• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে মাছ ধরা প্রতিযোগিতা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১  

‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি-বেকারত্ব দূর করি’ স্লোগানে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো মাছ ধরা প্রতিযোগিতা। মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে অর্ধশত প্রতিযোগী অংশ নেন। এমন প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় খুশি মৎস্যজীবী ও এলাকাবাসী। 

জানা গেছে, কিছু দিন আগেও গোপালগঞ্জসহ এর আশেপাশের এলাকায় মাছ শিকারের প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। মাছ ধরার নেশায় মাছ শিকারীরা দল বেধে নদী, নালা, খাল, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ শিকার করতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের পরিক্রমায় এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না। ইন্টারনেটের এ যুগে মানুষ এখন আর দল বেধে মাছ শিকার করে না।

বর্তমানে যুব সমাজসহ সব স্তরের মানুষকে মাছ চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের পাচুঁড়িয়া এলাকার হেলিপ্যাডের কাছে মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা শহরের পাচুঁড়িয়া এলাকার হেলিপ্যাডের কাছে মুক্ত জলাশয়ে ছিপের ছড়াছড়ি। শিশু থেকে বৃদ্ধ কে-কার আগে মাছ ধরবেন চলছে শীতল উত্তাপ। বড়শিতে টোপ বেধে ফেলা হয়েছে জলে। মাছ কখন টোপ খাবে আর তুলে আনবে তার অপেক্ষা। দুই ঘণ্টার এ প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অর্ধশত প্রতিযোগী অংশ নেন। বেশ কয়েকজন শিকার করেন রুই, তেলাপিয়া, শোল, টাকিসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ।

মাছ ধরা দেখতে জড়ো হয়েছেন শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ। অধির আগ্রহে থাকেন প্রতিযোগীরা কী মাছ ধরছেন। কারো ছিপে মাছ ধরা পড়লেই দেখতে ছুটে যান তারা।

দুই ঘণ্টার প্রতিযোগিতা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিজয়ী তিন জনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাহিদা সুলতানা। এসময় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিযোগী সদর উপজেলার কাঠি গ্রামের হে‌কিনুর মোল্লা (৬০) বলেন, একসময় বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা হতো। আমরা অংশ নিতে ছুটে যেতাম। কিন্তু কালের বির্বতনে এখন আর এমন প্রতিযোগিতা হয় না। এখানে অংশ নিতে পেরে খুব খুশি।

সদর উপজেলার মান্দারতলা এলাকার মো. রেজাউল ক‌রিম (৫৭), জালালবাদ ইউনিয়নের তেতুরিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভবিষ্যতে বার বার এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে বেকার যুবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের কাজের পাশাপাশি মাছ চাষে আগ্রহ বাড়বে। এতে একদিকে যেমন মাছের সংকট দূর হবে, অন্যদিকে বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। 

কা‌ঠি গ্রামের ছে‌টিন মোল্লা (২৫) বলেন, এমন প্রতিযোগিতায় আমি প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছি। এতে আমার খুব ভালো লেগেছে। আগামীতে এমন প্রতিযোগিতা চাই। 

দর্শনার্থী মুন্সী মোহাম্মদ হুসাইন, মো. আব্দুল গফুর, মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা এবার প্রথম দেখলাম। দেখে খুব ভালো লাগলো। মাদকের ভয়াবহতা ও মোবাইল ফোনের কারণে নির্মল বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু, কিশোর ও যুবকরা। শিশু-কিশোরদের নির্মল বিনোদন দিতে আগামীতেও এমন প্রতিযোগিতার আশা করেন তারা।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, হুইল বা বড়শি দিয়ে মাছ ধরা একসময় মানুষের শখ ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের যুব সমাজ এটি জানেই না। আর এমন চিত্র এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। আমাদের যুবক সমাজ এখন মোবাইল ফোনে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, তাদের বড়শি দিয়ে মাছ মারতে ধৈর্য হয় না। আমরা যুবকদের জানাতে চাই, মাছ ধরা একটি বড় বিনোদন।

তিনি আরও বলেন, এ আযোজনের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন আমরা মুক্ত জলাশয়গুলো সংরক্ষণ করতে পারবো, অন্যদিকে দেশি মাছের চাষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আনতে পারবো। একইসঙ্গে যুব সমাজকে সস্পৃক্ত করে উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করছি। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ