• শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ডায়াবেটিস এবং এর ভয়াবহতা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০১৯  

ডায়াবেটিস রোগটি এখন আর অপরিচিত কোনো রোগ নয়। একদমই অতি পরিচিত রোগ। দিনকে দিন এর এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সেই সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা এবং মৃত্যুঝুঁকিও। অথচ একটু সচেতন হলেই কিন্তু এ রোগ সৃষ্টি না হওয়া এবং হলেও এর জটিলতাকে সহজেই রুখে দেয়া সম্ভব। ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন তাতে কম হবে তেমনিভাবে এ সংক্রান্ত অযাচিত আর্থিক ক্ষতিও মোকাবিলা করার সুযোগ তৈরি হবে।

এ সকল বিষয়কেই সামনে রেখেই প্রতিবছর ১লা মার্চ জাতীয়ভাবে পালিত হয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। কারণ অধিকাংশক্ষেত্রে সচেতনতাই রুখে দিতে পারে ডায়াবেটিস এর মতো রোগ এবং এর জটিলতাকে।

 এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। দেশ হিসেবে আমরা ৮৮তম অবস্থানে আছি। দিনকে দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্বসহ অন্যান্য রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

স্বভাবতই ডায়াবেটিস কেন হয় সেটা না জানলে তো আর তা প্রতিরোধ করা সম্ভবপর নয়। এ কারণে এ রোগ সৃষ্টির পেছনে কী কী কারণ দায়ী তা মাথায় রাখাটা খুবই জরুরি। তার আগে বলে নিই –ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের। একটা হচ্ছে ইনসুলিন নির্ভরশীল(টাইপ-১) আর একটা হচ্ছে ইনসুলিন নির্ভরশীল না থাকা (টাইপ-২) ডায়াবেটিস।

প্রথমটি অর্থাৎ ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিসের (টাইপ-১) ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব থাকে। ফলে অল্প বয়সেই এ রোগ ধরা পড়ে এবং তখন আজীবন শরীরে ইনসুলিন নিতে হয়। এটা হয়ত জন্মগতকারণে অথবা শরীরে ইনসুলিন তৈরির জন্য যে কোষ (বেটা সেল) আছে তাকে শরীর নিজেই ধ্বংস করে ফেলার কারণে হয়ে থাকে।

অন্যদিকে ইনসুলিন নির্ভরশীল না থাকা (টাইপ-২) ডায়াবেটিস সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পরে গিয়ে শুরু হয়। যদিও এখন আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে যে, ৪০ বছরের আগেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। দেশ হিসেবে আমরা ৮৮তম অবস্থানে আছি। দিনকে দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্বসহ অন্যান্য রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে, স্থুলতা বা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া বা মোটা হয়ে যাওয়া। এর সাথে হাঁটাচলা কম করা, মানসিক উদ্বিগ্নতা, কম ঘুমানো, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, চিপস ইত্যাদি বেশি খাওয়া।

তাই নিজেই এখন হিসেবে করুণ আপনি কি অতিরিক্ত মোটা? শারীরিক পরিশ্রম কম করেন? এবং আপনি কী উপরে উল্লেখিত খাবার খাচ্ছেন নিয়মিত? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে এখনই সতর্ক হোন। রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করান। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আবার শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না। জীবনযাত্রাও বদলাতে হবে। পরিমাণমতো ঘুমানো, অহেতুক টেনশান, মদ্যপান না করা এসবকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। যদি রাতে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যায় তাহলে সকালে হাঁটুন।

সকালে না পারলে রাতে বাসায় ফেরার পথে যানজটে বসে না থেকে নেমে হাঁটতে থাকুন। তাহলে রক্তের অতিরিক্তি গ্লুকোজ শরীরে ব্যবহৃত হয়ে যাবে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও তাতে কমবে। তার মানে উপরে উল্লেখিত খাবার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবশ্যই অবশ্যই হাঁটতে হবে। না হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কিন্তু কমবে না।

ডায়াবেটিস একবার শরীরে বাসা বেঁধেছে শুনলে আমরা যতটা সচেতন হই তার চেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা। আর যাদের এরই মধ্যে এটা ধরা পড়েছে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ/ইনসুলিন গ্রহণ করা যাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এর জটিলতা বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে অযাচিত খরচ। বাড়বে মৃত্যুঝুঁকিও।

ডায়াবেটিসজনিত আর্থিক খরচের হিসাব দিয়ে এ লেখার ইতি টানছি। তাহলে বুঝতে পারবেন এটা কিভাবে একটা পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে ফোকলা করে দিতে পারে। আগেই বলেছি আমাদের দেশে ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এখন ধরুন একজন রোগীর যদি প্রতিমাসে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সে হিসেবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাবদ বাংলাদেশে প্রতি মাসে ১৪ শত কোটি টাকা এবংবছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (সূত্র: বিবিসি বাংলা, ২১ অক্টোবর, ২০১৮) ।

তাহলে ভাবুন একটা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারে যদি একজনেরও ডায়াবেটিস হয় তাহলে সে ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে কি প্রতি মাসে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা খরচ করা সম্ভব? আর জটিলতা তৈরি হলে তো টাকার কোনো হিসাব কষেই লাভ নেই। তাই আসুন নিজে সচেতন হই। সচেতন করি পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে। রুখে দিই ডায়াবেটিস এবং এর ভয়াবহতাকে।

লেখক : চিকিৎসক ও শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ