• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

এমপিও- শিক্ষার মান বাড়ান

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। সারাদেশের ২ হাজার ৭৩০টি বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত (বেতন-ভাতার সরকারী অংশ) করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৯ বছর বন্ধ থাকার পর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলো। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬৫১টি, মাদ্রাসা ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫২২টি। সব মিলিয়ে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০ হাজার ৫৭৪টি। এমপিওভুক্তের এই সিদ্ধান্ত তথা সুযোগ-সুবিধা কার্যকর হবে গত জুলাই থেকে। এর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। স্বভাবতই যথেষ্ট ঝাড়াই-বাছাই করে যথানিয়মে করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি। পরে অবশ্য কিছু অনিয়ম-অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে, যা সংশোধনযোগ্য। আগামী অর্থবছরে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে সেগুলোর শিক্ষার মান ও পরিবেশ যেন ভাল হয়। নির্দেশনা মানা না হলে এবং ফল আশানুরূপ না হলে এমপিও সুবিধা সেক্ষেত্রে বাতিল করা হতে পারে।

সরকার পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করলেও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত সেই প্রশ্ন তোলা অনিবার্য। কেননা, দেশে বিশেষ করে শিক্ষার মান ও ফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রাথমিক শিক্ষায় গত বছর ফল বিপর্যয় ঘটেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫সহ প্রায় সব সূচকেই খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে পাসের হার কমেছে ১০ শতাংশ। আর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশ। অবনতি ঘটেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে ফেলের সংখ্যা। অতীতের মতো বলা হয়েছে ইংরেজী ও গণিতে খারাপ করায় ঘটেছে ফল বিপর্যয়। উল্লেখ্য, এ দুটি বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব আছে সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী ফল হাতে পেয়ে সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নিবিড় তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি। শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন কি? উল্টো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রায় নিয়মিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন, ধর্মঘটসহ আমরণ অনশনে নামেন, যা কাক্সিক্ষত নয় কোন অবস্থাতেই।

নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও সর্বশেষ অবস্থা হয়েছে লেজেগোবরে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬২৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বছরখানেক আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৌখিকভাবে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না। ফলে তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ে। সর্বোপরি অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও জানা। শিক্ষকদের দুর্বলতার বিষয়টিও সুবিদিত। ফলে ঢালাওভাবে এমপিওভুক্তি সমর্থনযোগ্য নয়। এ নিয়ে রাজনীতিও কাম্য নয় কোন পক্ষের।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ