• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গরমে মাথায় হাত মুরগি খামারির, আম চাষিরাও চিন্তায়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

তীব্র তাপদাহে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে দেশের মানুষের জনজীবন। তাপদাহে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়।

নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আক্রান্তরা বেশি ভর্তি হওয়ায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে ঝিনাইদহে। পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে কমপক্ষে দেড়শ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালেও রোগীর চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। 

প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। এদিকে পর্যাপ্ত বেড না পেয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালে মেঝে বা বারান্দায় শুয়ে। অনেকে করিডোরেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একই অবস্থা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও। 

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধ্যমত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে এ অবস্থা থেকে বাঁচতে রোদ এড়িয়ে চলা, বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ তাদের। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালেও জ্বর-ঠান্ডা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছেই। হাসপাতালের ৩০টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে দ্বিগুণ রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোরও একই চিত্র। 

চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে অসুস্থদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। 

পটুয়াখালীতে তাপমাত্রা থাকছে ৩৯ এর ঘরে। আর এতেই গরমে বাড়ছে নানা রোগ। পটুয়াখালী মেডিক্যালে গেল ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েই ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন। অন্যান্য হাসপাতালেও আছেন শতাধিক রোগী।

গরমে বিপাকে রাজশাহীর আম চাষিরা

অনাবৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর আম চাষি ও বাগান মালিকেরা। পানির অভাবে একদিকে যেমন গাছ থেকে অপুষ্ট আম ঝড়ে পড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে হপার পোকার আক্রমণ। 

সবমিলিয়ে এবার বিনিয়োগের খরচ উঠবে কিনা এনিয়েই ভয়ে আছেন চাষিরা। আম টিকিয়ে রাখতে সঠিক নিয়মে পরিচর্যার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। 
 
এমনিতেই এবছর রাজশাহীর আম বাগানগুলোতে মুকুল এসেছিলো দেরিতে। গেলো বছরের তুলনায় সংখ্যাতেও ছিলো কম। এমন অবস্থায় আম যখন আকার পেতে শুরু করেছে ঠিক তখনই প্রকৃতিতে বইছে তীব্র তাপদান ও অনাবৃষ্টি। এতে ঝড়ে পড়ছে গাছের অপুষ্ট আম। 

শুধু আম ঝড়ে পড়া নয়। তীব্র গরমে বাগানে দেখা দিচ্ছে ক্ষতিকর হপার পোকার আক্রমণ। এ অবস্থায় এবার শুধু আম নয়, গাছ বাঁচিয়ে রাখতেও পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক বাগানি।

বাগান মালিকদের সন্দেহ, এবার হয়তো আম বিক্রি করে পরিচর্যা খরচই উঠবে না। তাই ক্ষতিগ্রস্থ প্রকৃত বাগান মালিকদের সহায়তার আহবান জানিয়েছেন তারা। 

কৃষি বিভাগ বলছে, তীব্র তাপদাহে গাছে ফল ধরে রাখতে নিয়ম মেনে প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের পরিচর্যা নিতে হবে। জেলায় এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির আম বাগানে আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন।

গাজীপুরে প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। নানা কৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়ে মুরগী বাঁচাতে না পেরে কম দামে বিক্রি করছেন অনেকে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক খামার। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।

এক সময়ের ভরা মুরগির খামারগুলো এখন শূন্য। গাজীপুরের খামারি ওবায়দুল হক জানান, প্রচণ্ড গরমে তার খামারে থাকা আড়াই হাজারের বেশি ছোট আকারের ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। যে কারণে কম দামে বাকি মুরগী বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। 

তার মতো আরো অনেক খামারিরও এমন অবস্থা। গরমে প্রতিদিনই খামারের মুরগী মারা যাচ্ছে, কমেছে ডিমের উৎপাদনও। তাপদাহ থেকে রক্ষায় নানা কৌশল নিয়েও খামারের মুরগী রক্ষা করা যাচ্ছেন না। 

এ অবস্থায় খামারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বেসরকারি চিকিৎসকরা খামার ঘুরে ঘুরে দিয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। । 

গাজীপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারগিস খানম বলেছেন, খামারিদের এখন পর্যন্ত কি রকম ক্ষতি হয়েছে তার তথ্য নেই। তবে গরমে খামার রক্ষার জন্য মাইকিং করাসহ নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গাজীপুরে ছোট বড় মিলিয়ে মুরগীর খামার আছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। তীব্র তাপদাহ থেকে মুরগি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন সবাই।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ