• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বিতরণ: যা বলে শরিয়ত

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

ইসলামে আরবি হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাত। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

অর্থ: ‘আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টিকুলের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন’। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

এ রাতটিই আমাদের দেশে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। এ রাতে আমাদের কর্তব্য বেশি বেশি নেক আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা; যেন আল্লাহর রহমত ও ক্ষমায় আমরাও শামিল হতে পারি।

শবে বরাত শব্দটি ফারসি। যার বাংলা অর্থ হলো- ভাগ্য রজনী। সন্দেহের অবকাশ নেই শবে বরাত অত্যন্ত বরকতময় রাত। তাই বলে শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা সুস্পষ্ট সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি। যদি এই রাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা হয় তাহলে তা কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। কারণ কোরআন নাজিল হওয়া ক্বদরের রাতটি ভাগ্য রজনী। সেই রাতে তকদির লিপিবদ্ধ করা হয়। সূরা আল কদরে ইরশাদ হয়েছে, تَنَزَّلُ الْمَلٰٓئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ

অর্থ: ‘সে রাতে (লাইলাতুল কদরে) ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে’। (সূরা: আল-ক্বদর, আয়াত: ৪)

আবার সূরা দুখানে ইরশাদ হয়েছে, فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

অর্থ: ‘এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’। (সূরা: দুখান, আয়াত: ৪)

অতএব, লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান (মধ্য শাবানের রজনি) বা শবে বরাতকে ভাগ্য রজনি বলা বাড়াবাড়ি ও সুস্পষ্ট সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত রামাদানের লাইলাতুল ক্বদর ই হচ্ছে ভাগ্য রজনি।

তবে এই রাত্রিকে যদি আরবিতে ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাত) বলা হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ লাইলাতুল বারাত অর্থ হলো ক্ষমা বা মুক্তির রাত। এই রাত ক্ষমার রাত যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, হাদিসের পরিভাষায় এটিকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনি বলা হয়। অতএব, আমাদের উচিত হাদিসে উল্লিখিত পরিভাষাটি বলতে অভ্যস্ত হওয়া।

শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বিতরণ: যা বলে শরিয়ত

সদকা ও হাদিয়া সব সময়ই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন বা দরিদ্রদের হালুয়া-রুটিসহ যে কোনো খাবার খাওয়ানো, হাদিয়া পাঠানো নাজায়েজ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণকে শবে বরাতের জরুরি বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল মনে করলে তা বিদআত গণ্য হবে। হালুয়া রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণ করা শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমল নয়।

শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে না করলে বা এ রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণ করা নাজায়েজ নয়।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ