• সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

  • || ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বাংলাদেশ নামের ইতিহাস

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম । আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, দেখিনি ভাষা আন্দোলন। তবুও আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অথবা দেশের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে রাজাকার বিরোধী আন্দোলন, কিশোরদের দ্বারা সড়কের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন তারই প্রমাণ বহন করে। আজ ঘরে ঘরে শিক্ষার গণজোয়ার, জিপিএ ৫ এর কোথাও কোনো কমতি নেই। তবুও এক অবাক করা বিষয়, যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ কীভাবে হল? আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ কে রেখেছিল? এ দেশের নাম বাংলাদেশ কবে রাখা হয়েছিল?

আমি হলফ করে বলতে পারি এ দেশের কমপক্ষে সিংহভাগ তরুণ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না।

কোনো বিষয়ে অজ্ঞতা থাকলে সেটি কোনো অপরাধ নয়, তবে অজ্ঞ বিষয়ে জানতে বা শিখতে না চাওয়া অলসতার শামিল। ঠিক যদি কেউ নতুন কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকে, তবে সে যদি অন্যদেরকে না জানায়, তবে সে জ্ঞান কৃপণদের মধ্যে পড়ে।

মূল আলোচনায় আশা যাক। বাংলাদেশ নামকরণ মূলত কীভাবে হয়েছিল? এ দেশের নাম কে রেখেছিল বাংলাদেশ?

আমি জন্মের পূর্বে যেমন আমার পিতা ভেবে রেখেছিল তার যদি পুত্র সন্তান জন্ম হয়, তবে আমাকে সাদা কালো জামাটি প্রথম পরাবেন । আমি জন্মের পূর্বে আমার পিতা যেমন ঠিক করে রেখেছিল তার পুত্র সন্তান হলে তার নাম রাখা হবে আদল। ঠিক এ দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক করে রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধের পরে পৃথিবীর বুকে যে নব্য স্বাধীন দেশের জন্ম হবে তার নাম রাখা হবে বাংলাদেশ ।

করাচিতে ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, ওরা (পাকিস্থান সরকার) ‘পূর্ব বাংলা’নাম বদলিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করতে চাচ্ছে। অথচ, আমরা বারবার এই দাবিই করেছি যে, এখন এর নাম শুধু ‘বাংলাদেশ’করা হোক। বাংলাদেশ শব্দের একটি ইতিহাস রয়েছে এবং এর নিজস্ব ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা নাম বদলাতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে গণভোট নিতে হবে। যদি আপনারা এই নাম বদলাতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, তারা এই ধরনের পরিবর্তন মেনে নিবে কি না।’

পরে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-'আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ'।আওয়ামী লীগের নেতারা ওই বৈঠকে বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন। পরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামটি প্রস্তাব করলে তাতে সবাই একবাক্যে সায় দেন।

এই নাম দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন-১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে ‘বাংলা’। এর পর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে ‘দেশ’। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে 'বাংলাদেশ' নামকরণ করা হয়।

এভাবেই পৃথিবীর বুকে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য জন্ম নেয়া একটি দেশের নামকরণ করলেন সেই দেশেরই পিতা বঙ্গবন্ধু।

লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট ও শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ