• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কৃষি খামারে সফল মাস্টার্স পাস হাসিব, বছরে আয় ২০ লাখ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৩  

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসিব মৃধা। মাস্টার্স পাস করেও চাকরি না করে হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা। কলেজ জীবনে এক বিঘা জমিতে তিনটা গরু আর দেড়শ আম গাছের চারা দিয়ে শুরু করেছিলেন কৃষি খামার। সাত বছরে আজ তার আম বাগান ও খামার ৫২ বিঘা জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। তার কৃষি খামারটির নাম হাজেরা এগ্রো ডেইরি ফার্ম। 

পঞ্চাশ বিঘা জমি জুড়ে নানা জাতের আম বাগান ও বাগানের পাশে দুই বিঘা দুগ্ধ খামার। তার এই কৃষি খামার থেকে প্রতি বছর আয় হয়ে থাকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। হাসিবের বাগান ও খামারে মিলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ১৫টি পরিবারের। সব মিলিয়ে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। 

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবার দুই বিঘা জমিতে দেড়শ আম গাছের চারা ও তিনটি গরু দিয়ে কৃষি খামার শুরু করেন হাসিব মৃধা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খামারে সময় দিতেন তিনি। ধীরে ধীরে কৃষি খামারটির আয়াতন বাড়তে থাকে। সাত বছরে কৃষি খামারটি এখন ৫২ বিঘায় বিস্তৃত হয়েছে।

পঞ্চাশ বিঘা জুড়ে আম্রপালি, আশ্বিনা, হিম সাগর, ল্যাংড়াসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান। এ বছর আমের ফলনও হয়েছে ভালো। মৌসুমের প্রতিদিন প্রায় পচিশ মণের মত আম পারা হয় গাছ থেকে। সেসব আম স্থানীয়সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজারে বিক্রি করেন তিনি। এ বছরে এখন পর্যন্ত তিনি এক হাজার মণ আম বিক্রি করছেন। গাছে এখনও প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ মণের আম গাছে রয়েছে। 

এদিকে আম বাগানের পাশে দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছে একটি দুগ্ধ খামার। খামারে এখন গরুর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশটি। প্রতিদিন এ খামার থেকে আড়াইশ থেকে তিনশ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এসব দুধ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে মিল্কভিটাসহ স্থানীয় বাজারের বড় বড় মিষ্টির দোকানে বিক্রি করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর কুরবানির উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত ষাড় ও গাভী থেকে জন্ম নেওয়া বাছুর বিক্রি করে আসে বাড়তি আয়। পাশাপাশি গরুর গোবর থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। 

আম বাগান ও খামারে মিলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ১৫টি পরিবারের। প্রতিটি কর্মচারীর বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।স্থানীয়রাও দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন বাগান ও খামারে। এ কৃষি খামারের কর্মচারীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ শেষে হাসিবের প্রতি বছর আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছে আরও শিক্ষিত যুবক। 

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা হাসিব মৃধা বলেন, উচ্চ শিক্ষা নিয়ে যে শুধু চাকরি করতে হবে। এমন কোনো কথা নেই। সবাই চায় তার নিজের একটা প্রতিষ্ঠান হোক, আমিও তাই চেয়েছি। তিনটি গরু দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন আমার খামারে গরুর সংখ্যা ৫০। ছোটবেলা থেকেই আমি ভেবেছিলাম অন্যের অধীনে চাকরি না করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি। গত সাত বছরে আমার পরিশ্রমের দ্বারা তা সম্ভব হয়েছে। আমার এই কৃষি খামারে মোট ১৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। আমি তাদের পরিবার নিয়ে খামারে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। সব থেকে বড় কথা আমরা যদি নিজেকে দেশের সম্পদ হিসেবে পরিণত করতে না পারি তাহলে আমাদের অন্যের অধীনে চাকরি করতে হবে। 

স্থানীয়ভাবে আমের পাইকারী বাজার না থাকায় আশানুরূপ ফলন হলেও নায্য দাম না পাওয়ার কথা জানিয়ে হাসিব মৃধা বলেন, স্থানীয় যে কৃষি সংস্থাগুলো রয়েছে তারা যদি আমাদের বাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। বাইরের ব্যবসায়ীরা এলে তখন একটা প্রতিযোগিতা হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা এক প্রকার জিম্মি। তাই প্রতিবছর আমের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। 

দুগ্ধ খামার থেকে উৎপাদিত দুধ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে মিল্কভিটাসহ বেশ কয়েকটি বাজারের মিষ্টির দোকানে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়ে হাসিব বলেন, পঞ্চাশ বিঘা জমিতে আম বাগানের পাশাপাশি দুই বিঘা জমিতে একটি দুগ্ধ খামার করেছি। সেখানে প্রায় ৪০টি গাভী রয়েছে। প্রতিটি গাভী দুধ দেয়। প্রতিদিন সব মিলিয়ে আড়াইশ থেকে তিনশ লিটার দুধ দিচ্ছে। এই দুধ স্থানীয়দের পাশাপাশি মিল্কভিটাসহ বেশ কয়েকটি বাজারের মিষ্টি দোকানে বিক্রি করছি। 

তিনি আরও বলেন, আমার এই কৃষি খামার থেকে কর্মচারীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ শেষে প্রতিবছর প্রায় পনেরো থেকে বিশ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। যা চাকরি করলে সম্ভব হতো না। আমি শিক্ষিত যুবকের দের বলতে চাই আপনারা চাকরির আশা না করে নিজে উদ্যোক্তা হন।

কৃষি খামার থেকে এক কর্মচারী বলেন, ছয় বছর ধরে আমরা এই খামার ও বাগানের কাজ করছি। মাসে আমাদের প্রতিজনের বেতন পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা করে। এখানে কাজ করেই আমাদের ১৫টি পরিবারের সংসার চলে। আমাদের মালিক খুব ভালো মনের মানুষ মাস শেষ হওয়ার আগে আমাদের বেতন পরিশোধ করে। 

স্থানীয় এক বাসিন্দা লিটন বলেন, হাসিব ভাইয়ের এত একটা প্রজেক্ট। এখানে পনেরোটি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসতেছে। আমরা হাসিব ভাইকে নিয়ে গর্বিত।আমাদের এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত যুবকও এই কৃষি খামার করার উদ্যোগ নিচ্ছে। 

কাশিয়ানি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কাজী এজাজুল করীম বলেন, হাসিব ভাই বড় পরিসরে একটি  কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাকে সব সময় কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছি। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ