• সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

  • || ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মানুষের মুক্তি রাসুল (সা.) এর আদর্শে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০১৯  

পৃথিবীর রূপ বদলাচ্ছে জন্ম থেকেই। কালের পরতে পরতে বিভিন্ন সুরতে আমরা পৃথিবীর ইতিহাস দেখতে পাই। কখনো ভালো, কখনো মন্দ। আবার কখনো ভালো-মন্দের মিশেল। এ হলো জগতের সাধারণ ও স্বাভাবিক রীতি। তবে এ রীতিরও উল্টো চিত্র পৃথিবী তার গর্ভে ধারণ করেছে।

আরো পনের শ বছর আগের পৃথিবী। নিকষ আঁধারে ডেকে যাওয়া চারদিক। কোথাও নেই সামান্যতম আলো। সত্য ও সভ্যতার জীবন্ত কবর রচনা করেছিলো অসত্য ও অশ্লীলতা। জীবন্ত পুঁতে ফেলা থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই, যা তখন ঘটা করে করা হতো না। যেনো মানুষের চামড়ার ভেতর জন্ম নেয়া একেকটা পশু। পাশবিক-পৈশাচিক সকল মন্দ আচরণ বাসা বেঁধেছিলো মানুষের মন-মগজে। খুন, লুণ্ঠন, ছিনতাই, ধর্ষণ হয়ে উঠেছিলো তাদের রুটিনওয়ার্ক।

পৃথিবীর এ দুর্দশাগ্রস্ত চরম নাজুক পরিস্থিতিতে 'কুল মাখলুক'র জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরিত হন মুহাম্মদ (সা.)।

তাঁর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও সুকোমল পরশে পাল্টে যেতে থাকে পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র। সজীব,সতেজ, নির্মল হয়ে ওঠে মানবাত্মা। আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় পৃথিবীর পুবে-পশ্চিমে সমানভাবে। পৃথিবী দেখতে পায় আলোর মশাল, আলোকিত ফোয়ারা। বয়ে চলে শান্তির ফল্গুধারা। অপার্থিব এক প্রশান্তি ছুঁয়ে যায় তাঁর অনুসারীদের। পৃথিবীর যে প্রান্তের যে মানুষই তাঁকে অনুসরণ করেছে সেই শান্তির নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। যুগ-যুগান্তরে, একালে-সেকালে। কী আরবে; কী আজমে; সবখানে।

মুমিনের সুখ-শান্তি, সম্পদ-সমৃদ্ধি, সম্মান-মর্যাদা সবকিছুই নির্ভর করে তাঁর অনুসরণ-অনুকরণের উপর। যে ব্যক্তি রাসুলের জীবনকে যতটুকু অনুসরণ করবে সে ব্যক্তি নিজ জীবনে ততটা সফল ও স্বার্থক হবে। মানব জীবনের প্রার্থিত আরাধ্য ধ্যান-জ্ঞান হলো আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। পরকালের নাজাত মুক্তি। এবং এরই মধ্য দিয়ে অনন্ত সুখের জান্নাত নিশ্চিত করা। সে মর্মেই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নতকে (পালন ও প্রচারের মাধ্যমে) জীবিত করবে, সে আমাকেই ভালোবাসবে। আর যে আমাকে ভালোবাসবে, সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৬০২)

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, “বল, ‘যদি তোমরা আল্লহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)

একটা কথা আমাদের ভালোভাবেই জেনে রাখা উচিত 'পাপে আনে দুঃখ,পুণ্যে আনে সুখ।'
যখন আমরা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ অনুকরণ করবো তখন দয়ালু আল্লাহ আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আমাদেরকে ঢেকে নেবেন তাঁর দয়া রহম ও করুণার চাদরে। তখন পৃথিবীর সব শান্তি সমৃদ্ধি ধরা দেবে আমাদের পায়।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর রাসুল (সা.) এর জীবন্ত নমুনা। হযরত আয়শা (রা.) তাঁর অনুপম ভাব ও ভাষায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবে - 'কুরআনই তাঁর চরিত্র।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং : ৩০৮)

তার জীবন-ই কোরআন, কোরআন-ই তার জীবন। কোরআন আরো নান্দনিক শৈল্পিক উপস্থাপনায় বলেছে, ‘মুহাম্মদ (সা.) এর মাঝেই তোমাদের জন্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)

যদি মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে স্থিতি, শান্তি, সমৃদ্ধি পেতে চায় তাহলে মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ ব্যতীত অন্য কোথাও তা পাবে না। এটাই একান্ত এবং একমাত্র পথ যা মানব জীবনের প্রতিটি অনুসঙ্গের বিশ্বস্ত সমর্পিত পথ। এর বাইরে যা আছে সবই চাকচিক্য, মরিচিকা ও অন্তসারশূন্য।

আল্লাহ তাআলা মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও সঠিক পথের নির্ণায়ক মাপকাঠি হিসেবে রাসুল (সা.)-কে মানবীয় সকল গুণের অধিকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। তার মাঝে প্রশংসিত সকল গুণের সমাবেশ ঘটেছিলো। আর সেই অনুপম আদর্শের উজ্জ্বল বিভায় পতঙ্গের মতো আছড়ে পড়েছিলো পুরো পৃথিবী। সত্য ও সুন্দরের বিজয় হয়েছিলো তারই হাত ধরে। সভ্যতার চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ পাঠ অধ্যয়নে তো পৃথিবী তার কাছেই ঋণী।

পৃথিবী পেয়েছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকিত ও মহিমান্বিত হাতে গড়া সমাজব্যবস্থা। যা এর আগে ও পরে কেউ পারেনি, আর পারবেও না। মুসলিম-অমুসলিম সকলেই যার আদর্শকে মেনে নিয়েছিলো নির্বিবাদে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর জন্য শ্রেষ্ঠতম উপহার। 

তার সে রেখে যাওয়া অনুপম আদর্শ পৃথিবীর যে প্রান্তেই প্রাণ পাবে, সে প্রান্ত আবারো হয়ে উঠবে সজীব, জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। দেখা দেবে সুবাসিত বসন্ত। সে অজেয় আদর্শ আজো পৃথিবীর সবখানেই সমানভাবে প্রার্থিত। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আল্লাহ তার ওপর করুণার বারিধারা বর্ষণ করুন।)

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ