প্রশাসক কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বাস্তবায়িত বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপজেলা ভিত্তিক ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি ও বাইসাইকেল বিতরণ করেন। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্তরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৪৫জন ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠী শিক্ষার্থীকে ২লক্ষ ৩৫হাজার টাকার বৃত্তির চেক ও ১০জন শিক্ষার্থীর মাঝে ১০টি বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়। 

এর আগে জেলা প্রশাসক স্থানীয় ঘাঘর বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত ও পৌর কিচেন মার্কেটকে ব্যবসা সফল বিপনী বিতান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক হাওলাদার, ঘাঘর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। 

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম ঘাঘর বাজারের ফুটপাত দখল মুক্ত ও পৌর কিচেন মার্কেটকে একটি ব্যবসা সফল বিপনী কেন্দ্রে পরিণত করা হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস প্রদান করেন।

বিকেলে জেলা প্রশাসক কোটালীপাড়ার দেবগ্রমাম আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের সুখ দুঃখের খোজ খবরও নেন।

দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিনের বাসায় ছিল আমাদের আতিথেয়তা নেবার পালা।তিনি তার সাধ্যমত দেশীয় মাছ-মাংশ আর অন্যান্য যেসব খাবারের ব্যবস্থা করেন তা ভোলর নয়। মেন্যুতে ছিল অন্ততঃ ২০ প্রকারের আইটেম।খাবার যেমন মানসম্মত ছিল, তেমনি সুস্বাধুও ছিল। তার চেয়ে বড় কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিনের আন্তরিকতা ছিল মনে রাখার মতো।

সারা দিন পর যখন জেলা সদরে ফিরি তখন রাত হয়েছে। ঘরে ফেরার পালা আমাদের। তখন আবারো বৃস্টি শুরু হয়েছে।সারা দিনের ক্লান্তি ছাপিয়ে বিছানায় আরামের ঘুম।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ