• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বিশ্ব ইজতেমার বিশেষ অলংকার ‘যৌতুকবিহীন বিয়ে’

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমায় ৭২ জোড়া বর-কনের যৌতুক বিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার  (৩ ফেব্রুয়ারি) শূরায়ে নিজামের অনুষ্ঠিত ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর যৌতুক বিহীন এই বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ে মানবজীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী-পুরুষের হৃদয়ের প্রশান্তিলাভের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিবাহবন্ধন।

নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায় এবং চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। বিবাহের মাধ্যমে যেমন কোরআন-হাদিসের ওপর আমল হয়, তেমনি সামাজিক স্বীকৃতি ও শান্তিসমৃদ্ধি অর্জিত হয়।

বিয়েতে যৌতুক বন্ধে বাংলাদেশে ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮’ রয়েছে। সেখানে যৌতুকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যৌতুক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হিসেবে এক পক্ষ কর্তৃক অন্য পক্ষের কাছে দাবি করা অর্থসামগ্রী বা অন্য কোনো সম্পদ। এ দাবি বিয়ের আগে, পরে বা বিয়ের সময়—যখনই হোক না কেন, তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে।

তবে ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের ক্ষেত্রে দেনমোহর যৌতুক বলে গণ্য হবে না। আবার বিয়ের আসরে অতিথিরা নিজের ইচ্ছায় উপহার প্রদান করলেও তা যৌতুক নয়।

আমরা জানি যে বিয়ের জন্য ইসলাম কর্তৃক নারীর ভরণ-পোষণ ও মহরকে আবশ্যকীয় করেছে। বিয়েকে কেন্দ্র করে পুরুষকে হাতখুলে খরচের কথাও বলা হয়েছে। ওলিমাকে করা হয়েছে সুন্নত।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বর্তমানে অযাচিতভাবে মহরের বিধানকে উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যৌতুকনামক অভিশাপ। নামকাওয়াস্তে মহরের কথা বিয়ের সময় উল্লেখ হলেও যৌতুকের বোঝা বহন করতে হয় মেয়েপক্ষকে। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হলো, ক্রমান্বয়ে আমাদের সমাজ থেকে যৌতুকের পাপ মুছে দিতে উদ্যোগী হচ্ছে সচেতন সমাজ। বিশেষ করে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা নগদ মোহরে যৌতুকবিহীন বিয়েকে উৎসাহিত করে আসছে কয়েক যুগ ধরে।

বিশ্ব ইজতেমা সূচনার কয়েকবছর পর থেকেই ইজতেমার দ্বিতীয় দিন আসরের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয় বিয়ের আকদ পর্ব। আগে থেকেই মাশওয়ারার মাধ্যমে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি বয়ান মঞ্চের পাশে এই আকদ পড়ান। এবারের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমায় ৭২ যুগলের যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান। এই যৌতুকবিহীন বিয়েকে বলে হয় বিশ্ব ইজতেমার একটি বিশেষ অলংকার।

বিশ্ব ইজতেমায় বিয়ের জন্য আগে থেকেই দায়িত্বশীলরা বর ও কনেপক্ষের লোকদের তালিকা সংগ্রহ করে থাকেন। বিয়ের আগে বাদ আসর বয়ানের পর বিয়ের খুতবা প্রদান করা হয়ে থাকে। পরে ওইসব বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ে পড়ানো হয়। আর বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্যে খোরমা-খেজুর বিতরণ করা হয়। এই বিয়েতে থাকে না কোনা যৌতুক এবং মহর থাকে ছেলের তাওফিক বা সামর্থ অনুযায়ী। নগদ মহরের শর্তেই ইজতেমায় বিয়ে সম্পন্ন হয়।

তুরাগ নদের তীরের বিশ্ব ইজতেমা যেহেতু মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত তাই এখানে উপস্থিত থাকেন লাখো মুসল্লি। এছাড়া বর্তমানে মিডিয়ার কল্যাণে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ তা ভার্চুয়ালি দেখে থাকেন। ময়দানের যৌতুকবিহীন নগদ দেনমহরের বিয়ের শিক্ষা তাই পৌছে যায় লাখো মানুষের কাছে। তারা এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের পাড়া-মহল্লায় এর প্রতিফলন ঘটান। তারা যৌতুককে না বলেন। এভাবেই ইজতেমা মানুষের ইমান আলোকিত করার পাশাপাশি সমাজের পাপ-পঙ্কিলতাকে দূর করছে। ইসলামের সঠিক শিক্ষার বিস্তার ঘটাচ্ছে। সুন্দর হচ্ছে আমাদের দেশ ও সমাজ। দূর হচ্ছে যৌতুকনামক অভিশাপ।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ