• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকেই ‘সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে চারবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বাতিল হয়েছে। আইনি পথে খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন বিএনপির আইনজীবী ও নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, মুক্ত হতে হলে খালেদা জিয়াকে ‘সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর ‘প্যারোলে মুক্তি’ প্রসঙ্গ আবারও সামনে আনছেন দলটির অনেকে। তবে বিষয়টি একেবারেই খালেদা জিয়ার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন দলটির আইনজীবী নেতারা। ওই নেতারা বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে মুক্তির ‘সুযোগ’ আছে। তবে সে জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনকেই আবেদন করতে হবে। দলীয়ভাবে সে ব্যাপারে কিছু করার সুযোগ নেই। 

বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপিল বিভাগে যেতে হবে। সেখানে নাকচ করে দিলে জামিনের আর আশা নেই। তখন যদি ম্যাডাম কিছু ভাবেন। প্যারোল প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, এ বিষয়ে দল, পরিবার ও খালেদা জিয়ার সম্মতির ব্যাপার রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ছিল। তবে এবারও জামিন চেয়ে বিফল হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া কারাবন্দী। আর গত বছরের এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়া একজন বন্দী ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষের মতো সুযোগ-সুবিধা একজন বন্দী পেতে পারেন না। তবে তিনি উন্নত চিকিৎসার (অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট) জন্য সম্মতি দিলে, তা হতে পারে। তিনি সম্মতি দিলে মেডিকেল বোর্ডকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত। বোর্ড চাইলে তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়াতে পারবে।

বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, আইনি লড়াই করে তাঁদের নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। তবে এটা ছাড়া তাঁদের সামনে কোনো পথও নেই। তাই তাঁরা জামিনের পথেই হাঁটছেন। এ পর্যন্ত হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে চারবার খালেদার জামিন আবেদন খারিজ হয়। শেষ দুবারে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়ও জামিন মেলেনি।

গত বছরের শুরু দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে প্যারোল প্রসঙ্গ আসে। তখন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলে। তখন বিএনপি প্যারোল প্রসঙ্গটি নাকচ করে দেয়। সম্প্রতি প্যারোল প্রসঙ্গ আবার আলোচনায় আসে। খালেদা জিয়ার পরিবারও বলেছে, তাঁর মুক্তি দরকার, সেটা প্যারোল হলেও। তবে পরিবার বা দল চাইলেও এ বিষয়ে খালেদা জিয়াকেই আবেদন করতে হবে।
গত কয়েক দিনে পরিবার ও দল খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বেশ তৎপর ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথাও বলেন। পরিবারও বিএসএমএমইউর উপাচার্য বরাবর সুপারিশের জন্য আবেদন করেন। এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমঝোতার প্রসঙ্গ উঠলেও, তা অনানুষ্ঠানিকই রয়ে যায়। 

রাজনৈতিকভাবে সরকারকে চাপে ফেলে খালেদাকে মুক্ত করতে পারবে বলে মনে করে না বিএনপির নেতারাও। সেই ব্যর্থতার কথা তাঁরা স্বীকারও করছেন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে সরকারকে চাপে ফেলার মতো কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচিও দিতে পারেননি তাঁরা। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনেই তাঁদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ। যদিও তাঁরা বারবার রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলে যাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই সরকারের ওপর বিএনপি চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কোনো পথ নেই। সরকারের ইচ্ছার বাইরে তো কিছু হচ্ছে না। পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনায় হচ্ছে। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা নিজেদের (বিএনপিকে) বুঝতে হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ