• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বইমেলায় খণ্ডকালীন চাকরি পাওয়ার গল্প

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বইয়ের টানেই প্রতিদিন বইপ্রেমীরা ছুটছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। স্টলে স্টলে ঘুরছেন। খোঁজ করছেন নতুন গল্প, কবিতা, উপন্যাসের। আর পাঠকদের হাতে প্রিয় বইটা তুলে দিচ্ছেন একদল চৌকস বিক্রয়কর্মী। তাঁদের খণ্ডকালীন চাকরি পাওয়ার গল্প শুনুন তাহলে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোর্শেদ আলম। মেলার শুরু থেকেই ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের স্টল সামলাচ্ছেন। খণ্ডকালীন চাকরি পাওয়ার টুকরো গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা বছরের বইয়ের আড়ত বাংলাবাজার। ওখানেই আমার বাসা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দোকানগুলো ঘিরেই আমাদের বন্ধুদের আড্ডাটা আবর্তিত হয়। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের অফিস ঘরে এ রকমই এক আড্ডায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বইমেলায় কাজ করার প্রস্তাবটা পাই। কিছু না ভেবেই সম্মত হয়েছিলাম। এখন দেখছি ভুল করিনি। বইয়ের পাশাপাশি লেখক ও পাঠকদেরও কাছ থেকে দেখছি। আয়ের দিকটা তো আছেই। সব মিলিয়ে এ এক অনির্বচনীয় আনন্দ।

শুধু মোর্শেদই নন, তাঁর মতো অনেকেই খণ্ডকালীন কাজ করছেন বইমেলার বিভিন্ন স্টলে। এ বছর বইমেলায় ৪৯৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে খণ্ডকালীন কাজ করছেন, এ রকম কর্মীর সংখ্যা অনেক। তাঁদের বেশির ভাগই মেলায় চাকরির খোঁজ পেয়েছেন পরিচিতজনদের মাধ্যমে। তবে ভিন্নধর্মী গল্পও শোনা যায় অনেকের মুখে। সে রকমই একজন হলেন রাইহানা ইসলাম। বইমেলায় খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন পূর্বা প্রকাশনীর স্টলে। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র সরকারি কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক পাস করা এই শিক্ষার্থী নিজের চাকরিটি পেয়েছেন ফেসবুকের মাধ্যমে। তিনি জানান, বইমেলায় কাজ করার আগ্রহ তাঁর অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই এ বছর বইমেলা শুরুর আগে থেকেই এ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে পূর্বা প্রকাশনীর একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। সরাসরি প্রকাশককে আমার আগ্রহের কথা জানাই। তিনি আমাকে জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে কাজ শুরুর প্রস্তাব পেলাম।’

আবার একই হলের বন্ধুরা শখের বশে বিক্রেতা হয়েছেন, এমন ঘটনাও আছে। এমনই চারজন হলেন তানজিরুল, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাইমিন রেজা ও রতন মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এই চার আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, এমনিতে ফেসবুকে অবসর সময় কাটে। বইমেলায় শখের বশে খণ্ডকালীন কাজটা নিলেও এখন আমরা বুঝছি ভুল করেনি। এই কয়দিনে বইয়ের সঙ্গে এক অন্য ধরনের সখ্য তৈরি হয়েছে।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নির্দেশনা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তা–ই করা হয়েছে। আমাদের এখানে ১০ জন বিক্রয়কর্মী। প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব তরুণপ্রাণের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রতিবছর মুখিয়ে থাকি।’ সারা মাস কাজ করে একজন বিক্রয়কর্মী প্রতিষ্ঠানভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পান বলে জানান তিনি।

রীতিমতো জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়ে, মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে বিক্রয়কর্মীর কাজ পেয়েছেন ফাতেমা জান্নাত। তেজগাঁও কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমা প্রকাশনে কাজ করার আগ্রহ ছিল। সিভি পাঠিয়েছিলাম। প্রকাশনা সংস্থা মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নির্বাচিত করেছে।

তবে পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে মেলায় কাজ করছেন এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ রকমই একজন মহিউদ্দিন মহসিন। পড়াশোনা করছেন ঢাকা কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। সহপাঠীর কাছ থেকে খোঁজ পেয়ে আগামী প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এমনি বই পড়ার খুব একটা অভ্যাস নেই। ইদানীং বুঝছিলাম, বাইরের বই না পড়লে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই সহপাঠীর কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়েছি। এই এক মাস বইয়ের কাছাকাছি থেকে ওর প্রতি এক অন্য ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ