• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

যুদ্ধশেষের আগের কয়েক দিন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা থাকলেও ভারত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়নি। তবে অংশ নেয়ার প্রয়োজন যে হতে পারে- এমন ভাবনা ভারত সরকারের মধ্যে জাগ্রত ছিল। এর জন্য ২১ নভেম্বর ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমম্বয়ে যৌথকমান্ড গঠন হয়।

মুক্তিবাহিনীর একের পর এক গেরিলা আক্রমণে নাজেহাল হয়ে পড়ে সুসজ্জিত পাক সামরিক বাহিনী। দেশের কিছু এলাকার ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ হারায়। এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হঠাৎ করে ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি শহরে বিমান আক্রমণ করে বসে।

বিকেল ৫টা ৯মিনিটে পাকিস্তানের পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় ভারতের কাশ্মিরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশে; আর সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি বিমান আক্রমণে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে পাঠানো হয় ভারতের ভূখণ্ডের প্রায় মধ্যভাগে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় ভারতের ভূখণ্ডে আক্রমণে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাক বাহিনী যুদ্ধরত থাকা অবস্থায় আবার কেন ভারতের মতো বৃহৎ শক্তিশালী দেশে আক্রমণ করলো; তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। পাকিস্তানের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তই ভারতকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে টেনে আনে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাবস্থাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে এবং বিশ্ববাসীর নজর অন্য দিকে ঘোরাতে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে।

বিকেলে যখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন, তখন ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। খবর পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্রুত দিল্লি ফিরে আসেন এবং মন্ত্রীদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। গভীররাত পর্যন্ত চরে বৈঠক। শেষে মধ্যরাতের পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধাবস্থা' ঘোষণা করেন এবং সামরিক বাহিনীকে পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহতের নির্দেশ দেন। 

৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। ভারত বিমান হামলা চালিয়ে মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে পাক বিমান বাহিনীকে প্রায় অকার্যকর করে ফেলে।

ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলে চারদিক থেকে সম্মুখ অভিযানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ ডিসেম্বর থেকে (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ৩ ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে ২ ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে ২ ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আরেকটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে অগ্রসর হয়। যৌথবাহিনীর আক্রমণের মুখে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাক বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক তাদের ঘাঁটির পতন হতে থাকে। 

পাক সামরিক জেনারেলরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন উত্তরে চীন ও দক্ষিণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের জন্য সহায়তা আসছে। সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে ছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সহায়তা আর আসেনি। যৌথ বাহিনীর আক্রমণের মুখে মাত্র ১০/১২ দিনে পরাজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় পাক সামরিক বাহিনী।  

১২ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর কামানের শব্দ শোনা যায়। ১৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর হাউসে আক্রমণ চালায়। এরপর গভর্নর মালিক পদত্যাগ করেন। ঢাকায় ঢুকতে শুরু করে মিত্র বাহিনীর সদস্যরা। তখন অবশিষ্ট থাকে শুধু আত্মসমপর্ণের আনুষ্ঠানিকতা।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ