• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সৎমা নার্গিস নৃশংসভাবে হত্যা করে শিশু জোনাকিকে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৪  

বাবার কাছ থেকে ঈদের জামা আর কসমেটিস সামগ্রী কিনে নিতে এসে সৎ মায়ের প্রতিহিংসার বলি হয়েছে ৯ বছরের  মর্জিনা আক্তার (জোনাকি) নামে এক শিশু। মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত জোনাকির বাবা শাহীন তরফদার তার দ্বিতীয় স্ত্রী নার্গিস বেগমকে নিয়ে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন। পাঁচ বছর আগে জোনাকির বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদ হয়। তার মা বর্তমানে তুরস্কে আছেন। সে বেনোপোলে তার নানীর কাছে থাকত।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ নিহতের সৎ মা নার্গিস বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে যশোর ডিবি পুলিশ নার্গিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার মৃতদেহ উদ্ধারের ১০ ঘন্টা পর তিনি জোনাকিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর তাকে ঘটনাস্থল নিয়ে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে পুলিশ।

ঘাতক নার্গিস ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, স্বামী কর্তৃক তিনবার তার গর্ভের সন্তান নষ্ঠ হওয়ায় ক্ষোভে তিনি জোনাকিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। নিহত জোনাকি যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানাধীন পোড়াবাড়ি গ্রামের শাহীন তরফদারের মেয়ে। নিহতের বড় ভাই তাওহিদ হোসেন চয়ন বলেন, পাঁচদিন আগে জোনাকি বেনাপোল পোড়াবাড়ি থেকে বাবার রেলগেটের বাসায় বেড়াতে যায়। সোমবার সকাল ১০টা থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সৎ মা আমাদের জানিয়েছিল পাশেই স্টেশন; সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতে জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে বাবার বাসার পাশে পুকুর থেকে বোনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত শিশু জোনাকি খাতুনের (৯) নানা সুরুজ মিয়া আহাজারি করতে করতে বলছিলেন ‘চাঁদের মতো ফুটফুটে একটা শিশু। তার তো কোনো শত্রু থাকার কথা না। ঈদের জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। তার পরে আমার নাতনিডারে কসমেটিকস দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে এসে মেরে ফেলেছে ওর সৎ মা। ওই খুনির সঙ্গে দেখা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করব; আমার নিষ্পাপ নাতনিডারে কেন এভাবে মারল। তার তো কোনো দোষ নেই।’

নিহত জোনাকির নানা সুরুজ মিয়া বলেন, জোনাকির বাবা শাহীন তার মা কহিনুরকে রেখে শহরের রেলগেট এলাকায় নার্গিস বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করে। তাদের সংসারে জোনাকি ছাড়াও তার আরও দুই ভাই বোন রয়েছে। শাহীন অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করায় কোহিনুর তার তিন সন্তানকে আমার কাছে রেখে তুরস্কে পাড়ি জমায়। এরপর তারা তিন ভাইবোন আমার কাছেই মানুষ হয়। মাঝে মধ্যে আমার নাতনিরা রেলগেট এলাকায় তার বাবা ও সৎ মায়ের কাছে বেড়াতে আসে। শুক্রবার জোনাকিকে ঈদের জামা আর কসমেটিক কিনে দেওয়ার নাম করে তার সৎমা নার্গিস যশোরের বাসায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে আজ দুপুরে বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘ ঈদের জামা আর কসমেটিকের জায়গায় আমার নাতনিকে তারা কাফনের কাপড় দিল।’

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকে জোনাকির (৯) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতের মুখ, হাত, পা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এ ঘটনায় ওই মেয়েটির সৎ মাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রায় ১০ ঘন্টা পর হত্যার দায় শিকার করে নেয় জোনাকির সৎ মা নার্গিস বেগম। এরপর রাত ১০টার দিকে নার্গিস বেগমকে ঘটনাস্থল তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সে হত্যার বিবরণ দেয়। এসময় জোনাকির কাপড় ও জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।

যশোর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মফিজুল ইসলাম বলেন, জোনাকি বেনাপোলে তার নানীর কাছে থেকে একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। সে ঈদের জামা কেনার জন্য শহরে বাবার ভাড়া বাড়িতে এসেছিল। সোমবার জোনাকির বাবা শাহীন ইজিবাইক চালাতে বের হয়ে গেলে নার্গিস বেগম তাকে গলা টিপে হত্যা করে। ঘাতক সৎ মা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

হত্যার কারণ হিসেবে নার্গিস বেগম জানিয়েছে তার গর্ভে আসা তিনটি সন্তান স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করেছে। যে কারণে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। জোনাকি রেলগেটে তার বাড়িতে বেড়াতে আসার পর তিনি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর মৃতদেহ দরজার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। বাড়ির সবাই যখন জোনাকিকে না পেয়ে থানায় জিডি করতে যায়, সেই সুযোগে তিনি মৃতদেহ নিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেন। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ