• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

স্বামী মারা গেলে নাকফুল, কানের দুল ও হাতের চুড়ি পরা কি জায়েজ?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২০  

স্বামীর মারা যাওয়ার পর ইদ্দত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো প্রকার সাজসজ্জা বা অলংকার পরিধান করা জায়েজ নয়। তাই হাতের চুড়ি, নাকফুল, কানের দুল, চেইন ইত্যাদি কোনো কিছুই পড়া যাবে না। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর; জায়েজ সব ধরনের অংলংকার পরিধান করা ও সাজসজ্জা করা যাবে। স্বামী মৃত্যুবরণকারী নারীর ইদ্দতের সময়সীমা হলো চার মাস ১০ দিন।

এই চার মাস ১০ দিন পর্যন্ত সাজসজ্জা এবং অলংকার পরিধান করা নিষেধ। এ সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে আর এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। তখন পরিধান করতে পারবে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থ: ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস ১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোরনা পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৩৪)।

উম্মে আতিয়্যা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনা স্ত্রীলোক স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে ৩ দিনের অধিক শোক প্রকাশ করবে না। অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করবে। আর এ সময় কোনো রঙিন কাপড় পরিধান করবে না, সাদা কাপড় ছাড়া। আর সুরমা ব্যবহার করবে না এবং কোনোরূপ সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করবে না। অবশ্য হায়েয হতে পবিত্র হওয়ার পর সামান্য সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ২৩০২)।

রাসূল (সা.) এর স্ত্রী হজরত উম্মে সালমা (রা.) হতে বর্ণিত- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে স্ত্রীলোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমন্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খেজাব ও সুরমা ব্যবহার না করে। 

ইসলামে শোক পালনের কোনো সুযোগ নেই। এটি হলো শুধু ইদ্দত পালন করবে চার মাস ১০ দিন। এ সময়ের মধ্যে সেই নারী বিয়ে বা বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারবে না। কোনো নারী গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন তার স্বামী মারা গেলে, তখন সেই সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত ওই নারী সাজসজ্জা এবং অন্য কোথাও বিয়ে করতে পারবে না। এটি ইসলামের বিধান। এই বিধানের পেছনে অনেক যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। এ কারণেই মূলত এই বিধান দেয়া হয়েছে। 

তাই তিনি সাজসজ্জা করবেন না। এখানে মনে রাখতে হবে, সাজসজ্জা করা এককথা আর নাকফুল, কানের দুল যেগুলো আছে কিংবা স্বাভাবিক যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকা ভিন্ন কথা। যদি কারো স্বাভাবিক অবস্থা এমনটি হয়, তাহলে তিনি এ অবস্থায় থাকতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোনো দরকার নেই। এটি নাজায়েজ কিছুই নয়। তবে বিশেষ কোনো সাজসজ্জা করা যাবে না।

আরেকটি কথা আমাদের মনে রাখা জরুরি- নারীরা চুড়ি ও নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যায় বলে একটি ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার সমাজে চালু আছে। এটা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী কথা। ইসলামে এ কথার কোনো ভিত্তি নেই।  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের জীবনকাল নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সে সময়ের পূর্বে বা পরে কারো মৃত্যু হবে না। তাই ওই সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ